জামাআত শুরু হলে ফজরের সুন্নাত পড়া যাবে কি?
জামাআতে ধীরস্থিরভাবে অংশগ্রহণ করা উত্তম। যারা জামাআতের সঙ্গে নামাজ আদায় করার ইচ্ছা পোষণ করে তারা নামাজের বেশ আগে মসজিদে গিয়ে সুন্নাত নামাজ আদায় করে জামাআতের জন্য অপেক্ষা করে। কেননা জামাআতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায়ে রয়েছে অনেক ফজিলত।
সুতরাং নামাজের জামাআত শুরু কিছু সময় মসজিদে উপস্থিত হওয়া উত্তম। যাতে ধীরস্থিরভাবে সুন্নত নামাজ পড়া যায় এবং তাকবিরে উলার সঙ্গে প্রথম কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা যায়।
কোনো কারণে যদি এমন হয় যে-
ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে কিংবা জামাআত শুরু হয়ে গেছে; সে ক্ষেত্রে ফজরের সুন্নাত নামাজ ছাড়া অন্য সুন্নাত হলে তা না পড়ে জামাআতে শরিক হওয়া জরুরি।
আর যদি ফজরের সুন্নাত নামাজ হয় তখন দেখতে হবে, সুন্নাত পড়ে জামাআত পাওয়া যাবে কিনা। যদি মনে হয় যে, অন্তত এক রাকাআত পাওয়া যাবে তবে পড়ে নেয়াই উত্তম।
ফজরের সুন্নাতের মর্যাদা অনেক বেশি। তবে তা ফরজের চেয়ে বেশি নয়। এ ক্ষেত্রে একটা মনে রাখতে হবে, সুন্নাত পড়তে গিয়ে এবং ফজরের জামাআতে অংশগ্রহণ করতে যদি তাড়াহুড়ো করতে হয় এবং সুন্নাত নামাজও তাড়াহুড়ো করে পড়তে হয় তবে জামাআতে অংশগ্রহণ করাই উত্তম।
তবে সুন্নাত নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে মসজিদের বাহিরের অংশে পড়া অর্থাৎ জামাআতের কাতার থেকে দূরে পড়া। তা হতে পারে বারান্দা কিংবা খুঁটির আড়ালে। কিন্তু জামাআতের কাতারে কিংবা তার কাছাকাছি পড়া মাকরূহে তাহরিমি। যা অনুচিত।
ফজরের সুন্নাত নামাজ আদায়ে হাদিসে অনেক তাগিদ দেয়া হয়েছে। যা অন্য কোনো সুন্নাত নামাজের ক্ষেত্রে দেয়া হয়নি। হাদিস এসেছে-
> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম)
আরও পড়ুন > নামাজে যেসব কাজের গুরুত্ব ও ফজিলত বেশি
> অন্য হাদিসে তিনি আরো বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) নামাজে এত গুরুত্ব দিতেন, যা অন্য কোনো নফল (বা সুন্নাত) নামাজে দেননি।’ (বুখারি, মুসলিম)
> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা এ দুই রাকাআত (সুন্নাত) কখনো ত্যাগ করো না, শত্রুবাহিনী তোমাদের তাড়া করলেও।’ (আবু দাউদ)
> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। তোমরা ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত)-এর ব্যাপারে পুরোপুরি যত্নবান হও। কারণ তা ফজিলতপূর্ণ বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। (মুসনাদে আহমাদ)
সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িসহ অনেক বুজুর্গানে দ্বীন ফজরের দুই রাকাআত ফরজ নামাজ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করেছেন। এমনকি ফজরের ফরজ শুরু হওয়ার পরও অনেকে সুন্নাত আদায় করে ফরজের জামাআতে অংশগ্রহণ করেছেন।
হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, (কূফার গভর্নর) সায়িদ ইবনে আস তাঁকে এবং হুযায়ফা ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ফজরের নামাজের আগে ডাকলেন। তাঁরা (কাজ শেষে) তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ইতিমধ্যে মসজিদে ফজরের নামাজের ইকামত শুরু হয়ে গেছে। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদের একটি খুঁটির আড়ালে ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়লেন। তারপর জামাআতে অংশগ্রহণ করলেন। (শরহু মাআনিল আসার)
হজরত আবু মিজলায রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি ফজরের জামাআত চলা অবস্থায় হজরত ইবনে আব্বাস ও ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করলাম। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জামাআতের কাতারে প্রবেশ করলেন। আর হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়লেন। তারপর জামাআতে অংশগ্রহণ করলেন।’
> হজরত যায়েদ ইবনে আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মসজিদে এসে দেখেন, ফজরের জামাআত চলছে। কিন্তু তাঁর ফজরের দুই রাকাত (সুন্নাত) পড়া হয়নি। তিনি হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার কামরায় তা পড়লেন। তারপর জামাআতে অংশগ্রহণ করলেন।’
> হজরত আবু উবায়দুল্লাহ বর্ণনা করেন, হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু কখনো মসজিদে এসে দেখতেন, ফজরের জামাআত চলছে। তিনি মসজিদের এক কোণায় (ফজরের) দুই রাকাআত (সুন্নাত) পড়ে নিতেন। তারপর জামাতে অংশগ্রহণ করতেন। (শরহু মাআনিল আসার)
ফজরের সুন্নাত নামাজ আদায়ের ব্যাপারে আরো অনেক হাদিস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত ফজর নামাজের আগেই সুন্নাত আদায় করা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফজরের সুন্নাত নামাজ যথাযথভাবে নিয়মিত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম