কন্যা সন্তান মা-বাবার জন্য যে সুসংবাদ নিয়ে আসে
সন্তান আল্লাহ তাআলা দান। বাবা মা তথা সবার জন্য সন্তান দুনিয়ার সেরাদান। দুনিয়াতে সন্তান লাভ আল্লাহ তাআলার এক মহা অনুগ্রহ। দুনিয়াতে চাইলে অনেক কিছু পাওয়া যায় কিন্তু চাইলে সন্তান পাওয়া সম্ভব নয়।
আর সন্তানদের মধ্যে মা-বাবার জন্য কন্যা সন্তান আল্লাহ তাআলার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। কন্যা সন্তান হলেই অনেক বাবা-মা মন খরাপ করে। অথচ কন্যাসন্তান তারা মা-বাবার জন্য জান্নাতের সুসংবাদ তথা দাওয়াতনামা নিয়ে দুনিয়ায় আগমন করে।
আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে কন্যা সন্তানের আগমনকে সুসংবাদ বলে উল্লেখ করেছেন। এ সুসংবাদ হলো জান্নাতের দাওয়াতনামার সুসংবাদ। জাহেলি যুগের বর্বর চিন্তা-ভাবনার মূলে কুঠারাঘাত করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তারা মুখ কালো করে এবং মনে অসহ্য কষ্ট ভোগ করতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে মানুষের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে (কন্যা সন্তানকে) থাকতে (বাঁচতে) দেবে, নাকি তাকে মাটির নিচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখ, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৫৮-৫৯)
অথচ হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানের পালনকারীর জন্য তিনটি পুরস্কার ঘোষণা করেছেন-
>> জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
>> জান্নাতে প্রবেশের নিশ্চয়তা।
>> জান্নাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন।
সুরা নাহলের ৫৮ নং আয়াতে কন্যা সন্তানকে সুসংবাদ বলে যে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। তারই উপহার প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ঘোষণা।
সুতরাং কন্যা সন্তানের প্রতি অবহেলা করলে পরিণতি কী হতে পারে কুরআনে এ আয়াত হাদিস থেকেই অনুমেয়।
বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী হোক দুনিয়াতে এমন কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে ব্যক্তি জাহান্নাম বা নরকে যেতে চায়। আবার জান্নাত বা স্বর্গে যেতে চায় না এমন লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। সর্বোপরি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী এমন কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যে ব্যক্তি জান্নাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গী হতে চায় না।
কন্যা সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করলেই হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী তার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাতের গ্যারান্টি মিলবে। সর্বোচ্চ বোনাস থাকবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস।
তাই আল্লাহ তাআলা কোনো মানুষকে কন্যাসন্তান উপহার দিলে সন্তুষ্ট চিত্তে তাদের লালন-পালন করা আবশ্যক। কেননা মা-বাবার জন্য জান্নাতের দাওয়াতনামা নিয়ে দুনিয়াতের তাদের আগমন।
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে কন্যাসন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তা সম্পাদন করেছে, সেই কন্যাসন্তান তার জন্য জাহান্নাম থেকে আড় (প্রতিবন্ধক) হবে।’ (তিরমিজি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যা সন্তানের লালন-পালনের বিষয়ে আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির তিনটি কন্যাসন্তান বা তিনজন বোন আছে, আর সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদের নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করে না, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি)
কন্যা সন্তানের প্রতি বৈষম্য নয়, অনাদর অবহেলা নয়, তাদের সঙ্গে সর্বোত্তম সুন্দর আচরণ করা জরুরি।
বর্তমান সময়ে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রে সব জায়গায় কন্যা সন্তান তথা নারীর প্রতি চরম বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। আবার স্বাধীনতার নামে কন্যা তথা নারীদের পণ্যের বিজ্ঞাপনের সর্বনিম্নস্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। কন্যা সন্তানসহ সব নারীদের প্রতি এমনটি মারাত্মক অপরাধ।
কন্যা বা নারীকে পণ্য নয়, সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দেয়া ইসলামের অনিবার্য দাবি। যার সর্বোচ্চ পুরস্কার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে জান্নাতে বসবাস। সে বসবাসের উপমা বিশ্বনবি এভাবে দিয়েছেন-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দুজন কন্যা সন্তানকে লালন-পালন ও দেখাশোনা করল (বিয়ের সময় হলে ভালো পাত্রের কাছে বিয়ে দিল) সে এবং আমি জান্নাতে এরূপ এক সঙ্গে প্রবেশ করব, যেরূপ এই দুটি আঙুল (এ কথা বলার সময় তিনি নিজের দুই আঙুল মিলিয়ে দেখালেন)।’ (তিরমিজি)
সুতরাং কন্যা সন্তানের প্রতি আমাদের করণীয় হলো, তাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়া। তাদের অধিকারের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়া। হাদিসের আলোকে তাদের প্রতিপালন করা। তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
উল্লেখ্য যে, কন্যা সন্তানের লালন-পালনকারী যদি মা-বাবা ছাড়া অন্য কেউ হয় তবে তাদের জন্য উল্লেখিত পুরস্কার সুনিশ্চিত। হাদিসে পাকে এ কারণেই মা-বাবার পরিবর্তে কন্যা সন্তান বা বোনের লালনকারী-পালনকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কন্যা সন্তান তথা নারীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। কন্যা সন্তান তথা নারীদের অন্যায় বা গোনাহের পথে পরিচালিত করা থেকে বিরত রাখার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর সর্বোত্তম শিক্ষার ব্যবস্থা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস