কী ঘটেছিল মদিনার বনি হারামে?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ০৭ এপ্রিল ২০১৯

সৌদ আরবের মদিনা মুনাওয়ারায় অবস্থিত ইসলামের এক ঐতিহাসিক মসজিদ হলো মসজিদে বনি হারাম। এ মসজিদের পাশেই ছিল বনি হারাম উপজাতির বসবাস। খন্দকের যুদ্ধের প্রস্তুতিতে খন্দক খননের আগে এখানেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছিলেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় সাহাবি হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাড়িও এ মসজিদের পাশে অবস্থিত। মসজিদে বনি হারাম এখনো প্রিয় নবির একটি অলৌকিক ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। ঘটনাটি হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ সহিহ বুখারিতে এসেছে-

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ খন্দক খননের সময় সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে প্রচণ্ড কষ্ট করেছিলেন। আর তাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সব সাহাবাই প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত ছিল।

Boni-Haram-2.jpg

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু দেখেছিলেন প্রিয় নবি ক্ষুধার্ত-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু তার স্ত্রীকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাবার তৈরি করতে বললেন।
তাঁর স্ত্রী জানালেন, ঘরে ছোট একটি ভেড়া ও কিছু বার্লি ছাড়া আর কিছুই নেই। হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু ছোট্ট ভেড়াটি রান্না করতে এবং রুটি বানাতে বলেছিলেন।

প্রিয় নবিসহ ১০ সাহাবিকে দাওয়াত-
সন্ধ্যার দিকে সাহাবায়ে কেরাম পরিখা খননে মাটি কাটছিলেন। আর দিনের আলোও কমে আসছিল। তাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাজ বন্ধ করে চলে যাচ্ছিলেন। হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে রাতে খাবারের দাওয়াত দেন।

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু শুধু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েছিলেন। যাতে তিনি ভালোভাবে খেতে পারেন। কারণ তিনি জানতে তার বাড়িতে খুব সীমিত খাবারই ছিল। তাই তিনি প্রিয় নবিকে একাই দাওয়াত দিলেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাত ধরে বললেন, সব সাহাবাকে ডেকে রাতে তার বাড়িতে খাবারের দাওয়াত দিতে বললেন।

Boni-Haram-2.jpg

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু মুহূর্তকালও চিন্তা করেননি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে দাওয়াত দিলেন আর কুরআনের একটি আয়াত পড়লেন-
‘নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য আর আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব।’

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলে দিলেন, আমরা তোমার বাড়িতে না পৌছা পর্যন্ত রুটি ও গোশতে আগুন জ্বালবে না।

রাতে খাবারের সময় প্রিয় নবি সাল্লাল।লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বাড়িতে পৌছলেন। তিনি কিছু রুটি এবং গোশত উঠিয়ে সাহাবায়ে কেরামকে আপ্যায়ন করলেন আর বাকি গোশত ও রুটি কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখলেন।

১০জন করে সাহাবি খাবার গ্রহণে আসতে থাকলেন আর খেতে থাকলেন। এভাবে ১০ জন করে সাহাবিগণ আসতে থাকলেন আর খেতে থাকলেন।

সবার খাওয়ার পরও ১০ জনের খাবার রুটি ও গোশত অবশিষ্ট ছিল। সব সাহাবিই তৃপ্তিসহ খাবার গ্রহণ করেছিলেন। এটি ছিল সে সময়ের ছোট্ট বকরি ও অল্প বার্লি দ্বারা তৈরি করা রুটির মাধ্যমে অনেক মানুষের রুটি গ্রহণের বরকতময় অলৌকিক ঘটনা।

হজ ও ওমরার সময় সারাবিশ্ব থেকে মুসলিম উম্মাহ পবিত্র মদিনা জিয়ারতে উপস্থিত হয়। অনেকেই এ মসজিদে বনি হারাম জিয়ারতে উপস্থিত হয়। এ মসজিদ মুমিন মুসলমানের হৃদয়ে সে সময়ে এ ঘটনা স্মৃতিপটে তুলে ধরে। যা মানুষের ঈমানকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।

মসজিদে বনি হারাম হোক মুসলিম উম্মাহর ঈমান বৃদ্ধি ও প্রেরণার উৎস। যা মানুষকে ইসলামের প্রতি আরো বেশি একনিষ্ঠ হতে উদ্বুদ্ধ করবে।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।