ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রাধান্য পাবে কে?
আদিকালের কোনো এক সময় মানুষ কন্যা সন্তানকে কুলক্ষণে মনে করতো। ইসলামের আগমনের আগে কন্যা সন্তান জন্মদানই ছিল মায়ের জন্য আজন্ম পাপ। ছেলেরা ছিল সৌভাগ্য ও আভিজাত্যের নিদর্শন। প্রশ্ন হলো ছেলে কিংবা মেয়ে পরিবার সমাজ বা রাষ্ট্রে গুরুত্ব বেশি কার? সামাজিক মর্যাদায় প্রাধান্য পাবে কে? ইসলাম এ বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিয়েছে।
নেপোলিয়ানের কথা দিয়ে বলা যায়, ‘আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব। ’এখানে শিক্ষিত ছেলের কথা বলা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে মনে হয় ছেলের চেয়ে মেয়েরাই পারিবারিক সামাজিক ও জাতীয় প্রয়োজনে মেয়েদের ভূমিকাই বেশি।
যখন কন্যা সন্তান জন্মদানকে অপমান মনে করা হতো। সে সময়ের কথা তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়, তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত। (এমনকি) তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, দুঃখে সে (নিজ) কাওম থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৫৮-৫৯)
কন্যা সন্তান প্রতিটি মানুষের জন্য আল্লাহর রহমত ও নেয়ামত। হাদিসে পাকে কন্যা সন্তানকে পরকালের নাজাতের ওসিলা নির্ধারণ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা বলেন, এক মহিলা তার দুটি মেয়ে সন্তানসহ আমার কাছে এসে কিছু চাইল। সে আমার কাছে মাত্র একটি খেজুরই ছিল। আমি তাকে তাই দিলাম। সে খেজুরটি গ্রহণ করে তা দুই ভাগে ভাগ করে দুই মেয়েকে দিল। নিজে কিছুই খেল না। এরপর সে দাঁড়িয়ে গেল এবং বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছে (ঘরে) প্রবেশ করলে আমি তাঁকে ওই মহিলা এবং তার মেয়েদের সম্পর্কে জানালাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
‘যে কেউ মেয়েদের নিয়ে দুঃখ কষ্টে পড়বে এবং তারেদ প্রতি উত্তম ব্যবহার করবে, সেগুলো তাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
প্রিয়নবি কোনো ছেলে সন্তানের ব্যাপারে এরকম কথা বলেননি। মেয়েরা পরিবার ও সমাজে বেশি নির্যাতনের শিকার হন বলেই প্রিয়নবি মেয়ে সন্তানের ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। কোনোভাবেই ছেলে-মেয়ের মধ্যে কাউকে প্রাধান্য বা গুরুত্ব দেয়া উচিত নয়।
অন্য হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেয়েদের চেয়ে ছেলেদেরকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য বিধান এবং মেয়েদের ওপর ছেলেদের অহেতুক প্রাধান্যদান কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, যার তত্ত্বাবধানে কোনো কন্যা শিশু থাকে আর সে তাকে জীবিত দাফন না করে, তার প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন না করে। আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (আবু দাউদ)
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে কন্যা সন্তানের সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।' (সুরা নিসা : আয়াত ১৯)
ইসলাম মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে, সমাজ-সংসারে তাদের সম্মানিত করেছে। ইসলাম সব সময় নারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়েছে।
মনে রাখা জরুরি
মেয়েরা অলুক্ষুণে নয়, মেয়ের বাবা-মা হওয়াতেও কোনো পাপ নেই। পরিবারে ছেলেদের মতো মেয়েরাও সমান গুরুত্বের দাবিদার। কোনোভাবেই কাউকে কারো ওপর প্রাধান্য দেয়া ঠিক নয়। বরং ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া জরুরি। কেননা রাসুলে আরবি ঘোষণা করেন-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যার তিনটি কন্যা অথবা তিনটি বোন আছে, তাদের সঙ্গে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করলে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে।' (তিরমিজি)
সুতরাং পরিবারের লোকজন ছেলেকে যেমন ভালোবাসেন, তেমনি মেয়েকেও ভালোবাসা উচিত। ছেলে ও মেয়েকে সমান দৃষ্টিতে দেখা উচিত। কারণ এ মেয়ে সময়ের ব্যবধানে সব কিছু রেখে স্বামীর বাড়ি চলে যায়। বাবা-মা, ভাইয়ের প্রতি হৃদয়ের টান অনুভব করে সব সময়। মেয়েরাই পরিবারের সুখে যেমন হাসে তেমনি পরিবারের দুঃখে কাঁদে এবং ব্যথিত হয় বেশি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ছেলে-মেয়ে উভয়ের প্রতি সমান গুরুত্ব দেয়ার তাওফিক দান করুন। মেয়েদের অধিকার রক্ষায় ও তত্ত্বাবধানে দায়িত্বশীলদের সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি