মুমিনের প্রশংসা করেই মুক্তি পেলেন যে নারী
তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় মুমিনের অন্যতম গুণসমূহের একটি। কুরআনুল কারিমে অনেক আয়াতে আল্লাহকে ভয়কারী ব্যক্তিদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। আর মুত্তাকি ব্যক্তিদের আল্লাহ তাআলা ২টি জিনিসের জন্য প্রতিযোগিতা করতে বরেন। আল্লাহ বলেন-
‘তোমরা আল্লাহর কাছে তার ক্ষমা ও আকাশ-জমিনব্যাপী বিশাল জান্নাত লাভের প্রতিযোগিতা কর। যা মুত্তাকি বা আল্লাহকে ভয়কারী ব্যক্তির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৩)
আল্লাহ তাআলার এ ঘোষণার পর পরই পরবর্তী আয়াতে মুত্তাকি ব্যক্তির ৪টি গুণ তুলে ধরেন। আর তাহলো-
‘যারা স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থায় দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্তের অধিকারী) সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৪)
কুরআনে বর্ণিত মুত্তাকি ব্যক্তির গুণের ধারাবাহিক প্রশংসায় মুক্তি মেলে এক নারী। যে নারীকে আজাদ বা স্বাধীন করে দেন হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছেলে হজরত আলি রাহিমাহুল্লাহু।
ইসলামের ঐতিহাসিক বিস্ময়কর ঘটনাবলী সমৃদ্ধ আব্দুল মালেক মুজাহিদির গ্রন্থ ‘সোনালী পাতা’য় উঠে এসেছে সে ঘটনা। যা তুলে ধরা হলো-
ইসলামে চতুর্থ খলিফা হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি হজরত আলি রাহিমাহুল্লাহ তাআলা একদিন ওজু করতে গেলেন। তার সেবিকা গরম পানি নিয়ে উপস্থিত। হঠাৎ করেই সেবিকার হাত থেকে গরম পানির পাত্রটি হজরত আলি রাহিমাহুল্লাহুর পায়ের ওপর পড়ে। তখন গরম পানি পড়ে তার পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হজরত আলি রাহিমাহুল্লাহ সেবিকার দিকে তাতেই সে নারী কুরআনে বর্ণিত মুত্তাকি ব্যক্তির একটি গুণের কথা উল্লেখ করেন-
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ
‘মুত্তাকি ব্যক্তি ক্রোধ বা রাগ সংবরণ করে’।
তখন হজরত আলি রাহিমাহুল্লাহ বললেন-
قَدْ كَظَمْتُ غَيْظِىْ
‘অবশ্যই আমি আমার ক্রোধ সংবরণ করাম।’
সেবিকা বলল আল্লাহ আরও বলেন-
وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ
‘(মুত্তাকিরা) মানুষকে ক্ষমাকারী।’
তিনি বললেন-
عَفَا اللهُ عَنْكِ
‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন।’
সেবিকা তার (হজরত আলি রাহিমাহুল্লাহ-এর) মুখে নিজের ভুলের ক্ষমা লাভের কথা শুনেই মুত্তাকির প্রশংসামূলক বিশেষ গুণটির কথাও উল্লেখ করেন-
وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
‘আর আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।’
সেবিকার মুখে মুত্তাকির প্রশংসা ও গুণের কথা শুনে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান। আর তখননি তিনি বলেন ওঠেন-
‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাকে আজাদ বা স্বাধীন করে দিলাম।’
আল্লাহ ঈমানদার মুত্তাকি বান্দাদেরকে এ গুণগুলো অর্জন করার মাধ্যমে তার ক্ষমা ও বিশাল জান্নাত লাভের প্রতিযোগিতা করার কথাই বলেছেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মুত্তাকি হওয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআনে বর্ণিত মুত্তাকির গুণগুলো নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম