আপনি কি লোক দেখানো ইবাদতকারী? বুঝবেন কিভাবে?
শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুষমন। এটা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা। একজন খাঁটি মুসলমানকে বিপথে পরিচালিত করার জন্য বিতাড়িত শয়তান সর্বোচ্চ চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। এমন অনেক ব্যক্তিই রয়েছে, যারা নিজেদের অজান্তে শয়তানের প্ররোচনায় লোক দেখানো ইবাদতকারীতে পরিণত হয়। একটু সতর্ক হলেই এ বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকা যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোক দেখানো ইবাদত সম্পর্কে তাঁর উম্মতকে বেশি সতর্ক করেছেন। প্রিয়নবি বলেন, হে মানুষ! তোমাদের ব্যাপারে ছোট্ট শিরক সম্পর্কে আমার বেশি ভয় হয়। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন ছোট শিরক কী হে আল্লাহর রাসুল!। প্রিয়নবি বললেন, তাহলো রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত।
লোক দেখানো ইবাদতকারীর প্রতি ঘোষণা
কেয়ামতের দিন রিয়াকার তথা লোক দেখানো ইবাদতকারীদেরকে বলা হবে- যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে দুনিয়াতে আমল করেছিলে, যদি বিনিময় গ্রহণ করার মতো কোনো কিছু থেকে থাকে তবে আজ তাদের কাছ থেকে তোমার আমলের বিনিময় গ্রহণ কর।
লোক দেখানো ইবাদতকারী ব্যক্তির আলামাত
রিয়াকারী বা লোক দেখানো ইবাদতকারী ব্যক্তির মাঝে ৪টি বিষয় পরিলক্ষিত হয়। আর তাহলো-
- লোক চক্ষুর অন্তরালে সৎ কাজে অবহেলা করে কিংবা মনোযোগের সঙ্গে আমল তথা ইবাদত করা হয় না। কিন্তু
- মানুষের সামনে পূর্ণ উদ্যম ও আগ্রহের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করে থাকে। আর
- যে কাজ করলে মানুষ প্রশংসা করে, সে কাজ বেশি বেশি করার উদ্যম ও আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। এবং
- যে কাজে তাকে মন্দ বলা হয় তা যত ভালোই হোক না কেন, সে কাজ অতি অল্প করে থাকে।
আরও পড়ুন > কুরআনের তথ্য গোপনকারীরা অভিশপ্ত
লোক দেখানো ইবাদতকারীকে যে নাম ধরে ডাকা হবে
উল্লেখিত কারণে রিয়াকারীর কোনো নেক আমলই কবুল হবে না। আর কেয়ামতের দিন লোক দেখানো ইবাদতকারী তথা এ সব রিয়াকারীদেরকে ৪টি অভিশপ্ত নামে ডাকা হবে। আর তাহলো-
- হে কাফির! অর্থাৎ হে অবিশ্বাসকারী।
- হে ফাজির! তথা হে পাপাচারে নিমজ্জিত ব্যক্তি।
- হে গাফের! তথা হে ধোকাবাজ। এবং
- হে খাছের।
অতঃপর বলা হবে, তোমাদের আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে। তোমাদের প্রতিদানও বিনষ্ট হয়ে গেছে। তোমাদের উপকারে আসতে পারে এমন কোনো নেক কাজ নেই।হে ধোকাবাজ! তোমার নেক আমলের বিনিময় সেই ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় কর, যাকে দেখানোর জন্য ইবাদত-বন্দেগি করেছিলে।
সুতরাং এ কথা গভীরভাবে বিশ্বাস ও স্মরণ রাখা উচিত যে, বেশি বেশি নেককাজ করার চেয়ে তার হেফাজত ও সংরক্ষণ করা অনেক বেশি কঠিন। সুতরাং নেক কাজ কম হোক আর বেশি হোক তা আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠভাবে আদায় করা জরুরি। এ কারণেই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
তোমার আমলকে খাঁটি কর তথা একনিষ্ঠতার সঙ্গে আমল কর। (একনিষ্ঠতার সঙ্গে করা) অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।'
তাই উল্লেখিত আলামত নিজের মধ্যে পরিলক্ষিত হলে, সঙ্গে সঙ্গে তাওবা করে একনিষ্ঠতার সঙ্গে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেকে নিয়োজিত করাই হবে মুমিন মুসলমানের একমাত্র কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানো ইবাদত-বন্দেগি থেকে নিজেদের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। মানুষ শয়তান থেকেও নিজেদেরকে হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর