হে মুমিন, পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের এখনই সময়!

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ২৯ মার্চ ২০২০

মাহমুদ আহমদ : : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

করোনাভাইরাসে প্রতিদিনই মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইতিমধ্যে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে নিরাপত্তা লাভে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে দেশব্যাপী বাস-ট্রেন-বিমানসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।

দেশ ও জাতির কল্যাণে ছুটির এই দিনগুলোতে আমাদের সবার উচিত সরকার গৃহিত নিয়ম-নীতিগুলো যথাযথ মেনে চলা। তবে ছুটির এ দিনগুলো অবহেলায় নষ্ট না করে ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করা যেতে পারে।

ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি সব ধরনের ছোট-বড় পাপ ও অন্যায় কাজ পরিত্যাগ করে চলা প্রত্যেক মানুষের জন্য খুবই জরুরি। নিজেদের পরিবর্তন ও আত্মশুদ্ধির জন্য এ অবসরের দিনগুলো যথেষ্ট সহায়ক।

মানুষ প্রতিনিয়ত নানা পাপ কাজে নিমজ্জিত। ছোট-খাটো পাপ কাজকে মানুষ সাধারণত গুরুত্ব দেয় না। পাপ বা অন্যায় ছোট কিংবা বড় হোক সবই ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা ছোট-বড় সব পাপ বা অন্যায়ই দেখেন। এসব পাপ থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরি। কারণ এ পাপগুলো মানুষের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَا كُنتُمْ تَسْتَتِرُونَ أَنْ يَشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلَا أَبْصَارُكُمْ وَلَا جُلُودُكُمْ وَلَكِن ظَنَنتُمْ أَنَّ اللَّهَ لَا يَعْلَمُ كَثِيراً مِّمَّا تَعْمَلُونَ
‘আর তোমাদের কান, তোমাদের চোখ এবং তোমাদের ত্বক তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে, না ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমরা তাদের কাছে কিছু গোপন করতে না। তবে তোমাদের ধারণা ছিল যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না।’ (সুরা হামিম : আয়াত ২২)

হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘বায়তুল্লাহর কাছে দুজন কুরাইশি এবং একজন সাকাফি অথবা দুজন সাকাফি ও একজন কুরাইশি বসেছিলেন। তাদের পেটের চর্বি ছিল খুব বেশি। কিন্তু অন্তরে বুদ্ধি ছিল খুব কম।

তাদের একজন বলল, তুমি কি মনে কর আমরা যা বলছি আল্লাহ তা শুনছেন?

অপরজন বলল, আমরা জোরে বললে তিনি শুনতে পান আর চুপে চুপে বললে শুনতে পান না। অপরজন বলল, জোরে জোরে বললে যদি (আল্লাহ) শুনতে পান তবে চুপে চুপে বললেও (তিনি) শুনতে পাবেন। তখন আল্লাহ তাআলা (এ আয়াত) অবতীর্ণ করেন-
‘তোমরা দুনিয়ার অপরাধ করার সময় যখন লুকোতে, তখন তোমাদের এ চিন্তা ছিল না যে, তোমাদের চোখ, কান, চামড়া তোমাদেরই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, বরং তোমরা ধারণা করছিলে যে, তোমরা যা জান এর অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না।’ (বুখারি)

সুতরাং যারা পাপ বা অন্যায় করবে তাদের প্রতিটি অঙ্গই বিচারের দিন সংশ্লিষ্ট অপরাধের সাক্ষ্য দেবে। কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের সব কর্মকাণ্ড দেখেন ও জানেন। পরকালের বিচারের দিন পাপী বা অন্যায়কারী তার অপরাধের ছবি দেখবে। তাদের অঙ্গগুলো তাদের অপরাধের সাক্ষী দেবে। এ জন্য কোনো ধরনের প্রশ্ন করারও প্রয়োজন হবে।

ইসলাম মানুষের জীবনকে সুন্দর ও পরিপূর্ণ করতে চায়। ইসলাম মুমিন মুসলমানের জন্য পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। এ পরিপূর্ণ জীবনের জন্য অন্যতম পাথেয় হলো তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। তাকওয়াবিহীন জীবন পরিপূর্ণ নয়।

