যেভাবে কাটবে মুমিনের রমজান

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৬:১৮ পিএম, ২৮ এপ্রিল ২০২০

রহমতের দিনগুলো দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। মুমিনের জন্য পবিত্র এ রমজান মাস বসন্তের মাস। দীর্ঘ ১১ মাস অন্তরে যে মরীচিকার সৃষ্টি হয় তা দূর করতেই রমজানের সিয়াম, তাই একজন মুমিন রহমতের বারিধারায় পবিত্র করে নেয় তার অন্তরাত্মা।

এ মাসে প্রতিটি মুমিনের হৃদয় যেমন লাভ করে আল্লাহ পাকের জান্নাতের প্রশান্তি তেমনি তাদের পুরো পরিবারও হয়ে ওঠে জান্নাতি পরিবার। মহামারি করোনার কারণে মুসলিম উম্মাহ নিজ ঘরেই বিশেষ ইবাদতে সময় অতিবাহিত করছেন। অনেকে নিজেদের ঘরকেই মসজিদ বানিয়ে নিয়েছেন এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করছেন।

আমরা যদি আমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করে জান্নাতের পরিবেশ বানাতে চাই তাহলে পবিত্র এ রমজান থেকে লাভবান হতে হবে। পরিবারের কর্তা বা দায়িত্বশীল হয়ে শুধু নিজে রোজা রাখলেই চলবে না বরং পুরো পরিবারকে সাথে নিয়ে রমজানের রোজা রাখতে হবে।

এই দিনগুলোতে আমরা এমনটি করতে পারি-
পরিবারের সবাই মিলে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে আমাদের শেষ রাতের ইবাদত শুরু করি। তারপর তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে কমপক্ষে ৩০ মিনিট পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করি। তারপর পরিবারের সবাই একত্রে বসে সাহরি খেয়ে নেই। এরপর সবাই মিলে ফজর নামাজ জামাআতের সঙ্গে ঘরেই আদায় করে নেই।

এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও অন্যান্য দোয়া পাঠে নিজেকে মগ্ন রাখতে পারি। কেননা আল্লাহর স্মরণে আত্মা পরিষ্কার হয় আর আল্লাহপাক পরিষ্কার আত্মাকে পছন্দ করেন।

ইফতারের পূর্বেও কিছুক্ষণ দোয়া করতে পারি, ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে ইফতার সামনে নিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ সে দোয়া কবুল করেন এমনটি হাদিস পাঠে জানা যায়। ইফতারের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়ি। তার পর দোয়া পাঠ করে ইফতার শুরু করি।
>> ইফতারের শুরুতে-
- بِسْمِ الله বিসমিল্লাহ বলা। অতপর এ দোয়া পড়া-
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আ’লা রিযক্বিকা আফত্বারতু।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্যে রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি। (আবু দাউদ মুরসাল, মিশকাত)

ইফতার শেষে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাআতের সঙ্গে ঘরেই মাগরিবের নামাজ পড়া। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ঘরেই পরিবারের সবাই একত্রে ইশার ফরজ নামাজ ও তারাবিহ জামাআতের সঙ্গে আদায় করে নিব।

রাতে আগে আগে ঘুমাতে যেতে হবে কারণ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হবে। তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম বিশেষ মাধ্যম।

যিনি পরিবারের প্রধান বা দায়িত্বশীল, তাকে সন্তানদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। পরিবারের সবাই যেন রুটিন অনুযায়ী রমজান মাস অতিবাহিত করে। শুধু নিজে আল্লাহ পাকের আদেশ পালন করলাম আর অন্যরা পালন করলো না তা হতে পারে না। কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন-
‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে বাঁচাও।’ (সুরা তাহরিম: আয়াত ৬)

তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য সে যেন শুধু নিজেই মুত্তাকি না হয় বরং সে নিজে এবং পরিবারের সবাইকে পুণ্যবান-মুত্তাকি করে গড়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করে।

সব ধরনের পাপ কাজ থেকে পরিবারের সদস্যদেরকে রক্ষার জন্য তাদেরকে যেন সঠিকভাবে শিক্ষা দেয়। আমরা যদি সন্তানদেরকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষায় গড়ে তুলতে পারি তাহলে পরিবার, সমাজ, জাতি, দেশ এককথায় সর্বত্রই শান্তি বিরাজ করবে এটা নিশ্চিত।

সন্তানদের যদি আমরা উত্তম শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলি তাহলে এদেশে থাকবে না কোন সন্ত্রাসী, থাকবে না কোন চোর-ডাকাত, হতে পারে না কোন মারা-মারি আর কাটা-কাটি। এক কথায় বলা যায় সব অরাজকতা থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি। আর এ জন্যই ঘরকেই বলা হয়েছে শিক্ষার সূতিকাঘর।

আমরা যদি আমাদের সন্তানদের প্রতি দৃষ্টি না দেই তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে আমরা অবশ্যই এর জন্য জিজ্ঞাসিত হব।

রমজান হচ্ছে প্রশিক্ষণের মাস। এ মাসে সন্তানদের যদি সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া যায় তাহলে সন্তানরা রমজান চলে গেলেও এর ওপর আমল করবে।

আমরা যদি আল্লাহ পাকের আদেশ-নিষেধ পরিপূর্ণভাবে প্রথমে নিজেরা পালন করে জীবন অতিবাহিত করি এবং সন্তানদের সেভাবে গড়ে তুলি তাহলে জান্নাতি ঘরে পরিণত হতে পারে আমাদের ঘর। নিজেদের পরিবারগুলোকে জান্নাতি পরিবারের অন্তর্ভূক্ত করাতে চাইলে পবিত্র রমজান মাসকে কাজে লাগাতে হবে।

তাই আসুন, রমজানের দিনগুলো থেকে পুরো পরিবারসহ লাভবান হবার চেষ্টা করি এবং সকাতর আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি- যথাযথ হক আদায় করে কাটাতে পারি পুরো রমজান। আরও দোয়া করি- তিনি যেন বিশ্বকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করেন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।