মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু-কাশ্মীরের ঐতিহাসিক ‘৩৭০ ধারা’

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০১৯

১৭তম লোকসভা নির্বাচনের পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লাভের ঐতিহাসিক ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ৩৭০ ধারা বাতিলে সই করেছেন। ফলে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে আসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।

ঈদের দিনও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা উদযাপন করতে পারেনি কুরবানি ও ঈদের আনন্দ। অথচ বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ লাদাখের বাসিন্দারা আনন্দ-বিনোদনে মেতে উঠেছে। এ যেন মুসলিম নিধনের আনন্দ।

জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের স্বায়ত্তশাসন বাতিলকে ‌‘গণতন্ত্রের সবচেয়ে কালো দিন ও অধ্যায়' বলে দাবি করেছে পিডিপি নেত্রী, সংসদ সদস্য ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি।

ঐতিহাসিক ৩৭০ ধারা

১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর ভারতীয় সংবিধানে ৩৭০ ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ ১ ব্যতিরেকে)। ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেয়া হয়।

দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদের আলোকে জম্মু-কাশ্মীর ছিল স্বায়ত্তশাসিত একটি ব্যতিক্রমী রাজ্য। ভারতের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগের মতো কয়েকটি বিষয় ছাড়া জম্মু-কাশ্মীরে কোনো আইন প্রয়োগ করতে গেলে অবশ্যই রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হতো।

৩৭০ অনুচ্ছেদের ফলে এ রাজ্যের বাসিন্দারা নাগরিকত্ব, সম্পত্তির মালিকানা বা মৌলিক অধিকারসহ অনেক বিষয়ে অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের তুলনায় বাড়তি কিছু সুবিধা ভোগ করতে পারত। ৩৭০ ধারা বাতিল করায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু-কাশ্মীর সেসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই জন্মু-কাশ্মীরে চলছে মুসলিম গণহত্যাসহ অত্যাচার-নির্যাতন। জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর জম্মু-কাশ্মীরে যখন গণহত্যা ও অত্যাচার নির্যাতন চলছে ঠিক সে সময়টিতে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ লাদাখের বাসিন্দাদের মধ্যে চলছে আনন্দের জোয়ার।

ফিরে দেখা

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত ভাগ হওয়ার সময় জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অঙ্গরাজ্য ছিল না। একসময় এটি ছিল একটি স্বাধীন দেশ। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এ দেশটির রাজা ছিলেন মহারাজা হরি সিং।

ঘটনাচক্রে পার্বত্য দুষ্কৃতকারীরা ২২ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে জম্মু-কাশ্মীরে আক্রমণ করে। মহারাজা হরি সিং রাজত্ব বাঁচাতে সে সময় ভারতের কাছে সেনা সহায়তা চান। তার শর্ত ছিল ভারতভুক্তি বা ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন।

১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং ভারতভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরদিন ২৭ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন সে চুক্তি অনুমোদন করেন।

তারপর থেকেই জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখে ৩৭০ নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা অব্যাহত রাখা হয়। ফলে সে সময় বিনা অনুমতিতে যে কারো জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখে প্রবেশাধিকারও ছিল না।

দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মীরের নিরপরাধ মুসলমানরা ভারত সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের লালসার শিকার ও অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করে আসছে। অবশেষে ভারত সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের ৩৭০ ধারা বাতিল করে।

কাশ্মীরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধিবাসী ও নেতারা সংবিধানে সংরক্ষিত কাশ্মীরের মর্যাদার ৩৭০ ধারা বাতিলকে ভারত সরকারের ‘কালো অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

এমএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।