‘তাবলিগের চলমান সংকট ১ মিনিটেই নিরসন সম্ভব’

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০২ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৮

মাওলানা সাদ কান্ধলভি। তাবলিগ জামাতের প্রধান মারকাজ দিল্লির নিজামুদ্দিনের জিম্মাদার তিনি। তাকে নিয়ে সৃষ্ট চলমান দ্বন্দ্ব-সংকট মাত্র ১ মিনিটের বক্তব্যেই নিরসন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা আরশাদ মাদানি।

সম্প্রতি তিনি ইউরোপ সফরকালে লন্ডনস্থ তাবলিগ জামাতের মারকাজে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন। তার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায়। মাওলানা আরশাদ মাদানির এ ভিডিওটি তাবলিগের চলমান সংকট নিরসনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তাবলিগের আলেম-ওলামা ও সাথীগণ।

গত কয়েক বছর ধরে মাওলানা সাদ কান্ধলভির কিছু আপত্তিকর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী চরম উত্তেজনা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত তাবলিগের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ২০১৮ সালে বাংলাদেশে আসা সত্ত্বেও তিনি বিশ্ব ইজতেমায় অংশ গ্রহণ করতে পারেননি।

মাওলানা আরশাদ মাদানি তার বক্তব্যে জানান, ‘দীর্ঘ দিন ধরে তাবলিগের অনেক আলেম মাওলানা সাদের আপত্তিকর বক্তব্যগুলো দেওবন্দের আলেমদেরকে শুনিয়ে এ ব্যাপারে ফতোয়া চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু বিশেষ বিবেচনায় দীর্ঘ দিন ধরে দেওবন্দ থেকে কোনো ফতোয়া দেয়া হয়নি।

মাওলানা সাদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে যখন তাবলিগের আলেম-ওলামা ও সাথীদের মধ্যে মতোবিরোধ ছড়িয়ে পড়ে তখন দেওবন্দ থেকে মাওলানা সাদের ব্যাপারে ফতোয়া প্রদান করা হয়।

দেওবন্দের ফতোয়া প্রদানের পর মাওলানা সাদের কাছ থেকে একটি রুজু নামা দেওবন্দে আসে। দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ সে রুজুনামার ওপর এ কথা লিখে দেয় যে, ‘ভবিষ্যতে আপনি এ ধরনের (আপত্তিকর) বক্তব্য থেকে বিরত থাকবেন এবং এ বয়ান দ্বিতীয়বার আর পেশ করবেন না’- এ মর্মে দেওবন্দ আপনার রুজুনামা গ্রহণ করেছে।

মাওলানা সাদের রুজুনামা ও দেওবন্দের শর্তসাপেক্ষে গ্রহণ করা রুজুনামার প্রতি উত্তর একজন বাহকের মাধ্যমে দিল্লির নিজামুদ্দিন পাঠানো হয়।

ঠিক সেদিনই একটি সংবাদ আসে যে, মাওলানা সাদ সাহেব ওই দিন ফজরের পর বয়ানের তার দেয়া আগের বয়ানের সমর্থনে বয়ান পেশ করেছেন।

এ সংবাদ শোনার পর দেওবন্দের মুহতামিম রুজুনামার উত্তর নিয়ে পাঠানো ব্যক্তিকে ফোন করে জানতে পারেন তিনি এখনো নিজামুদ্দিন পৌছাননি। তখন তাকে সেখান থেকেই দেওবন্দে ফিরে আসতে বলেন।

মাওলানা সাদ এবং দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেম-ওলামাদের মাঝে দীর্ঘ দিন ধরে এ সংকট চলে আসছে। যা বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতিতে গিয়ে পৌছেছে।

আর এ বিতর্কের কারণে দিল্লির নিজামুদ্দিনের সব পুরনো ও বয়স্ক আলেমগণ নিজামুদ্দিনের মারকাজ ছেড়ে চলে গেছেন। যাদেরকে মাওলানা সাদ সাহেব উস্তাদ হিসেবে স্বীকার করেন; অথচ তাদেরকে ফিরিয়ে আনতেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।

মাওলানা আরশাদ মাদানি তাবলিগের লন্ডন মারকাজে ঘোষণা দেন-

‘দেখুন! আমি মনে করি, মাওলানা সাদ কান্ধলভি যদি মনে করেন যে এ আগুন নেভানো দরকার
তাহলে তিনি এক মিনিটেই তা নেভাতে সক্ষম। তার জন্য দুই মিনিট লাবগে না।
অথচ তিনি এ কথা বলে বেড়ান যে, আমাকে আমির না মানলে জাহান্নামে যাবে।’

আর বিশ্বব্যাপী সব আলেম-ওলামা ও তাবলিগের বিশ্ব মুরব্বিরা বলে আসছেন যে, তাবলিগ জামাতকে শুরাভিত্তিকভাবে পরিচালনা করুন। যেহেতু তিনি তাবলিগের শুরা সদস্যদের একজন; তাই তিনি যদি বলেন, আসুন! শুরাভিত্তিক কাজ করি, তাহলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

মাওলানা আরশাদ মাদানি আরো বলেন, ‘কেউ মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে তাবলিগ জামাত থেকে বের করে দেবে বা তাকে কেউ অপমান করবে; এটা হতে পারে না। বরং তাবলিগতো তারই ঘরের তৈরি জামাত।

বক্তব্যের শেষ দিকে মাওলানা আরশাদ মাদানি জানান যে, আমি নিজামুদ্দিন গেলে মাওলানা সাদ সাহেবের ওখানে চা পান করি। তিনি আমাকে হাদিয়া দেন; কখনো আতর আবার কখনো ঝমঝমের পানি। তাঁর সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। সুতরাং তাঁর প্রতি আহ্বান রইলো তিনি যেন বিষয়গুলো বুঝেন এবং দ্রুত বিরোধগুলো সমাধান করে ফেলেন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।