বাবরি মসজিদ মামলায় মুসলিম আইনজীবী ও বিচারপতির যুক্তি-তর্ক

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:০৫ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরে সম্রাট বাবরের নির্দেশে ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরআরএসের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে ভেঙে ফেলা হয় এ মসজিদ।

গত বুধবার আদালতে মুসলিম আইনজীবী জাফরায়েব জিলানি ও বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদের মধ্যে প্রশ্ন ও পাল্টাপাল্টি যুক্তি তর্ক হয়। সেখানে আদালতের এক প্রশ্নের জবাবে মুসলিম আইনজীবী বলেছেন, ‘সম্রাট বাবর কোনো মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করেনি’।

বাবরি মসজিদের স্থানে আরআরএসসহ সব কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাম মন্দির নির্মাণ করতে চায়। তাদের দাবি এখানে রাম মন্দির ছিলো। সম্রাট বাবরের নির্দেশে সে মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। এ জমি নিয়ে ভারতের আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। যার সুরাহা হয়নি এখনও।

কথিত রাম জন্মভূমি ও বাবরি মসজিদ-এর বিতর্কিত জমি মামলায় গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, আদালতের সামনে এখন তিনটি প্রশ্ন উপস্থিত।

সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে আদালতে প্রশ্ন রাখনে যে-

>> বাবর মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি করিয়েছিলেন কি না?
>> আগে যেখানে মন্দির ছিল, বাবর সেখানে মসজিদ তৈরি করিয়েছিলেন কি না?
>> বাবর ফাঁকা জমিতে মসজিদ তৈরি করিয়েছিলেন কি না?

বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে মুসলিম আইনজীবী জাফরায়েব জিলানি বলেন, ‘আমাদের যুক্তি, সে স্থানে যদি কোনো মন্দির কখনো থেকেও থাকে। তবে তা বহু আগে উধাও হয়ে গিয়েছিল। বাবরি মসজিদ নির্মাণের সময় জমিটি ফাঁকা ছিল। আর ফাঁকা জমিতেই মসজিদ তৈরি হয়েছিল।’

বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ক জিলানি আরও যুক্তি তুলে ধরেন, ‘যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল, সেই জায়গাটিকে রামের জন্মস্থান ধরে নিয়ে হিন্দুরা কখনও পুজো করেনি। হিন্দুরা রাম চবুতরাকে রামের জন্মস্থান ধরে নিয়ে পুজো করত। আর রাম চবুতরা থেকে মসজিদের দূরত্ব ৫০ থেকে ৬০ ফুট।

জিলানির বক্তেব্যের পর বিচারপতি শরদ অরবিন্দ আইনজীবীকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে থাকেন। আর আইনজীবী একটার পর একটা উত্তর দিতে থাকেন-

জিলানির যুক্তি শুনে উপস্থিত বিচারপতিরা পাল্টা প্রশ্ন কনের, ‘আপনি কি মেনে নিচ্ছেন রাম চবুতরা রামের জন্মভূমি?
তখন আইনজীবী জিলানি বলেন, ‘এর আগের তিনটি আদালত রাম চবুতরাকে রামের জন্মভূমি বলেছে, সে কথাই বলছি।’

বিচারপতি আবারও প্রশ্ন করেন, ‘তা হলে অযোধ্যায় রামের জন্ম, তাতে আপত্তি তুলছেন না?
জিলানি বলেন, ‘তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু মসজিদের মধ্যে জন্মস্থান ছিল- এ কথায় আমাদের আপত্তি আছে। তাছাড়া বাল্মীকির রামায়ণ ও রামচরিত মানসেও নির্দিষ্ট ভাবে বলা নেই যে, অযোধ্যায় কোথায় রামের জন্ম হয়েছিল।’

বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় বলেন, ‘এ যুক্তি মেনে নেওয়ার অর্থ হল, হিন্দুরা অযোধ্যার নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় রামের জন্ম বলে বিশ্বাস করতে পারেন না।’

বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবদে প্রশ্ন তুলেন, ‘আইন-ই-আকবরিতে খুঁটিনাটি নানা তথ্য রয়েছে। সেখানে বাবরি মসজিদের কথা নেই কেন?
আইনজীবী জিলানি বলেন, ‘শুধু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই বইয়ে লেখা হয়েছিল।’

বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘মোগল সম্রাটের নির্দেশে তৈরি মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ নয়?
আইনজীবী জিলানি উত্তরে বলেন, ‘হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সে সময় এমন অনেক মসজিদই তৈরি হয়েছিল। বিবাদ না হলে এই মসজিদটিরও আলাদা গুরুত্ব ছিল না।’

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।