যে আমল মানুষকে সব বিপদ থেকে মুক্তি দেবে

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০

মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে সেরা ও প্রিয় সৃষ্টি। মানুষকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও সুবিধা দিতে কুরআন মাজিদে অনেক উপায় ও উপদেশ দেয়া হয়েছে। যেসব উপায় ও উপদেশ মেনে চললে বান্দার দুনিয়ার জীবনের সব কাজ সহজ হয়ে যায়।

বান্দার সব চাহিদা পূরণে ছোট্ট একটি আমলের কথা কুরআন মাজিদে উল্লখ করা হয়েছে। তাহলো- তাক্বওয়া অবলম্বন করা বা আল্লাহকে ভয় করা। তাক্কওয়াসহ সব কল্যাণ লাভে এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া জরুরি। আর তাহলো-
اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি।

তাক্বওয়া বা আল্লাহর ভয়ই মুমিন মুসলমানের জীবনের মূলভিত্তি। এ তাক্বওয়াই পারে মানুষকে দুনিয়ার সব সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে এবং পরকালের সফলতা দান করতে। কুরআন মাজিদে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি লাভে বান্দাকে তাক্বওয়ার আমলটি যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যেভাবে ভয় করা উচিত। আর তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ কর না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০২)

কুরআন-সুন্নাহর বর্ণনায় মুমিনের ছোট্ট এ আমলের অনেক প্রাপ্তির কথা ওঠে এসেছে। আর তাহলো-

>> সমস্যার সমাধানে তাকওয়া
যে ব্যক্তি আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে আল্লাহ তাকে দুনিয়ার রোগ-শোক,বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তি দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا
‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোনো না কোনো পথ বের করে দেবেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ২)

>> নিশ্চিন্ত রিজিক লাভে তাক্বওয়া
যে ব্যক্তি আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করে আল্লাহ তাকে এমন ব্যবস্থাপনায় রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন, যা বান্দা কল্পনাও করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
‘আর (যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করবে তিনি) তাকে রিজিক দেবেন (এমন উৎস) থেকে যা সে ধারণাও করতে পারে না।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৩)

>> সব কাজ সহজে তাকওয়া
কাজ যত কঠিন হোক না কেন, বিপদ যত কঠিন হোক না কেন, মহামারি যত কঠিন হোক না কেন, আল্লাহকে ভয় করলে আল্লাহ তার কঠিন কাজও সহজ করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন-
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُۥ مِنْ أَمْرِهِۦ يُسْرًا
‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৪)

>> গোনাহ মাফ ও প্রতিফল লাভে তাকওয়া
তাক্বওয়া এমন একটি আমল, যা মুত্তাকি ব্যক্তির গোনাহ মোচন করে দেয় এবং অনেক বড় প্রতিফল দান করেন বলেও ঘোষণা দেয়-
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّـَٔاتِهِۦ وَيُعْظِمْ لَهُۥٓ أَجْرًا
‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেবেন, আর তার প্রতিফলকে বিশাল বিস্তৃত করে দেবেন।’ (সুরা ত্বালাক : আয়াত ৫)

>> সর্বাধিক মর্যাদা লাভ তাকওয়া
আল্লাহ তাআলাকে ভয় করলে আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করবেন। এক্ষেত্রে তিনি নারী-পুরুষ ও বংশমর্যাদা দেখেন না। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দেন-
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقٰىكُمْ
‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে ওই ব্যক্তিই অধিক সম্মানিত মর্যাদাবান, যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’

>> সর্বোত্তম পাথেয় তাক্বওয়া
মানুষের জন্য তাকওয়া অনেক বড় মর্যাদা সম্পন্ন আমল। তাকওয়া শুধু আমলই নয় বরং সর্বোত্তম পাথেয়। যে পাথেয় লাভে বান্দা হবে সফলকাম। আল্লাহ বলেন-
وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوٰى ۚ وَاتَّقُونِ يٰٓأُولِى الْأَلْبٰبِ
‘এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা করবে আর তাক্বওয়াই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে জ্ঞানী সমাজ! আমাকেই ভয় করতে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৭)

>> আল্লাহর সঙ্গী হওয়ার মাধ্যম তাকওয়া
তাক্বওয়া বা আল্লাহকে ভয় করল তিনি মুত্তাকি ব্যক্তির সঙ্গী হবেন বলে কুরআন মাজিদে ঘোষণা দেন-
وَاعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ
‘আর জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাক্বওয়াশীল মানুষের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা বাক্বারাহ : আয়াত ১৯৪)

>> আল্লাহর ভালোবাসা লাভে তাকওয়া
তাক্বওয়াবান ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালোবাসেন বলেও কুরআন মাজিদে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন-
فَإِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাকওয়াশীল ব্যক্তিদের ভালবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৭৬)

উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করলে আল্লাহ বান্দার সমস্যা সমাধান করবেন, কাজ সহজ করে দেবেন, উত্তম রিজিক দান করবেন, গোনাহ ক্ষমা করবেন, প্রতিদান বাড়িয়ে দেবেন, মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন, সর্বোত্তম পাথেয় দান করবেন।

আল্লাহকে ভয় করার ছোট্ট একটি আমলে এতগুলো নেয়ামত দান করবেন তা কি বান্দা কখনো ভেবে দেখেছে?

আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বান্দাকে তাগিদ দেয়ার উদ্দেশ্যে তাক্বওয়া অবলম্বনের কথা ঘোষণা করেন, যাতে বান্দা কোনোভাবে তাক্বওয়ার কথা ভুলে না যায়। সে ঘোষণায় আল্লাহ বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চল, তবে আল্লাহ তোমাদের ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার মানদন্ড (জ্ঞান-বুদ্ধি) দান করবেন। তোমাদের পাপ মিটিয়ে দেবেন। আর তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। কারণ আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২৯)

এ আয়াতে আল্লাহকে ভয় করার বিপরীতে বান্দাকে একটি শ্রেষ্ঠ উপহার (জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক)সহ ক্ষমা ও জীবিকার গ্যারান্টি দিয়েছেন। যা বান্দার জন্য অনেক বড় পাওয়া।

আবার আল্লাহ তাআলা তাকে ভয় করার ব্যাপারে সামথ্যের বিষয়টিও বলে দিয়েছেন। আল্লাহকে ভয় করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়িতে যাওয়ার কথা বলেননি। আল্লাহ বলেন-
فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
‘তোমরা আল্লাহকে যথা সম্ভব ভয় কর।’ (সুরা তাগাবুন : আয়াত ১৬)

মানুষ তার বংশ মর্যাদা দ্বারা সম্মান লাভ করতে পারে না। কেবল তাক্বওয়া দ্বারা ইজ্জত-সম্মান লাভ করতে পারে। উপরোক্ত আয়াতসমূহে তাই প্রমাণিত। সুখ-শান্তিতে ও নিরাপদে জীবন যাপন করার জন্য তাক্বওয়াই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মাধ্যম।

এতো গেল দুনিয়া তাকওয়ায় অবলম্বনের প্রাপ্তির তালিকা আর পরকালের জন্য রয়েছে অসংখ্য নেয়ামত লাভের ঘোষণা। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি তাকওয়া অবলম্বন করার নসিহত পেশ করেছেন। হাদিসে এসেছে-
- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, মানুষের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, মানুষের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহক সবচেয়ে বেশি ভয় করে।’ (বুখারি, মুসলিম)

- বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ কথা বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে যে, ‘যার কর্ম তাকে (মানুষকে) পিছিয়ে দিয়েছে, তার বংশ মর্যাদা তাকে আগে বাড়াতে (মর্যাদা দিতে) পারবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো সৈন্যদলের আমির বা নেতা নির্ধারণ করতেন, তখন তাকে বিশেষভাবে আল্লাহকে ভয় করার তথা তাক্বওয়া অবলম্বন করার জন্য আদেশ করতেন। আর সাধারণ মুসলিম যোদ্ধাদেরকে কল্যাণের উপদেশ দিতেন।’ (মুসলিম)

সুতরাং তাকওয়ার আমল নিজের মধ্যে বাড়াতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াও জরুরি। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো ভাষায় তাকওয়ার আমল করার সাহায্য লাভে বেশি বেশি এ দোয়া পড়ি-
اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’

‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি।

সুতরাং যে ব্যক্তি নিজেকে তাকওয়াবান হিসেবে তৈরি করতে পারবে তার জন্য দুনিয়ায় যেমন থাকবে না কোনো বিপদ-মুসিবত আর পরকালে থাকবে মহান সফলতা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাকওয়াবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার যাবতীয় বিপদ-আপদ ও মুসিবত থেকে হেফাজত করুন। পরকালের সফলতা দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।