খাদ্য উৎপাদনে ইসলাম যা বলে

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

‘কর্ম গড়ে ভবিষ্যৎ, কর্মই গড়বে ২০৩০-এ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব’ স্লোগানে পালিত হচ্ছে এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবস। ক্ষুধামুক্তি বিশ্ব উপহার দিতে মানুষের মাঝে নিরাপদ ও সহজেই খাদ্য ও কৃষি উপকরণের অবাধ সরবরাহ ও ব্যবহারই বিশ্ব খাদ্য দিবসের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে।

সে লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় বিজ্ঞানী ড. প্যল রোমানি ১৬ অক্টোবরকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করেন। এরপর ১৯৮১ সাল থেকে প্রতি বছর ‘১৬ অক্টোবর’ বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাইতো বৈধ পন্থায় জীবিক অর্জন এবং আহারকে ইবাদতের মানদণ্ড হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। খাদ্যের যোগান ও সুষম বণ্টনের অপরিসীম।

হালাল জীবিকা উপর্জন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পরিশ্রম ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই বৈধ পন্থা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী খাদ্য উৎপাদনে মিলবে হালাল উপার্জন। আর তাতে খাদ্য ঘাটতির অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে দেশ ও জাতি।

খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ফসল উৎপন্ন ও সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য উৎপাদনে পরিকল্পনা ও সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও সময় মতো বীজ বপন করতে হবে। তাতে উৎপন্ন হবে খাদ্য। আল্লাহ তাআলা মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন-
‘তোমরা যে বীজ বপন কর, তা সম্পর্কে ভেবে দেখছ কী? তোমরা সেটা উৎপন্ন কর, নাকি আমি উৎপন্নকারী? আমি ইচ্ছে করলে সেটা খড়কুটোয় পরিণত করে দিতে পারি। (তা করলে) তখন তোমরা অবাক হয়ে যাবে।’ (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৩-৬৫)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-

‘তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্য। এতে আছে ফলমূল আর রসযুক্ত খেজুর বৃক্ষ এবং খোসাবিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধি গুল্ম।’ (সুরা আর-রহমান : আয়াত ১১-১২)

এ কারণে দুনিয়াতে যত নবি-রাসুলের আগমন ঘটেছে, তাদের সবাই খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। নিজেরা যেমন কৃষি কাজ, পশুপালন করতেন, ঠিক খাদ্য শষ্য উৎপাদনের মাত্রা কিভাবে বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে তাদের অনুসারিদেরকেও দিয়েছেন নানান উপদেশ ও পরামর্শ।

এমনকি হজরত আদম, ইবরাহিম, লুত, শুআইব আলাইহিমুস সালামসহ প্রায় সব নবি-রাসুলগণই পশুচারণ, দুধবিক্রি, কৃষিকাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা মেটানোর সংগ্রাম করে গেছেন।

বিশেষ করে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নিজ হাতে খেজুর গাছ রোপন করে খাদ্য উৎপাদনের অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। বৃক্ষরোপন ও খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে দিয়েছেন যুগের সর্বোত্তম পরামর্শ।

খাদ্যের চাহিদা মেটাতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে কৃষি কাজে উৎসাহিত করেছেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তোমরা জমিনের প্রচ্ছন্ন ভাণ্ডারে খাদ্য অম্বেষণ কর।’

আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় মজুদকৃত খাদ্য ভাণ্ডার থেকে নিজেদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে নির্দেশ দিয়ে বলেন-
‘ যখন নামাজ শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা জীবিকার অন্বেষণে (খাদ্য উৎপাদনের জন্য কাজ-কর্মে) পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)

প্রিয়নবি তার উম্মতের জন্য খাদ্যের মজুত বাড়াতে এবং অভাবমুক্ত রাখতে সব পরিত্যক্ত বা অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের কথা তুলে ধরে বলেন-

‘তোমরা জমি আবাদ কর আর যে ব্যক্তি নিজে (জমি) আবাদ করতে না পারে; সে যেন ভূমিটিকে (তার) অন্য ভাইকে দিয়ে দেয়; যাতে সে (ওই জমি) আবাদ করে ভোগ করতে পারে।’

কুরআন-সুন্নায় খাদ্য মজুত ও কৃষি কাজে উৎসাহ প্রদানের হাজার হাজার বছর পর খাদ্য মজুত বাড়াতে এবং অভাব দূরিকরণে ড. প্যল রোমানির বিশ্ব খাদ্য দিবস পালনের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কেননা এ ঘোষণার শুভ সূচনা হয়েছিল হজরত আদম আলাইহিস সালামের মাধ্যমে। আর প্রায় দেড় হাজার বছর আগে যার চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

সুতরাং ‘কর্ম গড়ে ভবিষ্যৎ, কর্মই গড়বে ২০৩০-এ ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব’- এ স্লোগানে বিশ্ব হোক খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। যুগোপযোগী ও উন্নত পদ্ধতি অবলম্বনে কৃষি কাজের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়া সময়ের দাবি।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।