করোনাসহ সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১১ পিএম, ১১ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এ মুহূর্তে করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বনের মাধ্যমে জীবানুমুক্ত থাকা। কেননা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সতর্কতাই সংক্রামক ব্যাধি করোনাসহ সব ধরনের জীবানুবাহী রোগ-ব্যাধি থেকে মানুষকে সুরক্ষা দিতে পারে।

করোনা প্রতিরোধে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা যেমন জরুরি তেমনি এটি ইসলামের অন্যতম একটি ইবাদতও বটে। সংক্রামক রোগ-ব্যাধি ও জীবানু থেকে মুক্ত থাকতে সুস্থ-সুন্দর এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপনের ইসলামি দিকগুলো তুলে ধরা হলো-

ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বুঝাতে ‘পবিত্রতা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আর এটি মুমিন মুসলমানের ঈমানের অঙ্গ। ইসলাম বরাবরই সবসময় পবিত্রতার সঙ্গে থাকার দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছে। সব সময় পবিত্রতার সঙ্গে থাকার অর্থই হলো প্রথমে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্র থাকতে হলে প্রথমেই নিজের হাত-মুখ-মাথা এবং পা ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ইসলাম এটিকে ওজু হিসেবে আখ্যায়িত করে। ওজুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের প্রতিটি ধারাবাহিক কাজের আলাদা আলাদা ফজিলতও ঘোষণা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একাধিক হাদিস রয়েছে।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম কিংবা মুমিন বান্দা ওজুর সময় যখন মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলে তখন তার চোখ দিয়ে অর্জিত গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় এবং যখন সে দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাতের স্পর্শের মাধ্যমে করা সব গোনাহ পানির অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝড়ে যায়। অতপর যখন সে উভয় পা ধোয়, তখন তার দুই পা দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে অর্জিত সব গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে ঝড়ে যায়, এমনকি সে যাবতীয় গোনাহ থেকেও মুক্ত ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।’ (মুসলিম)

সুতরাং করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে ওজুর মাধ্যমে সব সময় পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। তাতে এক দিকে যেমন রয়েছে অনেক সাওয়াব ও মর্যাদা অন্য দিকে সংক্রামক জীবানুবাহী রোগ-ব্যাধি থেকেও পাওয়া যাবে মুক্তি।

সংক্রামক ব্যাধিমুক্ত থাকতে পরিচ্ছন্নতা
মানুষের উচিত নিজেকে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা। করোনাসহ সংক্রামক ব্যাধিমুক্ত সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে ইসলামের আলোকে নিজেকে যেভাবে পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, তার কিছু দিক তুলে ধরা হলো-

>> পবিত্রতা অর্জনকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন
যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, পবিত্র জীবন যাপন করে, আল্লাহ তাআলা তাদের ভালোবাসেন বলেন কুরআনে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং কেউ যদি পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন থাকে, সে সংক্রামক যাবতীয় ব্যাধিকে থেকে মুক্ত থাকবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২২২)

মদিনার পাশ্ববর্তী কুবা অঞ্চলের লোকেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন করতো। তাদের প্রশংসায় আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন-
‘সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১০৮)
উল্লেখিত আয়াত দুইটি থেকে বুঝা যায়, পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম কতটা মর্যাদা দিয়েছে। যার মাধ্যমে বান্দা গোনাহ ও জীবানুমুক্ত জীবন যাপন করতে পারে। মুক্ত থাকতে পারে করোনাসহ যাবতীয় সংক্রামক ব্যাধি থেকে।

>> পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ‘ওজু’-
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সব সময় ওজু অবস্থায় থাকা জরুরি। হাদিসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, পবিত্রতার সঙ্গে ঈমান ও পাপমুক্ত জীবনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। পাপমুক্ত থাকাও করোনা প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। ইসলামিক স্কলাররা এ পবিত্রতা অর্জনের চারটি স্তর ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। আর তাহলো-
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা : ওজুর মাধ্যমে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে অপবিত্র, নোংরা ও অরুচিকর বিষয় থেকে পবিত্র থাকা যায়।
- অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পাপমুক্ত করা : ওজুর মাধ্যমে শরীরের অঙ্গগুলোর মাধ্যমে যেসব পাপ ও অন্যায় হয় তা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
- অন্তর পবিত্র করা : ওজুর মাধ্যমেই কুপ্রবৃত্তি ও মন্দ স্বভাব থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা যায়।
- নিজেকে গাইরুল্লাহ মুক্ত করা : ওজুর মাধ্যমেই মানুষ আল্লাহ ছাড়া যা কিছু আছে সব কিছু থেকে নিজেকে মুক্ত করে মহান আল্লাহর দরবারে নিজেকে সমর্পণ করার মাধ্যমেই চূড়ান্ত পবিত্রতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এই স্তরের পবিত্রতা শুধুমাত্র নবি-রাসুল ও সিদ্দিকিনরাই লাভ করতে পারেন।

>> পরিচ্ছন্নতায় গোসল
ইসলাম ব্যক্তিকে শুধু ওজুর মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতার কথাই বলেনি বরং গোসলেরও তাগিদ দিয়েছেন। যাতে ব্যক্তি পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্নতা লাভ করতে পারে। প্রত্যেক জুমআর দিন গোসলকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আব্যশক করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জুমআর দিন (শুক্রবার) গোসল করা প্রতিটি সাবালক ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব।’ (বুখারি)।
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘আল্লাহর জন্য প্রতিটি মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হলো (অন্তত) প্রতি সাত দিনের মাথায় তার মাথা ও শরীর ধুয়ে নেয়া।’ (বুখারি, মুসলিম)

কোনো ব্যক্তির ওপর যদি গোসল ফরজ না-ও হয়, তারপরও শরীরে ঘাম-ধূলাবালি ইত্যাদির কারণে দুর্ঘণ্ধ ও সংক্রামক জীবানু সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণেই অন্ততঃ প্রতি ৭ দিনে গোসলের প্রতি বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে।

>> পরিচ্ছন্নতায় মেসওয়াক
মেসওয়াক করার ফলে মানুষের পাকস্থলী শক্তিশালী হয়। মুখ ও দাঁত পরিষ্কার থাকলে হাঁচি-কাশিতে রোগ জীবানু কম ছড়ায়। দারিদ্র্যতা দূর হয়ে সচ্ছলতা আসে এবং উপার্জন বাড়ে। জ্ঞান ও স্মরণ শক্তি বাড়ে, কুলুষমুক্ত অন্তর তৈরি হয়, ফেরেশতারা মেসওয়াককারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে।

সর্বোপরি মেসওয়াকের ফলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। সে কারণে দাঁত ও মুখের যত্নে মিসওয়াককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যাতে রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের অনেক উপকারিতা ও ফজিলত। হাদিসে এসেছে-
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এমনটি কখনো হয়নি যে, জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসেছেন আর আমাকে মিসওয়াকের আদেশ দেননি। এতে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, মিসওয়াকের কারণে আমার মুখের অগ্রভাগ ছিঁড়ে না ফেলি। (মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যদি না আমার উম্মত অথবা মানুষের জন্য কঠিন না হতো তবে আমি তাদের প্রত্যেক নামাজের সঙ্গে মিসওয়াকের নির্দেশ (ওয়াজিব ঘোষণা) দিতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৮৭; মুসলিম, হাদিস : ২৫২)

- মাথা ও চুলের পরিচ্ছন্নতা
মাথার চুল এবং মুখের দাঁড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। এ কারণেই ওজুর সময় মাথা মাসেহ এবং দাঁড়ি আঙুল দিয়ে খেলাল করার কথা বলা হয়েছে। যাতে ধূলা-বালি এবং সংক্রামক জীবানু না ছড়াতে পারে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় নিজের দাঁড়ি এবং চুলে সিথি কেটে পরিপাটি করে রাখতেন বলেও হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। চুলের যত্নেও বিশ্বনবি তাঁর উম্মতকে নসিহত পেশ করেছেন-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের ঘরে বেড়াতে আসেন। আসার পর তিনি এলোমেলো চুলওয়ালা এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। তার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছু জোটাতে পারেনি? যা দিয়ে সে তার মাথার চুল বিন্যস্ত করবে?’

