আজকের তারাবিহতে পড়া হবে আরশের ধনভাণ্ডারের দোয়া

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২৯ পিএম, ০৭ মে ২০১৯

রমজানের দ্বিতীয় তারাবিহ আজ। আজকের তারাবিহতে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধান তেলাওয়াত করাহবে। সুরা বাকারার ২০৪নং আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত এবং সুরা আল-ইমরানের ০১ থেকে ৯১ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

আজকের তারাবিহতে পাঠ করা হবে সুদের ভয়াবহ পরিণাম ও ক্ষতি বিষয়ক আয়াত। আবার আজকের তারাবিহতেই রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। বান্দার জন্য যে দোয়া আরশের ধনভাণ্ডার থেকে নাজিল করা হয়েছে। সুরা বাকারার সর্বশেষ আয়াতেই তা নিহিত রয়েছে।

কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের বাইরে কষ্ট দেয়ার ইচ্ছা আল্লাহ তাআলার নেই। আর মানুষকে সাধ্যের বাইরে কষ্ট দেয়া মহান আল্লাহর নীতি বিরোধী কাজ। আর তাইতো তিনি আয়াত নাজিল করে বান্দাকে আশ্বস্ত করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তার কাছে ক্ষমা ও দয়া প্রার্থনা ভাব-ভঙ্গি শিখিয়েছেন। যে দোয়াটি ছিল আরশের ধনভাণ্ডারে। জীবনের ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে ক্ষমা প্রার্থনার পদ্ধতি রয়েছে এ দোয়ায়। যাতে ভুল-ভ্রান্তির কারণে পূর্ববর্তী নবিদের উম্মতের মতো উম্মতে মুহাম্মাদির শাস্তিতে পতিত হতে না হয়।

আর আরশের ধনভাণ্ডার থেকে প্রাপ্ত দোয়াটি হলো-
رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
رَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا
رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ
وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا
أَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
উচ্চারণ : রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন্নাসিনা আও আখত্বানা; রাব্বানা ওয়া লা তাহমিল আলাইনিা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাজিনা মিং ক্বাবলিনা; রাব্বানা ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাকাতা লানা বিহি ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা আংতা মাওলানা ফাংচুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিনি।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮৬)

এ আয়াত প্রসঙ্গে হাদিসে প্রিয়নবি ঘোষণা করেন, ‘সুরাহ বাকারার শেষ আয়াতগুলো আমাকে আরশের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার আগে আর কোনো নবিকে এগুলো দেয়া হয়নি।’ (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকি)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মেরাজের রাতে আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনটি জিনিস দান করেন। আর তাহলো-
- ৫ ওয়াক্ত নামাজ;
- সুরাহ বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং
- তাওহিদের অনুসারীদের সব পাপের ক্ষমার ঘোষণা।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)

হজরত নোমান ইবনে বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আসমান জমিন সৃষ্টির দু’হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছেন যে, সুরা বাকারার শেষ দু’আয়াত যে ঘরে ৩দিন পাঠ করা হবে, সে ঘরের কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’ (বাগবি- তাফসিরে মাজহারি)

নামাজে পঠিত হবে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধানাবলী। দ্বিতীয় তারাবিহ নামাজে কুরআনুল কারিমের সুরা বাকারার ২০৪নং আয়াত থেকে শেষ সুরার শেষ করা হবে। অতঃপর সুরা আল ইমরানের শুরু থেকে ৯১নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

সুরা বাকারা
সুরা বাকারার এ অংশে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি পাঠ করা হবে। সুদ ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থাসহ মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের মূলনীতি থেকে শুরু করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দান-সদকার হকদার, ইয়াতিমদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন ও বাবা মায়ের অধিকারসহ অনেক বিষয় সম্পর্কিত বিধানসমূহ পাঠ করা হবে।

আয়াত ২০৪-২১৪
ইসলামের সামাজিক অবস্থার চিত্রায়ন করা হয়েছে। মুমিনের প্রকৃত পরিচয়, ইয়াহুদি জাতির ধ্বংসের কারণ এবং মুশরিকদের বিপরীতমুখী দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে বর্ণনা রয়েছে। মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধের মূলনীতি ঘোষণাপূর্বক জান্নাত লাভের মিথ্যার আশ্বাসে লোভ-লালসা ও বিভ্রান্তিমূলক বর্ণনার বিষয়ে সতর্কতা রয়েছে।

আয়াত ২১৫-২২০
দান-সাদকার অগ্রাধিকারভুক্ত খাতের উল্লেখ, ইসলামে জিহাদের গুরুত্ব, আল্লাহর মাসসমূহের মধ্যে সম্মানিত মাসের বিধান ও তাৎপর্যের বর্ণনা রয়েছে। মদ-জুয়া নিষিদ্ধে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা এবং দান-সাদকার পরিমাণ ও মাত্রা এবং ইয়াতিমের সম্পদ ব্যয় নির্বাহ ও অধিকার সংরক্ষণের বিবরণ রয়েছে।

আয়াত ২২১-২৪২
মানুষের পারিবারিক জীবনের নীতিমালায় ইসলামে বিবাহের বিধান, যৌন জীবন, বিধর্মী ও মুশরিক নারী পুরুষকে বিবাহের বিধান, মহিলাদের ঋতুস্রাবের বিধান, শপথ সংক্রান্ত সতর্কতার বিধান ওঠে এসেছে।
স্বামী-স্ত্রীর ইলা’র বিধান, তালাকের বিধান ও মোহর, তালাক পরবর্তী হিল্লা বিয়ে সংক্রান্ত বিষয় ওঠে এসেছে।
সন্তানদের স্তন্যদানের বিষয়, বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দতকাল এবং বিধবার প্রতি ইসলামের উদারতা ও তাদের অধিকার সংরক্ষণে ইসলামি নীতি আলোচিত হয়েছে।

আয়াত ২৪৩-২৫৮
ইয়াহুদিদের চরম হঠকারিতা, আল্লাহর পথে জিহাদ ও তার নেতৃত্বের সুফল, জালেমকে দিয়ে জালেমদের দমনের বিষয়টি ওঠে এসেছে। রিসালাত ও নবুয়ত প্রসঙ্গে নবীগণের মধ্যে পারস্পরিক মর্যাদার তারতম্য এবং কুরআনুল কারিমের সবচেয়ে বড় আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ মধ্যে মহান আল্লাহ তাআলা অনেকগুলো গুণের আলোচনা এসেছে। ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণে তাগুত বর্জন ঈমানের পূর্বশর্ত ও ব্যক্তি স্বাধীনতার আলোচনা রয়েছে।

আয়াত ২৫৯-২৮৬
সর্বোপরি এ সুরায় সুদের মতো মারাত্মক ব্যাধির গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে। ব্যবসা ও সুদের নীতিগত পার্থক্য, সুদের অর্থনৈতিক ক্ষতি, সুদের শাস্তি ঘোষিত হয়েছে।

সুরার শেষাংশে লেনদেন ও চুক্তি সংক্রান্ত বিধিবিধানের পাশাপাশি ইসলামের সাক্ষ্য আইন, মেয়াদি ঋণ সংক্রান্ত নীতিমালা এবং বন্ধকীঋণ সংক্রান্ত নীতিমালার বিবরণ রয়েছে। আরও রয়েছে ঈমানের সঠিক রূপ-রেখার আলোচনা।

সুরা আল-ইমরান
সুরা আল-ইমরান মাদানি সুরা। এ সুরার সব আয়াতই হিজরতের পর বিভিন্ন সময়ে নাজিল হয়। ২০ রুকুর এ সুরাটির আয়াত সংখ্যা ২০০। এ সুরায় দু’টি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে। একটি হলো আহলে কিতাব আর দ্বিতীয় দলটি হলো যারা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ঈমান গ্রহণ করেছিলেন।

আয়াত ১-৩২
এ সুরায় আল্লাহ তাআলা তাওহিদের বিষয়ে অতিতের আসমানী কিতাবের রেফারেন্সসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরছেন।

পৌত্তলিকতা, খ্রিস্টবাদ ও আল্লাহর একত্ববাদের আলোচনা, তাওরাত ও ইঞ্জিলের ঐতিহাসিক পটভূমি, সব রিসালাতের উৎসের বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।

কুরআনে মুহকামাত ও মুতাশাবিহাত আয়াতের আলোচনাও রয়েছে। মুমিনের গুণাবলী ও তাঁদের প্রতি আল্লাহর সাহায্যের পাশাপাশি ইসলামের সামগ্রিক আলোচনা ও আমল ধ্বংস হওয়ার কারণ এবং বিধর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের ব্যাপারে নসিহত এবং আল্লাহ তাআলার সার্বভৌম ক্ষমতার বিষয় ওঠে এসেছে।

আয়াত ৩২-৬৪
পূর্ববর্তী নবি রাসুলসহ অনেক মহীয়সী ব্যক্তিত্বের জীবনাচরণ ইবাদত-বন্দেগি ও মর্যাদা এবং শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা রয়েছে এ আয়াতগুলোতে। বিবি মরিয়ম ও হজরত ইসা আলাইহিস সালামের জন্ম, প্রেক্ষাপট, মুযিজা, নবুয়তি মিশন এবং ইসা আলাইহিস সালামকে হত্যায় ইয়াহুদিদের ষড়যন্ত ও মুবাহালার বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে।

আয়াত ৬৫-৯১
মুসলিম জাতির ঐক্য এবং মুসলমানদের ছদ্মাবরণে ইয়াহুদি ও ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্রসহ নৈতিকতার প্রশ্নে ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের অবস্থান বিষয়ক আলোচনা রয়েছে।

শেষের আয়াতগুলোর দিকে আল্লাহর সঙ্গে নবিদের ওয়াদা এবং আল্লাহ তাআলা অবাধ্যতাকারী মুরতাদের তাওবা প্রসঙ্গে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে।

আজকের তারাবিহতে যাওয়ার আগে মুসল্লিদের উচিত, সুরা বাক্বারার বাকি অংশ এবং সুরা আল-ইমরানের শুরু থেকে ৯১ আয়াত পর্যন্ত তাফসিরসহ অধ্যয়ন করা। আর তা সম্ভব না হলে অন্তত শুধু তেলাওয়াত করে যাওয়া। আর তাতেই একনিষ্ঠভাবে নামাজ আদায়ে আনন্দ ও উপকার পাবে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের আজকের অংশ বুঝে পড়ার তাওফিক দান করুন। কুরআন অনুযায়ী আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। হৃদয়ে কুরআনের নূর তথা হেদায়েত ধারন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।