মহামারিতে গোনাহ থেকে ক্ষমা লাভের এখনই সময়

মাহমুদ আহমদ
মাহমুদ আহমদ মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০২০

মহামারি করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষায় বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রসহ সব দেশই কমবেশি অনেক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। যার ফলে শহরগুলো জনমানবশূণ্য। সবাই নিজ নিজ ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় সময় অতিবাহিত করছেন। এখন কেবল আল্লাহ তাআলাই বিশ্ববাসীকে ক্ষমা করতে পারেন।

মহামারির এ দিনগুলোতে ঘরে থাকার কারণে সবার হাতে প্রচুর সময়। তাই নিষ্ঠার সাথে দীর্ঘ সময় নিয়ে ইবাদত-বন্দেগী করার সময়ও এখনই।

আমরা যদি আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে সঠিকভাবে এবং উদ্বিগ্নচিত্তে স্মরণ করি তাহলে তিনি হয়তো আমাদের ডাক শুনবেন আর আমাদেরকে মহামারি করোনারসহ সব ধরণের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন।

আসলে যে ব্যক্তি প্রকৃত প্রেরণা নিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করে তিনি তাকে কখনও ব্যর্থ হতে দেন না। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে অহংকার করে, তারা নিশ্চয় লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মোমেন : আয়াত ৬০)

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে তিনি কাউকে খালি হাতে ফেরত দেন না। আল্লাহ তাআলার কাছে চাইলে তিনি যে দান করেন এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ঘোষণা করেন-
- ‘আর যা কিছু তোমরা তার কাছে চেয়েছো তিনি তোমাদের সব দিয়েছেন এবং যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ গণনা করতে চাও তাহলে তোমরা সেগুলোর সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না।’ (সুরা ইব্রাহিম : আয়া ৩৪)

- ‘অথবা কে উদ্বিগ্নচিত্ত ব্যক্তির দোয়া শুনেন যখন সে তার কাছে দোয়া করে এবং তার কষ্ট দুর করে দেন এবং তোমাদের পৃথিবীর উত্তরাধিকারী করে দেন? আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো উপাস্য আছে? তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ কর।’ (সুরা নামল : আয়াত ৬২)

আল্লাহ তাআলা বান্দার আবেদন গ্রহণে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেন। কখন বান্দা তার কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করবে। কখন তার বান্দা তাকে ডাকবে আর তিনি তা গ্রহণ করবেন এবং তার দু:খ কষ্ট দুর করবেন। তিনি সবার খুবই কাছে রয়েছেন। যেভাবে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘আর যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তখন বল, আমি কাছেই আছি। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দেই যখন সে আমার কাছে প্রর্থনা করে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সারা দেয় এবং আমার ওপর ঈমান আনে যাতে তারা সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৬)

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, তিনি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার উত্তর দিয়ে থাকেন। আমারা যদি প্রকৃতভাবে তাকে ডাকি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। তিনিতো সেই প্রভু; যিনি আগে কথা বলতেন, বান্দাকে ডাকতেন। আর এখনও বান্দার সঙ্গে কথা বলেন, প্রশংসার জবাব দেন। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য শুধু গোনাহমুক্ত পবিত্রাত্মার।

বান্দার দোয়ায় অনেক শক্তি নিহিত রয়েছে। দোয়া এমন এক মাধ্যম যা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলে। দোয়া কবুলের জন্য প্রয়োজন বান্দার সাথে আল্লাহর সুসম্পর্ক স্থাপন করা।

আমরা জানি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনের শুরু থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তই ছিল তার দোয়ায় পরিপূর্ণ। আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হলো আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত লাভে বিশ্বনবির অনুকরণীয় আদর্শ এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়া। পবিত্র কুরআনে তার ইবাদত সম্পর্কে উল্লেখ হয়েছে-
‘নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃতু্য সব আল্লাহর জন্য। যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)

আল্লাহ তাআলার দরবারে বান্দার দোয়া মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য প্রথমেই নিজেদের আত্মশুদ্ধি অজর্ন করে পবিত্র হতে হবে। তাওবাহ করে গোনাহ ছেড়ে দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তবে বান্দার দোয়া কবুল হবে।

দোয়া শুধু নিজেদের জন্য নয় বরং বিশ্বমানবতার জন্য দোয়া করতে হবে। এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে যে, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে নিজেদের দ্বারা যেন কারো সামান্যতম ক্ষতি না হয়, সে বিষয়টিও সব সময় মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে ৫টি বিষয় নিজেদের জীবনে মেনে চলতে হবে। তবে পাপমুক্ত জীবন গঠনে সফল হতে পারবো আমরা। আর তাহলো-
>> প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আল্লাহকে ভয় করতে হবে।
>> সর্বাবস্থায় সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে।
>> জীবনের উন্নতি-অবনতিতে সৃষ্টি থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে তথা আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে।
>> আল্লাহর দান কম হোক কিংবা বেশি হোক তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
>> সুখে কিংবা দুঃখে সব সময় আল্লাহর প্রতি ধ্যান রাখতে হবে।

সর্বোপরি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করতে হবে, যেভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেন। তাই জীবনের সব পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সময় এখনই।

তাই আসুন, আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা চাই। হে আল্লাহ! তোমার অপার রহমতে মহামারি করোনা থেকে বিশ্বমানবতাকে রক্ষা করুন। আমাদেরকে ক্ষমা করে তোমার নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে রাখুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।