কুরআনের বর্ণনায় যা অস্বীকার করা কবিরা গোনাহ
মানুষের দ্বারা যে গোনাহ সংঘটিত হয় তা দুইভাগে বিভক্ত। যার কিছু কবিরা গোনাহ বা বড় গোনাহ। আর কিছু সগিরা গোনাহ বা ছোট গোনাহ। এ সব গোনাহ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। না জানার কারণে অনেকেই বড় বড় গোনাহ করে বসে।
মানুষের অন্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক বড় গোনাহের কথা আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন। আর তাহলো-
- কুফর : আল্লাহকে অস্বীকার করা;
- শিরক : আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার স্থাপন করা;
- অংহকার করা;
- মুনাফেকি করা;
- রিয়া : লোক দেখানো কাজ করা;
- জাদু করা;
- অশুভ লক্ষণে বিশ্বাসকরা।
উল্লেখিত কাজগুলো মানুষের জন্য অনেক বড় গোনাহ। এ গোনহগুলো অন্তরের বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। যা থেকে বিরত থাকা জরুরি। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে কুরআনের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কুফর করা।
শুধু আল্লাহকে অবিশ্বাসই কুফর নয়, বরং কুরআনুল কারিমে উঠে এসেছে অনেকগুলো বিষয়। যেগুলোকে অস্বীকার করার মাধ্যমেই কুফর সংঘটিত হয়। আর তাতে মানুষ যেমন ঈমানহারা হয় তেমনি এটা গোনাহের তালিকায় কবিরাহ বা বড় গোনাহ।
>> কুফর : আল্লাহকে অস্বীকার করা
যারা কুফর বা আল্লাহকে অস্বীকার করে, কুরআনুল কারিমের তাদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আর কুরআনে যে কাজে শাস্তির ঘোষণা এসেছে, সে কাজগুলোই কবিরা গোনাহ। তার মধ্যে কুফর বা আল্লাহকে অস্বীকারও একটি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-
>> নিশ্চয় যারা কুফরি করে এবং কাফের অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে, সে সব লোকের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, ফেরেশতাদের অভিশাপ এবং সব মানুষের অভিশাপ। এরা চিরকাল এ অভিশাপের মাঝেই থাকবে। তাদের উপর থেকে আজাব কখনও হালকা করা হবে না বরং এরা বিরামও পাবে না। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬১-১৬২)
>> যার উপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে সে ব্যতিত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হয় এবং কুফরীর জন্য মন উম্মুক্ত করে দেয় তাদের উপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তাদের জন্যে রয়েছে শাস্তি।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১০৬)
>> হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রাসুল ও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাজিল করেছেন স্বীয় রাসুলের উপর এবং সেসমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাজিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৩৬)
>> যারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কিছু বিষয় বিশ্বাস করি এবং কিছু বিষয় অস্বীকার করি আর এরই মধ্যবর্তী কোনো পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যাকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী (আল্লাহ বলেন) তাদের জন্য তৈরি করে রেখেছি অপমানজনক আজাব।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৫০-১৫১)
উল্লেখিত কুরআনের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহকে অবিশ্বাস করাই কুফর। এটি কবিরা গোনাহ। এ গোনাহকারীদের জন্য রয়েছে সবচেয়ে বড় যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। এমনকি যারা কুফর করে তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতিও আল্লাহর সামনে তাদের কোনো কাজে আসবে না। তারা হবে জাহান্নামি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
>> ‘যারা কুফরি করে, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি আল্লাহর সামনে কখনও কোনো কাজে আসবে না। আর তারাই হচ্ছে দোযখের ইন্ধন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১০)
>> যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে এবং অন্যায়ভাবে পয়গম্বরগণকে হত্যা করে আর সেসব লোককে হত্যা করে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন। এরাই হলো সেসব লোক যাদের সব আমল দুনিয়া ও আখেরাত দুটিই বিনষ্ট হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে তাদের কোনো সাহায্যকারীও নেই।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২১-২২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ বনি আদমকে পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসেবে কবুল করুন। ঈমানের নেয়ামত লাভ করার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় কুফর থেকে রক্ষা করুন। কুরআনে বর্ণিত সব ভয়াবহতা ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
তাই মুমিন মুসলমানের উচিত ঈমান বৃদ্ধির জন্য দোয়া করা। যেভাবে দোয়া করেছেন সাহাবায়ে কেরাম। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এভাবে ঈমান বৃদ্ধির দোয়া করতেন। যা আমাদেরও করা জরুরি। আর তাহলো-
اَللّهُمَّ زِدْنَا اِيْمَانًا وَ يَقِيْنًا وَ فِقْهًا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা যিদনা ইমানান ওয়া ইয়াক্বিনান ওয়া ফিক্বহান।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার বিশ্বাস, সুনিশ্চয়তা ও নৈতিকতাকে বাড়িয়ে দিন।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ বনি আদমকে পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসেবে কবুল করুন। ঈমানের নেয়ামত লাভ করার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় কুফর থেকে রক্ষা করুন। কুরআনে বর্ণিত সব ভয়াবহতা ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর