করোনা আতঙ্ক : যেসব ইসলামি নিয়ম মেনে চলছে বিশ্ব

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২০

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী মহামারি এক ভাইরাসের নাম করোনা। এ ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানা পদ্ধতিতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে চলেছে। দেশে দেশে চলছে ভিন্ন ভিন্ন আয়োজন।

আবার অনেক দেশ তাদের দেশের বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, নিষিদ্ধ আইনকে বাতিল করে তা বাস্তবায়নে নিয়েছে যথযথ পদক্ষেপ। আর তাতে ফুটে ওঠেছে ইসলামের সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব। করোনায় গৃহীত ইসলামি নিয়ম ও আয়োজনগুলো হলো-

>> তুরস্কে দোয়ার আয়োজন
করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি লাভে ইউরোপের দেশ তুরস্ক তাদের মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করেছে। সোমবার ইশার আজানের পরে দেশটির প্রাচীন শহর ইস্তাম্বুলের বড় বড় মসজিদগুলোতে এই দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

দেশটির জামে আল ফাতিহ, জামে সুলতান আইয়ুব, জামে মাজিদিয়াহ ও চামেলিজী মসজিদ উল্লেখযোগ্য। তুরস্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৮৭২ এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ জনে।

>> একযোগে আজান 
ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দীর্ঘ ৮০০ বছর দেশটিতে আজান নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ দেশটির প্রশাসন মুসলিম কমিউনিটিকে দেশটির বাসা-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় উচ্চ স্বরে আজানের অনুমতি দেয় ফলে গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেশব্যাপী উচ্চ আওয়াজে আজান দেয় মুসলিম কমিউনিটি।

>> একযোগে তাকবির ধ্বনি
প্রাণঘাতি মহামারির আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায় মহান রবের প্রতি আত্মসমর্পন করতে দেশব্যাপী একযোগে তাকবির দিয়েছে। এতে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব প্রকাশ করেছে তারা। আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত ছিল দেশটির।

দেশের প্রতিটি শহর রাতে আলোয় যেমন আলোকিত ছিল তেমনি আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে মুখরিত ছিল প্রতিটি শহর।

>> বিরামহীন কুরআন তেলাওয়াত
প্রাণঘাতী মরণব্যাধি করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে শীর্ষ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশ রাশিয়ায় বিরতিহীনভাবে কুরআন তেলাওয়াতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে চলছে কুরআন তেলাওয়াত কার্যক্রম।

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর প্রধান মসজিদ ‘আল-জামে গ্র্যান্ড মসজিদ’। করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে আত্মরক্ষায় রাশিয়ার মুফতিদের সংগঠন মুফতিন কাউন্সিল অবিরাম কুরআন তেলাওয়াতের এ আয়োজন করেছে।

কাউন্সিলের পক্ষ থেকে রাশিয়ার মুসলমানদের আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ রাবি আইনুদ্দিন জারিদাতুল উম্মাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যেন ব্যাপক বিস্তৃতি না ঘটে এজন্য আমরা বিরতিহীন কুরআন তেলাওয়াতের আয়োজন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে আরজ, তিনি যেন কুরআন তেলাওয়াতের ওসিলায় বিশ্বব্যাপী চলমান প্রাণঘাতী মহামারি করোনা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেন। কুরআন তেলাওয়াতের বিশেষ এ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এ মহামারি থেকে হেফাজত করবেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

>> ফ্রান্সে মুখোশ পরিধান বাধ্যতামূলক 
ইউরোপের প্রথম দেশ ফ্রান্স। ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে সেখানে আইন করে হিজাব, ওড়না বা মুখোশ পরে চলাফেরা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যদি কেউ এ আইন অমান্য করে তবে তাকে গুণতে হতো ১৫০ ইউরো জরিমানা।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ফ্রান্স তাদের এ আইন বাতিল করে উল্টো কেউ যদি মুখোশছাড়া বাইরে বের হয় তাকে ১৫০ ইউরো জরিমানার নতুন আইন জারি করা হয়। যার ফলে ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘প্যারিস ফ্যাশন সপ্তাহ’ চলাকালীন সময়েও মডেলরা মুখোশ পরেই ফ্যাশণ শো-তে অংশগ্রহণ করতে হয়।

>> ভারতে সর্বাধিক হাদিসের অনুসরণ!
এখানেই শেষ নয়, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ভারত তাদের বেশিরভাগ প্রদেশকে আইন করে লকডাউন করে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২১ দিন লকডাউন থাকবে এ প্রদেশগুলোর প্রায় ৮০টি শহর। লকডাউন প্রক্রিয়াটি সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের সুস্পষ্ট অনুসরণ। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ঘোষণা করেন-

‘তোমরা যখন কোনো এলাকায় মহামারী প্লেগের বিস্তারের কথা শুনো, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোনো এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়েও যেও না।’ (বুখারি)

>> হাদিসের অনুসরণেই চীনে করোনা মুক্তি 
চীনের উহান শহরে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হয়। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্ব। অথচ করোনাভাইরাসের আপডেট হচ্ছে, বিশ্বের ১৯৪টি দেশ ও অঞ্চলের ৪ লাখ ২৫ হাজার ৩২৩ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে চায়নাতে রয়েছে ৮১ হাজার ২১৮ জন। আর তারা করোনা প্রতিরোধে নিয়েছে যথাযথ ব্যবস্থা।

তাদের প্রধান ব্যবস্থা ছিল- করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অঞ্চলকে লকডাউন করে দেয়া। সে অঞ্চলের কোনো লোককে যেমন বাইরে যেতে দেয়নি। তেমনি বাইরের কোনো লোককেও তারা করোনা আক্রান্ত অঞ্চলে যেতে দেয়নি। আর এটিই ছিল মহামারি আক্রান্ত অঞ্চলের জন্য বিশ্বনবির নির্দেশনা। যার যথাযথ বাস্তবায়নে চীন সবচেয়ে বেশি উপকারিতা লাভ করেছে।

কেননা চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ২১৮ জন। আর তাদের এ সংখ্যা থেকে করোনামুক্ত হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৫০ জন। মারা গেছে ৩ হাজার ২৮১ জন। এ পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে, হাদিসের নির্দেশনার সঙ্গে তাদের ব্যবস্থাপনা ও কার্যকরী পদক্ষেপই তাদের উন্নতির জন্য সহায়ক ছিল।

সুতরাং বিশ্বব্যাপী দলমত, জাতিবর্ণ নির্বিশেষে সবাই ধর্মের দিকে ফিরে যাচ্ছে। ধর্মীয় বিধি-নিষেধগুলোর দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ। কারণ সেখানেই রয়েছে করোনার মূল চিকিৎসা ও মুক্তি। মানবজাতির জন্য ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ও যথাযথ বাস্তবায়নই করোনা থেকে মুক্তির পরিপূর্ণ সমাধান।

>> বিশেষ করে
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর যে গুরুত্বারোপ করছে। তা সরাসরি হাদিসের নির্দেশনা। ইসলাম এ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। ইসলামের প্রতিটি ফরজ ইবাদতের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনে ওজু করা আবশ্যক।

করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবের সময় বিশ্বব্যাপী একটি আওয়াজ ওঠেছে যে, সব কাজের ক্ষেত্রে হাতকে জীবানুমুক্ত করতে বেশি বেশি সাবান-পানি কিংবা হ্যান্ড সানিটাইজার ব্যবহার করা। আর তাতে ব্যাপকহারে মহামারি করোনা প্রতিরোধ সম্ভব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর বিধিনিষেধগুলো মেনে চলে করোনাসহ যাবতীয় মহামারি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের নির্দেশনা মেনে লকডাউন পদ্ধতির যথাযথ অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।