সূর্যগ্রহণের সময় বিশ্বনবি যেভাবে নামাজ পড়তেন

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

সূর্যগ্রহণের সময় আনন্দ উদযাপন বা প্রবল আগ্রহ নিয়ে তা অবলোকন করার বিষয়ও নয় বরং সূর্যগ্রহণের সুন্নাতি আমল হচ্ছে ক্ষমা-প্রার্থনা করা, দোয়া করা, নামাজ পড়া এবং সাদকা করা। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আমলেই সূর্যগ্রহণের সময়গুলো অতিবাহিত করেছেন।

এ সময় অনর্থক গল্প-গুজব, হাসি-তামাশা ছেড়ে অন্তরে ভয় জাগ্রত রাখা কর্তব্য। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে সতর্ক করেছেন। ভয় প্রদর্শন করেছেন। হাদিসেও তা প্রমাণিত। সে কারণেই আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা সূর্যগ্রহণের সময় তার ভয়ে ভীত থাকেন।

সূর্যগ্রহণের সময়ের নামাজ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ পড়তেন। এ নামাজকে সালাতুল কুসুফ বলা হয়। এ নামাজ পড়া সুন্নাত। তা জামাআতের সঙ্গে আদায় করাও সুন্নাত। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে থাকাকালে সূর্য গ্রহণ শুরু হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঠে দাঁড়ালেন এবং পরিহিত চাদর টানতে টানতে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তাঁর সঙ্গে আমরাও প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের নিয়ে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করলেন এবং সূর্য গ্রহণ ছেড়ে গেলো। তিনি বললেন এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, কারো মৃত্যুর কারণে কখনও সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন গ্রহণ দেখবে তখন অবস্থাটি থাকা পর্যন্ত সালাত আদায় করবে এবং দোয়ায় মগ্ন থাকবে।’ (বুখারি)

এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সালাতুল কুসুফ দুই রাকাআত। আর তা সূর্যগ্রহণ শুরু থেকে নিয়ে শেষ সময়ে পড়তে হয়। দীর্ঘ তেলাওয়াত, রুকু ও সেজদার মাধ্যমে সালাতুল কুসুফ পড়তে হয়। কেননা বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কুসুফের নামাজ ছিল দীর্ঘ।

সূর্যগ্রহণের নামাজ পড়ার নিয়ম
সূর্যগ্রহণের নামাজ ২ রাকাআত। অন্য সাধারণ নামাজের মতই এই নামাজ আদায় করতে হয়। যদিও প্রতি রাকাআত অনেক দীর্ঘ করে পড়তে হয়। তবে প্রত্যেক রাকাআতে ২ রুকু, ৩ রুকু বা ৪ রুকু আদায়ের এক ব্যতিক্রমী নিয়মে নামাজ পাড়ার বিবরণও বর্ণিত হয়েছে।

সূর্যগ্রহণের নামাজে আজান ও ইকামত নেই। মাকরূহ ওয়াক্ত ব্যতিত মসজিদে এই নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নাত। দিনের বেলায় সূর্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আর দিনের নামাজ হওয়ার কারণে কেরাত আস্তে পড়াই নিয়ম। হাদিসে এসেছে-
হজরত জাবির ইবনে সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিয়ে ২ রাকাআত সূর্যগ্রহণের নামাজ পড়লেন কিন্তু উভয় রাকাআতে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে (কেরাতের) কোনো আওয়াজ শুনিনি।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

সূর্য গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত এ নামাজ পড়া সুন্নাত। তবে সূর্যগ্রহণ শেষ হওয়ার আগে নামাজ শেষ করলেও কোনো সমস্যা নেই। তবে সূর্যগ্রহণ চলাকালীন বাকি সময়টুকতে জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফা, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।

সূর্যগ্রহণের সময় নারীদের করণীয়
নারীরাও সূর্যগ্রহণের সময় ঘরে একাকি নামাজ আদায় করবেন। নামাজ শেষে জিকির, দোয়া, তাওবা-ইসতেগফা, দান-সাদকার মাধ্যমে কাটানো উত্তম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সূর্যগ্রহণের সময় হাদিসের আলোকে সালাতুল কুসুফ তথা সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সব ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।