সুস্থ মানুষের যে বিষয়গুলো ভেবে দেখা আবশ্যক
কঠিন বিপদ ও মুসিবতে পতিত মানুষের মুখ থেকে মনের অজান্তে সাধারণত যে শব্দ বেরিয়ে আসে তাহলো ‘আল্লাহ বা ওহ গড!। এটা স্বাভাবিক কোনো কথা নয়। মানুষ যখন কোনো বিষয়ে একান্তই অপারগ হয়ে যায়, তখনই মনের অজান্তে সৃষ্টিকর্তার নাম আপনা-আপনিই মুখ থেকে বেরিয়ে আসে।
সৃষ্টিকর্তাকে মনের অজান্তে স্মরণ করাও মহান আল্লাহর একান্ত রহমত ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এভাবেই আল্লাহ তাআলা নিরুপায় বা সম্বলহীন মানুষকে বিপদ মোকাবেলায় একটা না একটা পথ খুলে দেন। আর একারণেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ কথা স্মরণ রাখতে বলেন-
‘যদি তুমি আল্লাহর নেয়ামতসমূহ গণনা করতে চাও তবে তা অসম্ভব; গণনা করে তা শেষ করতে পারবে না।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৬)
অন্য একাধিক আয়াতেও আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন-
‘সুতরাং (হে মানুষ ও জিন) তুমি তোমার প্রভুর কোন কোন অবদানকে (নেয়ামত) অস্বীকার করবে?’
আল্লাহর নেয়ামত নিয়ে একটু চিন্তা করলেই মানুষের কাছে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়। মানুষ যখনই তার শরীরিক সৃষ্টির দিকে তাকাবে তখনই আল্লাহর ঘোষণার উত্তর পেয়ে যাবে। আর চিন্তাশীলদের জন্য তা-ই যথেষ্ট। আল্লাহ বলেন-
‘এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও (আমার নিদর্শনে ভরপুর), তবে তোমরা কি (এসব নিদর্শন) দেখতে পাচ্ছ না?’ (সুরা আল যারিয়াত : আয়াত ২১)
আরও পড়ুন > প্রিয়নবির একান্ত নিকটবর্তী হতে যে আমল করবেন
একবার চিন্তা করুন!
মানুষ চোখ দিয়ে দেখার কাজটি করেন, পা দিয়ে হাটার কাজ করেন, হাত দিয়ে রিজিকের ব্যবস্থা করতে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করেন আবার কান দিয়ে শোনেন। এভাবে মানুষ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা নানান কাজ সম্পাদন করে থাকেন।
যদি মানুষের এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো বিকল হয়ে যেতো কিংবা মহান আল্লাহ তাআলা তা যথাযথভাবে দান না করতেন তবে কল্পনা করা যায়, মানুষের অবস্থা কেমন হতো?
এভাবে খাওয়া-দাওয়ার কাজ সম্পাদন, শান্তির ঘুম, নির্মল বাতাস গ্রহণ সবই বান্দার জন্য মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। কেননা মানুষের এসব ভোগের জন্য কোনো টাকা-পয়সা ব্যয় করতে হয় না। আর এ সবই মানুষকে আল্লাহর পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করছে। প্রতিনিয়ত সত্যের পথে চলতে আহ্বান করছে।
এত কিছুর পরও মানুষ আল্লাহকে ভুলে যায়। পরকালকে ভুলে যায়। ফেতনা-ফাসাদেযুক্ত হয়ে যায়। অনেক ছোট-বড় গোনাহে নিজেদের নিয়োজিত করে বিপদে পতিত হয়।
প্রিয়নবির শেখানো ভাষায় প্রার্থনা করুন
তাইতো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যের পথে চলাচলকারী লোকদেরকে দুনিয়া ও পরকালের সফলতায় আল্লাহর সাহায্য লাভে প্রার্থনা করার কথা বলেছেন। যাতে কোনোভাবেই মানুষ আল্লাহকে তথা তার নেয়ামতকে অস্বীকার না করে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মাদিকে) কুরআনের শিক্ষার মতোই (দুনিয়া ও পরকালের সফলতায়) এ দোয়াটি শিখিয়েছিলেন-
اَللهُمَّ اَعُوْذُبِكَ مِن عَذَابِ جَهَنَّم – وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ – وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ – وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নাম, ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কবর, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দজ্জাল, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জাহান্নামের শাস্তি, কবরের আজাব, দাজ্জালের ফেতনা-ফাসাদ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (স্ঙ্গে সঙ্গে) জন্ম ও মৃত্যুর ফেতনা থেকেও তোমার কাছে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি ও মুসলিম)
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক ও সুন্দর জীবন লাভে এ রকম অসংখ্য দোয়া শিখিয়েছেন, যার সাহায্যে আল্লাহর কাছে ধরনা দেয়া জরুরি।
পরিশেষে…
সুস্বাদু খাবার ও পাণীয় গ্রহণে, সুখের ঘুমে মগ্ন থাকায়, পাহাড়সম সম্পদের মালিকানা লাভে, সুস্থ শরীর ও সুন্দর মনে অধিকারী হওয়ায় আত্মতুষ্টি বা প্রশান্তি লাভের কিছুই নেই।
বরং এ সবের পেছনে যে মহান সত্ত্বার মহানেয়ামত তথা অনুগ্রহ কাজ করছে; তার শুকরিয়া আদায় করা আবশ্যক। তারই কাছে প্রিয়নবির শেখানো ভাষায় সব সময় প্রার্থনা করা জরুরি।
সবচেয়ে বেশি জরুরি কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক জীবন পরিচালনা। যাতে মানুষ কোনোভাবেই সত্য থেকে বিচ্যুত না হয়। খুঁজে পায় জীবন পরিচালনার সঠিক দিক-নির্দেশনা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভে ইবাদতপূর্ণ জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ে চিন্তা-ভাবনা করার তাওফিক দান করুন। প্রিয়নবির শেখানো দোয়ার মাধ্যমে যাবতীয় ফেতনা-ফাসাদমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