মানুষ প্রতিনিয়ত পাপ করে যাচ্ছে। অবস্থা এমন যে, মানুষ পাপ করতে করতে পাপ করাকে কোনো খারাপ কাজ বলে মনে করেন না। মানুষের পাপ বা অন্যায় করার ধরন দেখে মনে হয় যেন, এসব খারাপ বা অন্যায় কাজ আল্লাহ তাআলা দেখেন না বা এ সব অন্যায় অপরাধের জন্য আল্লাহ তাদের পাকড়াও করবেন না।

অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুগে সাহাবাদের ছোট ছোট বিষয়ের ব্যাপারে প্রাধান্য দিতে তাগিদ দিয়েছেন। সাহাবায়েকেরামও বিশ্বনবির সব নির্দেশনাগুলো যথাযথ প্রাধান্য দিয়েছেন। বিশ্বনবির নির্দেশনাগুলোকে তাঁরা আল্লাহর সন্তুষ্টির মাপকাঠি হিসেবে দেখেছেন। যেমন-
>> পরিচিত-অপরিচিতকে সালাম দেয়া।
>> প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা।
>> সব মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করা।
>> বিপদে পরস্পরকে সাহায্য করা।
>> হাসিমুখে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়সহ শিষ্টাচারের সব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সম্পাদন করা।
আফসোস! আজ মানুষ শিষ্টাচার, নীতি-নৈতিকতা থেকে অনেক দূরে। একে অপরের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছে। কল্যাণকর কোনো বিষয়ের দিকে ফিরেও তাকায় না। কথার ছলে পরস্পরকে গালি দিচ্ছে। অহরহ মিথ্যা বলছে। বিবেক বিবর্জিতভাবে খাদ্যে ভেজাল দিচ্ছে। অন্যায়ভাবে অন্যের মাল ভোগ দখল করছে। এমনকি কাউকে সামান্য বিষয়ে হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না।

পরিশেষে
হে মুমিন, পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের এখনই সময়! বাস্তবে এমন অনেক বিষয় আছে যাকে বাহ্যত ছোট মনে করা হয় আসলে তা সাধারণ হলেও সাধারণ নয়। ছোট ছোট পাপ থেকেই জন্ম নেয় বড় পাপ। এক সময় ইচ্ছা-অনিচ্ছায় এসব পাপে আমরাও জড়িয়ে পরি। পরবর্তীতে এসব পাপ ও অন্যায় থেকে ফিরে আসার কোনো রাস্তাও থাকে না। তাই কোনো পাপকেই ছোট মনে করা ঠিক নয়।

আবার ছোট ছোট ভাল কাজ অনেক সময় আল্লাহর কাছে খুব বেশি গ্রহণীয় হয়ে যায়। যার ফলে আল্লাহ মানুষকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। ইসলাম ছোট-বড় কোনো খারাপ কাজকে সমর্থন করে না। সব ধরনের পাপই ইসলামের আদর্শ ও তাকওয়ার পরিপন্থী।

সুতরাং মানুষের উচিত এমনভাবে জীবন পরিচালনা করা যাতে তার দ্বারা কোনো ধরনের পাপ কাজ সংঘটিত না হয়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতী করোনার প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত না হয়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ধরণা দেয়া জরুরি। নিজেদের পাপের জন্য বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া জরুরি। সব খারাপ কাজ পরিহার করে ভালো ভালো কাজের দিকে মনোযোগ দেয়া জরুরি।
বিশেষ করে সরকারি ছুটির এ দিনগুলোতে নিজেদের চরিত্র সংশোধন করতে এবং আত্মশুদ্ধি অর্জনে কুরআন-সুন্নাহর দিক নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চরিত্র সংশোধন করে আত্মশুদ্ধি অর্জনের তাওফিক দান করুন। হে আল্লাহ! মানুষের সব পাপ ক্ষমা করুন। সব অন্যায় থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।