যেসব মানুষকে সবচেয়ে নিঃস্ব বলেছেন বিশ্বনবি
এ কথা সবাই জানে যে, নিঃস্ব বা অসহায় সেই ব্যক্তি, যার অর্থ-সম্পদ নেই। দুনিয়াতে যে ব্যক্তি অর্থের অভাবে নিজের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারে না, সেই ব্যক্তি নিঃস্ব বা অসহায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার কোনো অভাবী মানুষকে নিঃস্ব বা অসহায় বলেননি। বরং তিনি এমন একশ্রেণির মানুষকে নিঃস্ব ও অসহায় বলেছেন, যারা সম্পদশালী আবার ইবাদতগুজার। তাহলে তারা কারা? হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবায়ে কেরামকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান, কে দেউলিয়া বা নিঃস্ব?
তারা (সাহাবায়ে কেরাম) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের মধ্যে দেউলিয়া বা নিঃস্ব হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই। কোনো সম্পদও নেই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তখন নিঃস্ব ব্যক্তির পরিচয় তুলে ধরে) বললেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া বা নিঃস্ব; যে ব্যক্তি কেয়ামতের ময়দানে নামাজ-রোজা-জাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে আর পাশাপাশি সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধরসহ ইত্যাদি অপরাধ নিয়ে আসবে।
সে তখন (কেয়ামতের ময়দানে) বসবে এবং (উল্লেখিত ব্যক্তিরা দুনিয়ার অপরাধের বদলাস্বরূপ) তার নেক আমল থেকে কিছু কিছু নিয়ে যাবে।
এভাবে সব (অপরাধের) বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সব নেক আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে, (এবার) তাদের গোনাহ তার (ওই নামাজ-রোজা-জাকাত দেয়া ব্যক্তির) ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (তিরমিজি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
হাদিসের পরিভাষায় সেসব ইবাদতকারী ব্যক্তির উচিত, উল্লেখিত অপরাধ থেকে বিরত থাকা। আবার কেউ এসব অপরাধে জড়িত হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়াতেই তার সমাধান করা। এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই বান্দার ওপর আল্লাহ তাআলার রহমত বর্ষণ করুন, যে তার কোনো ভাইয়ের মান-সম্মান ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে জুলুম করেছে। কেয়ামতের দিন এ ব্যাপারে তাকে কেউ পাকড়াও করার আগে যেন সে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কারণ, সে স্থানে (কেয়ামতের দিন) দিরহাম, দীনারের (বিনিময় করার) ব্যবস্থা থাকবে না। সুতরাং তার কোনো ভালো আমল থাকলে (জুলুমের পরিণাম অনুযায়ী) তা নিয়ে যাওয়া হবে। আর যদি কোনো ভালো আমল না থাকে, তবে অত্যাচারের শিকার হওয়া ব্যক্তির গোনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে।’ (তিরমিজি)
সুতরাং মানুষের উচিত পরকালে নিঃস্ব হওয়ার আগেই দুনিয়ায় উল্লেখিত অপরাধ নিজেকে অপরাধী না করা। সব কাজের সঠিক হিসাব সম্পাদন করা।
মনে রাখতে হবে
পরকালে সব মুসলিমকেই পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। যে প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া কেউ এক কদম এগুতে পারবে না। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের ময়দানে কোনো বান্দা পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত এক কদমও এগুতে পারবে না। আর তাহলো-
>> সে তার জীবন কোন্ পথে শেষ করেছে।
>> যতটুকু ইলেম শিখেছে তার ওপর কতটুকু আমল করেছে।
>> সম্পদ কোন্ পথে আয় করেছে। এবং
>> উপার্জিত সম্পদ কোন্ পথে ব্যয় করেছে।
>> নিজের যৌবনকে কোন্ পথে শেষ করেছে।’ (তিরমিজি)
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, দুনিয়ার প্রতিটি মুহূর্ত হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে অতিবাহিত করা। তবেই পরকালের দেউলিয়া তথা নিঃস্ব হওয়া থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের কঠিন সময়ে দেউলিয়া তথা নিঃস্ব হওয়া থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। কেয়ামতের ময়দানের উল্লেখিত ৫টি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেয়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসের আলোকে জীবন সাজানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর