আল্লাহ কি মানুষের মনের গোপন কথাও জানেন?
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।’ এ আয়াতাংশ থেকে বোঝা যায়, এমন কোনো বিষয় নেই যা আল্লাহ তাআলার জানার বাকি। তারপরও আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমের অনেক স্থানে আলাদাভাবে বিভিন্ন বিষয় সুস্পষ্ট করেছেন।
মানুষের জন্য অনন্য ও একমাত্র জীবন ব্যবস্থার নাম কুরআন। এ মহাগ্রন্থে আল্লাহ তাআলা মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন ও দিকনির্দেশনা তুলে ধরেছেন। এমনকি দুনিয়ার জীবনে কার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করা জরুরি কিংবা কাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা যাবে এ বিষয়টিও বাদ যায়নি।
আগের আয়াতে আল্লাহ তাআলা বন্ধুত্ব স্থাপনে মুমিনদের প্রতি কুরআনের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। কোনো মুমিন প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও গোপনে মুমিন ব্যতীত অবিশ্বাসী বা অমুসলিমকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তা আল্লাহ তাআলা জানতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা মানুষের সব কাজ সম্পর্কেই জানেন। মানুষ যা প্রকাশ করে তা যেমন জানেন, তেমনি যা গোপন করেন তথা মনে মনে রাখেন এমনকি মনে সংকল্প করেন তাও জানেন। এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
قُلْ إِن تُخْفُواْ مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللّهُ وَيَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأرْضِ وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অনুবাদ : ‘(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা তোমাদের মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সেসবও তিনি জানেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৯)
আয়াত নাজিলের কারণ
সুরা আল-ইমরানের ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাদের উদ্দেশ্য করে সতর্কতা ও নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন প্রকাশ্যে আল্লাহর হুকুম পালন করেছেন বলে যে ঘোষণা দেয়, অন্তরেও যেন তা পোষণ করে। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব খবরই জানেন।
যদি বিষয়টি এমন হয় যে, আল্লাহর নির্দেশ প্রকাশ্যে মানুষকে দেখানোর জন্য যথাযথ পালন করে আর অন্তরে তা বিশ্বাস না করে নিজেদের মন মতো কাজ করে তবে তার সব কাজ নিষ্ফল হয়ে যাবে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক হওয়ার জন্য এ আয়াত নাজিল করেছেন।
অতএব কেউ যদি অন্তরের কথা গোপন করে এবং আল্লাহকে ধোকা দিতে পারবে বলে মনে করে তবে তা হবে নিতান্ত বোকামি। কেননা আল্লাহ তাআলা সব কিছু জানেন। তার জ্ঞান সর্বব্যাপী এবং তার ক্ষমতা সর্বত্র বিরাজমান। তার কাছে মানুষের কোনো কিছুই গোপন নেই।
আল্লাহ তাআলা কুরআনের অন্য স্থানে মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন-
‘সে দিনকে ভয় কর যেদিন প্রত্যেকটি মানুষ তার ভালো-মন্দ আমল নিজ চোখে দেখতে পাবে। সেদিন পাপীষ্ঠ লোকেরা এ আকাঙ্ক্ষা করবে যদি আমাদের নিন্দনীয় কাজগুলো আমাদের থেকে দূরে থাকতো। আমরা যদি এর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতাম।’
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
‘সে দিনকে স্মরণ কর যেদিন প্রত্যেকটি মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর কাফের অবিশ্বাসীরা সেদিন বলবে, হায় আফসোস! আমরা যদি মাটি হয়ে যেতাম।’
অন্য আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেন-
‘আর স্মরণ কর সে দিনকে যে দিন তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে ফিরে যাবে। তারপর সবাইকে তার কৃতকর্মের বিনিময় দেয়া হবে। আর তারা অত্যাচারিত হবে না।’
সুতরাং মানুষের উচিত আল্লাহকে প্রকাশ্য ও গোপনে সর্বাবস্থায় ভয় করা। সব সময় আল্লাহর বিধিবিধান মেনে চলা। কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন পরিচালনা করা। কুরআনের সমাজ গড়ে তোলা। বেশি বেশি এ আয়াত স্মরণ করা-
‘সে দিনকে স্মরণ কর, যেদিন সব গোপন রহস্য উদ্ঘাটিত হবে সেদিন কোনো শক্তি থাকবে না এবং কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের আলোকে পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। কুরআনের বিধি-বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস