হালাল উপার্জন ও খাবারের সঙ্গে নেক কাজের সম্পর্ক

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৮

দৈনন্দিন জীবন-যাপন ও ইবাদত-বন্দেগির বিষয়ে কুরআনুর কারিমে আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুলদের যে সব বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, সেসব নির্দেশ শুধু নবি-রাসুলদের জন্যই সুনির্দিষ্ট নয় বরং তা তাদের উম্মতের জন্য পালন করাও আবশ্যক।

নবি-রাসুলগণ মানুষের কাছে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগির করার ব্যাপারে তার নির্দেশের কথা পেশ করেছেন। জীবনের প্রতি কাজই যেন আল্লাহর নির্দেশে হয় সে বিষয়ে অনেক নসিহত পেশ করেছেন। নবি-রাসুলদের নসিহতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ হলো হালাল উপার্জন থেকে রিজিক গ্রহণ সম্পর্কিত।

আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুলদেরকে প্রথমে পূতপবিত্র খাবার খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর আমলে সালেহ তথা নেক আমলের কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুলদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন-

‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার গ্রহণ কর এবং সৎকাজ কর; তোমরা যে কাজ কর আমি সে বিষয়ে বিশেষ অবগত।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ৫১)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবি-রাসুলদের প্রথমে পূতপবিত্র তথা হালাল বস্তু গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন অতঃপর নেক তথা সৎ কাজ করার কথা বলেছেন। আল্লাহর এ নির্দেশ শুধু নবি-রাসুলদের জন্য নয় বরং তা বিশ্ববাসীর জন্য পালন করা আবশ্যক।

এ নির্দেশের কারণেই ইসলাম মানুষকে উপার্জন করে রিজিকের ব্যবস্থা করতে বার বার উৎসাহিত করেছেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার কর এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; যদি শুধু তারই উপাসনা করে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭২)

এ আয়াতেও আল্লাহ তাআলা বিশ্বাসী সম্বোধন করে নির্দেশ দিয়েছেন। আর নবি-রাসুলদের চেয়ে বড় বিশ্বাসী আর কে হতে পারে? আর তা ছিল মুমিন বান্দার প্রতিও নির্দেশ। অতঃপর হালাল বস্তু আহার করে তাঁরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ কৃতজ্ঞতাই হলো সৎ কাজ তথা ইবাদত-বন্দেগি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের নিজেদের কামাইকে উত্তম উপার্জন বলেছেন। হাদিসে এসেছে-

‘নিজের (প্রত্যেক ব্যক্তির) উপার্জিত আয়-ই অতি উত্তম বা বেশি ভালো।’

মানুষ জীবিকা উপার্জনে অলস বসে না থেকে কামাই রোজগার করবে অতঃপর এ খাবার গ্রহণ করার তাওফিক লাভের জন্য তাঁর-ই শুকরিয়া আদায় করবে; তাঁর কাছে কৃতজ্ঞা পেশ করবে। আর এ শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতাই হলো ইবাদত। এ ইবাদত-বন্দেগিই আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন।

বর্তমান সময়ে এমন অনেক মানুষ আছে যারা হালাল-হারামের বিচার এভাবে করে থাকে যে, পশুটা হালাল কিনা যেমন- গরু, ছাগল, মহিষ কিংবা হাস-মুরগি কিনা। আবার এগুলো আল্লাহর নাম নিয়ে সঠিক পদ্ধতিতে জবাই হয়েছে কিনা ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে থাকে।

কিন্তু এ খোঁজ কেউ নিতে চায় না যে, পশু বা প্রাণীগুলো কেনার জন্য যে অর্থ খরচ করা হয়েছে সে অর্থের উৎস কোথায়। যে কুরবানি করা হলো সে কুরবানির পশু কেনা অর্থ হালাল কিনা।

আরও পড়ুন > কুরআনে হালাল খাওয়ার নির্দেশ

কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ার একজন মন্ত্রী কনফারেন্সে হালাল-হারাম প্রসঙ্গে এক মজাদার বক্তব্যে দিয়েছিলেন-

‘আমরা খাওয়ার সময় হালাল বস্তু খোঁজ করি যে, এটা শুকর না গরু; তা যাচাই-বাচাই করি। যদি শুকর হয় তবে খাই না; আর যদি গরু কিংবা মুরগি হয় তবে খাই।

কিন্তু এসব গরু আর মুরগি কীভাবে অর্জিত হয়েছে, বৈধ অর্থে না অবৈধ পন্থায়, তা খোঁজ করতে যাই না। বরং হালাল-হারামের শেষ পর্যায়টা দেখি।

আবার গরু, মুরগি কিনতে পেরেছি এটা ঠিক আছে। কিন্তু তা ঠিকভাবে জবাই হয়েছে কি না- এটাও কেউ কেউ খোঁজ করি, কিন্তু এগুলো যে অর্থ দিয়ে কেনা হয়েছে তা হালাল না হারাম তা দেখি না।’

ঠিক বর্তমান সময়ে মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমনটিই করে থাকে। অথচ এ বিষয়ে করণীয় হলো- হালাল এবং হারাম একেবারে উৎসের শুরু থেকে শেষ ধাপ পর্যন্ত মেনে চলা। আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি এ নির্দেশই করা হয়েছে।

ইসলামের আগমনের আগে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’টি উপায়ে উপার্জন করেছেন। একটি হলো শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন আর অন্যটি হলো ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জন। এছাড়াও হাদিসে বর্ণনা করেছেন-

‘যত নবীগণ আগে অতিবাহিত হয়েছেন, (তাদের) সবাই বকরি চরিয়েছেন (কাজ করেছেন)। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করেছেন, আপনিও? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’! আমিও এক কবিলার ছাগল চরিয়েছি।’

ইসলামের আগমনের আগে প্রিয়নবির শ্রম এবং ব্যবসার মাধ্যমে উপর্জনও প্রমাণ করে যে, কাজ বা শ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করাই উত্তম।

তাছাড়া উত্তম ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দ্বারাও জীবিকা নির্বাহের কথা হাদিসে এসেছে। যে ব্যবসা ইসলামি শরিয়তের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়, সে ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করাও উত্তম। যে ব্যবসায় সুদ, ধোঁকা, প্রতারণা ও নিষিদ্ধ বস্তুর বিনিময় থাকবে না।

সুতরাং মানুষের উচিত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরি-বাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থায় কাজ করা আবশ্যক। আর তা থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ অতি উত্তম।

এ কারণেই হালাল রুটি-রুজিকে ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত করা হয়েছে। যার উপার্জন ও জীবিকা হালাল হবে। আল্লাহ তাআলার দরবারে কবুল হবে তার সব চাওয়া-পাওয়া। সে সব মুমিনের দোয়া ও প্রার্থনা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পূতপবিত্র বস্তু আহারের জন্য সঠিক উপায়ে কাজ কিংবা ব্যবসা করার তাওফিক দান করুন। হালাল বস্তু খেয়ে তার বিধান বাস্তবায়নে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।