আবার ময়লা কাপড় পরিহিত অন্য ব্যক্তিকে দেখে বললেন- ‘এ ব্যক্তি কি এমন কিছুর ব্যবস্থা করতে পারেনি? যা দিয়ে সে তার কাপড় পরিষ্কার করবে?’ (মুসনাদ আহমাদ, বায়হাকি)

>> সার্বিক পরিচ্ছন্নতার অপরিহার্যতা
ইসলাম শুধু ব্যক্তিকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্নতার নসিহত পেশ করেনি। সুস্থ ও সুন্দর জীবন-যাপনে ব্যক্তি, পরিবারি এবং সমাজের সার্বিক পরিচ্ছন্নতার তাগিদ দিয়েছে। কেননা মানুষের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সৌন্দর্য, সুস্থতা সবকিছুই জরুরি।
সে কারণে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই তার শরীরের অন্যান্য অঙ্গ তথা- হাত ও পায়ের নখ, গোঁফ, বাহুর নিচ ও গোপনাঙ্গের লোম পরিচ্ছন্ন রাখতে বলেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দশটি বিষয় ‘ফিতরাত’-এর অন্তর্ভুক্ত। আর তাহলো-
- গোঁফ ছেটে ছোট করে রাখা।
- দাড়ি লম্বা রাখা।
- মিসওয়াক করা,
- নাকে পানি দেয়া,
- (হাত ও পায়ের) নখ কাটা।
- চামড়ার ভাঁজের জায়গাগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে ধোয়া।
- বগলের নিচের চুল তুলে ফেলা।
- নাভির নিচের লোম পরিষ্কার করা।
- (মলমূত্র ত্যাগের পর) পানি দ্বারা পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বর্ণনাকারী বলেন, দশম বিষয়টি আমি ভুলে গেছি।
- সম্ভবত (সেটি) কুলি করা।’ (মুসলিম)

>> পোশাকের পরিচ্ছন্নতা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সাজ-সজ্জার রুচি সমৃদ্ধ পোশাকের ওপর নজিরবিহীন গুরুত্ব দিয়েছেন বিশ্বনবি। অবশ্য তিনি এক্ষেত্রে বৈধপন্থা অবলম্বন করতে বলেছেন। তিনি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি থাকতেন। তিনি নিজের মাথার চুল চিরুনি দিয়ে পরিপাটি করে রাখতেন।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতেন। তিনি দামী জামাকাপড় পরতেন না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য অবশ্য সাধারণ পোশাকেও বিশ্বনবিকে বিশেষ অভিজাত মনে হতো।

ব্রিটিশ দার্শনিক ডেভেনপোর্ট বিশ্বনবির পরিষ্কার, পরিপাটি ও আত্মমর্যাদাবোধ তুলে ধরতে গিয়ে বলেন-
‘হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি অবস্থায় থাকতেন। তার সহজ-সরল অথচ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন চাল-চলন সবাইকে আকৃষ্ট করতো। তার পবিত্র মুখে সব সময় আনন্দদায়ক ও চিত্তাকর্ষক মুচকি হাসি লেগে থাকতো। এ হাসি ছিল তার নূরানি মুখের শোভা। আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল শিরভাগ সময় সাদা পোশাক পরতেন এবং অন্যদেরও সাদা পোশাক পরতে বলতেন। এর কারণ, সাদা পোশাক পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকে এবং বিন্দুমাত্র ময়লা দাগ পড়লেও তা বোঝা যায়। তবে তিনি সবুজ রংয়ের পোশাকও পছন্দ করতেন।’

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। কুরআনে এসেছে-
‘হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পার।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২৬)

>> বাসা-বাড়ির পরিচ্ছন্নতা
সংক্রামক রোগ-ব্যাধিসহ যে কোনো জীবানু থেকে সুস্থতার জন্য বাসা-বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার বিকল্প নেই। হাদিসেও বাসা-বাড়িকে নোংরা, আবর্জনামুক্ত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
‘অবশ্যই আল্লাহ তাআলা পবিত্র এবং পবিত্রতা ভালোবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন এবং পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। তিনি মহান ও দয়ালু, মহত্ব ও দয়া ভালোবাসেন। তিনি দানশীল, দানশীলতাকে ভালোবাসেন। সুতরাং তোমরাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেক।’ (তিরমিজি)

>> পরিবেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবেশের বিপর্যয় সৃষ্টিকারীর প্রতি অভিশাপের কথা বলেছেন। পরিবেশ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে বিশেষ গুরুত্বারো করেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘তোমরা লানতকারী (অভিশাপের শিকার হতে হয় এমন) দুইটি কাজ থেকে দূরে থাকো। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! লানতকারী কাজ দুইটি কী? তিনি বলেন-
>> যে মানুষের চলাচলের রাস্তায় কিংবা গাছের ছায়ায় মলমূত্র ত্যাগ করে।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
উল্লেখিত কাজ দুটি নিঃসন্দেহে পরিবেশ দুষণসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মারাত্মক খেলাফ। অন্য হাদিসে বিশ্বনবি বলেন-
‘তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে, অতঃপর তা দিয়ে গোসল না করে।’ (বুখারি, মুসলিম)

>> খাবার ও পানি পরিচ্ছন্নতা
খাবার জিনিস ও পানিকে দুষণমুক্ত রাখতে তা ঢেকে রাখতে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘তোমরা বাসন (খাবার পাত্র) ঢেকে রাখো। পানপাত্রের (পানির পাত্রের) মুখ বন্ধ রাখো। দরজার কপাটবদ্ধ করো এবং এশার সময় তোমাদের শিশুদের ঘরের ভেতরে রাখো। কেননা, এ সময় জিনরা ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রভাব বিস্তার করে। আর তোমরা ঘুমের সময় বাতিগুলো (প্রদীপ) নিভিয়ে দিও। কেননা ইঁদুর কখনো প্রদীপের সলতে টেনে নিয়ে যায়। অতঃপর তা গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে দেয়।’ (বুখারি)

>> হাত ধোয়া পরিচ্ছন্নতা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া খাবার গ্রহণের অনেক আদব শিক্ষা দিয়েছেন। খাবার খাওয়ার আগে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধোয়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। যাতে হাতে কোনো জীবানু না থাকে।

সর্বোপরি মানুষের সুস্থতা ও প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজ-সজ্জা ও পরিপাটি হয়ে থাকার বিশেষ দিক-নির্দেশনা ও গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। শুধু তাই নয়, একজন মুমিন যেন অন্য মুমিনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতেও পরিপাটি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকেন সে ব্যাপারেও সরাসরি দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি।

মনে রাখতে হবে
করোনাসহ সংক্রামক যে কোনো রোগ-ব্যাধি অপরিচ্ছন্নতার কারণেই বেশি ছড়ায়। তাই করোনসহ সংক্রমক জীবনুমুক্ত থাকতে আল্লাহর নির্দেশ এবং বিশ্বনবির পবিত্র নসিহতগুলো মেনে চলা জরুরি। হাদিসের এসব নির্দেশনা মেনে চললে করোনাসহ কোনো ভাইরাসেই আক্রান্ত হবে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র জীবন যাপন করার মাধ্যমে করোনাসহ যাবতীয় সংক্রামক রোগ-ব্যাধিমুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর আমলগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।