আরবি ‘আরবায়িনা’ যেভাবে ‘কোয়ারেন্টাইন’ হলো

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০

প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে ‘কোয়ারেন্টাইন’ শব্দটি ব্যাপক পরিচিত হয়েছে। ‘কোয়ারেন্টাইন’র প্রথম আবিষ্কারক হলেন একজন খ্যাতিমান মুসলিম বিজ্ঞানী। তিনি হলেন আভিসিন্না খ্যাত ইবনে সিনা।

বর্তমান সময়ে বেশি পরিচিতি পাওয়া ‘কোয়ারেন্টাইন’ পদ্ধতির আবিষ্কারক তিনি। তিনিই প্রথম কোয়ারেন্টাইনের ধারণা মানুষের সামনে তুলে ধরেন। তিনি যখন চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেন। সে সময় তিনি এ ধারণাটি এভাবে আবিষ্কার করেন যে-

‘কিছু রোগ নিশ্চিতভাবে মাইক্রোঅর্গানিজম দ্বারাই ছড়ায়। তাই মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ প্রতিহত করতে তিনি ব্যবস্থাপত্রে এ নির্দেশনা লেখেন যে, সংক্রমিত বা সন্দেহযুক্ত ব্যক্তিকে ৪০ দিন ধরে একেবারে আলাদা করে আইসোলেশনে অর্থাৎ নির্জনে রাখতে হবে। এর দ্বারাই সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’

তার এ ধারণাই হলো বর্তমানের ‘কোয়ারেন্টাইন’ চিকিৎসা পদ্ধতি। তিনি তার এ পদ্ধতির নাম রেখেছিলেন ‘আল-আরবায়িনা’ অর্থাৎ ৪০ দিন (নির্জনে থাকা)।

তার প্রবর্তিত এ কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতিটি ভেনিস ও ইতালির বাণিজ্য দলের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছেছিল। ইতালীয় ভাষায় যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘কোয়ারান্টা’। ইংরেজিতে এটি উচ্চারিত হয় ‘কোয়ারেন্টাইন’। ইতালিয়ান ভাষায় কোয়ারান্টা (quaranta) অর্থ হলো ‘চল্লিশ’।

ধীরে ধীরে এ কোয়ারান্টা শব্দটি বিকশিত হতে হতে আজ কোয়ারেন্টাইন নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা প্রবর্তিত এ কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতিই বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রাণঘাতী মহামারি করোনার মোকাবিলায় ব্যবহার করে মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

আভিসিন্না খ্যাত ইবনে সিনাকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনকও বলা হয়। তিনি প্রাক-আধুনিক যুগের প্রভাবশালী দর্শনিক হিসেবেও সফল ছিলেন।

বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে তার রচিত ৪৫০টি গবেষণা গ্রন্থ। এর মধ্যে ২৫০টি গ্রন্থ সচরাচর পাওয়া যায়। এক কথায় তিনি ছিলেন ‘পলিম্যাথ’ বহুবিদ্যার ধারক।

অ্যারিস্টটলিয়ান দর্শনে অনুপ্রাণিত ইবনে ছিলেন পেরিপেটিক দার্শনিক। তার উদ্ভাবিত ৪০টি রোগের চিকিৎসা ও ১৫০টি দর্শন গ্রহণ করা হয়।

মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা আবিষ্কৃত ‘আল-আরবাইনা’ খ্যাত কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতিতে মহামারি করোনা থেকে জীবন রক্ষা করছে লাখো মানুষ। পবিত্র কুরআনে মানুষের জীবন রক্ষা করাকে মানবতা রক্ষার সমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সে হিসেবে বর্তমান সময়ে মানবতার সুরক্ষায় ইবনে সিনা এক অনন্য মর্যাদা ও সম্মানের নাম। তার আবিষ্কৃত পদ্ধতিই চিকিৎসা বিজ্ঞানে করোনা মোকাবিলায় সেরা পদ্ধতি।

উল্লেখ্য, ইবনে সিনা উজবেকিস্তানের আফসোনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে জ্যোর্তিবিজ্ঞানী, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, গবেষক ও দার্শনিক ছিলেন। ইবনে সিনা নামে পরিচিতি পাওয়া এ বিজ্ঞানীকে পাশ্চাত্যে আভিসিন্নাহ নামেই বেশি চেনে। তার পুরো নাম আবু আলি আল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা।

তিনি ৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ২২ আগস্ট উজবেকিস্তানের আফসোন অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। ২২ জুন ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের হামাদানে ইন্তেকাল করেন। ইরানের হামাদানেই তাকে সমাহিত করা হয়।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।