কাজের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর অসাধারণ কুরআন তেলাওয়াত

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যায়, মসজিদের এক পরিচ্ছন্ন কর্মী তার কাজও করছেন আবার কুরআন তেলাওয়াতও করছেন। কুরআন তেলাওয়াতের এক স্থানে এসে সেজদার আয়াত পড়েই মোস্তাহাব সেজদায় লুটিয়ে পড়েন।

উগান্ডার নাগরিক শাহারভি। বিদেশের কোনো এক দেশে মসজিদের খাদেম হিসেবে কাজ করেন। সেখানেই মসজিদ পরিস্কার করার সময় কুরআন তেলাওয়াত করছিলেন। তার সুমধুর কণ্ঠের তেলাওয়াত প্রমাণ করে যে তিনি একজন ক্বারী।

এ পরিচ্ছন্ন কর্মীর কুরআন তেলাওয়াতের সময় এক ব্যক্তি হাম্মাম খানায় ছিল। সেখান থেকেই তিনি উচ্চ আওয়াজের কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পান। হাম্মাম থেকে ফিরে এসে তিনি দেখতে পান শাহারভি সেজদায় পড়ে আছেন। মূলত মোস্তাহাব সেজদার আয়াত পড়েই এ পরিচ্ছন্নকর্মী সেজদায় লুটিয়ে পড়েন।

শাহরভির সঙ্গে ওই ব্যক্তির কথপোকথন
হাম্মাম খানার সে ব্যক্তি তাকে ইংরেজি ও আরবিতে জিজ্ঞাসা করেন-
ওয়াটস ইউর নেম? ইসমাক?
সে উত্তর দেয় : শাহরাভি।

ওই ব্যক্তি আবার জিজ্ঞাসা করেন-
হাফেজ? হাফেজে কুরআন
সে উত্তর দেয় : ‘আইঁইউয়াহ’ : হ্যাঁ

পরিচ্ছন্নকর্মী হাফেজে কুরআন শুনতেই আগন্তুক ব্যক্তি বলেন উঠলেন, মাশাআল্লাহ! মাশাআল্লাহ!!

তিনি আবারও জিজ্ঞাসা করেন, কোথায় পড়াশোনা করছেন? বা কোন দেশের?
উত্তরে সে জানায়- উগান্ডা, উগান্ডা মাদ্রাসা।

অতঃপর সে ব্যক্তি জানায়, আমি হাম্মামে প্রবেশ করি। (ওজু ও হাজত সম্পন্ন করার স্থান হলো হাম্মাম) সেখান থেকেই আমি শুনতে পাই কে যেন কুরআন তেলাওয়াত করছে।

আমি মনে করেছিলাম হয়তো ইমাম মসজিদের ভেতরে কুরআন তেলাওয়াত করছে।

এসে দেখি না, ইমাম নয়; মসজিদের খাদেমই কুরআন তেলাওয়াত করছে আর মসজিদ পরিস্কারের কাজ করছে। এ যেন এক প্রকৃত কুরআন প্রেমিক; যে কিনা কাজও করছে আবার পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত করছে। আবার মোস্তাহাব সেজদায় আদায় করা থেকেও বিরত থাকছে না।

মসজিদে পরিচ্ছন্নতা কর্মী উগান্ডার যুবক হাফেজ শাহরভি সুরা মারইয়ামের ৫১-৫৮ আয়াত তেলাওয়াত করেই সেজদায় লুটিয়ে পড়েন- iqna.ir/ar/news/3474455

وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مُوسَى إِنَّهُ كَانَ مُخْلَصًا وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا
وَنَادَيْنَاهُ مِن جَانِبِ الطُّورِ الْأَيْمَنِ وَقَرَّبْنَاهُ نَجِيًّا
وَوَهَبْنَا لَهُ مِن رَّحْمَتِنَا أَخَاهُ هَارُونَ نَبِيًّا
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا
وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِدْرِيسَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِدْرِيسَ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا
وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا
أُوْلَئِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ مِن ذُرِّيَّةِ آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِن ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَن خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا

৫১ : এই কিতাবে মুসার কথা বর্ণনা করুন, তিনি ছিলেন মনোনীত এবং তিনি ছিলেন রাসুল, নবী।
৫২ : আমি তাকে আহবান করলাম তূর পাহাড়ের ডান দিক থেকে এবং গুঢ়তত্ত্ব আলোচনার উদ্দেশে তাকে নিকটবর্তী করলাম।
৫৩ : আমি নিজ অনুগ্রহে তাঁকে দান করলাম তাঁর ভাই হারুনকে নবীরূপে।
৫৪ : এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন, তিনি প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রাসুল, নবী।
৫৫ : তিনি তাঁর পরিবারবর্গকে নামাজ ও জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন এবং তিনি তাঁর পালনকর্তার কাছে পছন্দনীয় ছিলেন।
৫৬ : এই কিতাবে ইদরিসের কথা আলোচনা করুন, তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী।
৫৭ : আমি তাকে উচ্চে উন্নীত করেছিলাম।
৫৮ : এরাই তারা- নবীগণের মধ্য থেকে যাদেরকে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত দান করেছেন। এরা আদমের বংশধর এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলাম, তাদের বংশধর। আর ইবরাহিম ও ইসরাঈলের বংশধর এবং যাদেরকে আমি পথ প্রদর্শন করেছি ও মনোনীত করেছি, তাদের বংশোদ্ভূত। তাদের কাছে যখন দয়াময় আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হত, তখন তারা সেজদায় লুটিয়ে পড়ত এবং ক্রন্দন করত।

কুরআনের সুরা মারইয়ামের ৫৮নং আয়াতে অনুগত বান্দাদের সেজদার বিবরণ ও কান্নার বিবরণ শুনেই পরিচ্ছন্ন কর্মী হাফেজ শাহারভিও সেজদায় লুটিয়ে পড়েন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন।

কুরআন তেলাওয়াত ও আল্লাহর প্রশংসা করতে হাফেজ শাহারভি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুপ্রেরণা। যারা কাজের অজুহাতে আল্লাহর পবিত্র বিধান কুরআন থেকে দূরে তাদের জন্যও অনুপ্রেরণা সাহারভি।

আল্লাহ তাআলা মসজিদের খাদেম সাহারভিকে কবুল করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।