জীবিকা নির্বাহে খাদ্যশস্য উৎপাদনের গুরুত্ব
ইসলাম বিশ্বমানবতার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। ন্যায় ইনসাফ ও যুগোপযোগী বিধি-বিধান প্রণয়নের মূর্ত প্রতীক। বৈধ পন্থায় জীবিকা উপার্জন, খাদ্য উৎপাদন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের মানদণ্ডও প্রদান করেছে ইসলাম।
হালাল জীবিকা নির্বাহে বৈধ পন্থায় উপার্জন এবং খাদ্য উৎপাদনের বিকল্প নেই। বৈধ পন্থায় খাদ্য উৎপাদনে যেমন মিলবে হালাল উপার্জন আর তেমনি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে সমাজ ও জাতি।
এ কারণেই ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা মানুষকে বৈধ পন্থায় হালাল খাদ্য উপার্জন ও আহারের তাগিদ দিয়েছেন।
জীবিকার জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে হবে। আল্লাহর জমিনে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য বীজের প্রয়োজন। আর আল্লাহ তাআলাই মানুষকে দিয়েছেন ফল ও ফসলের উত্তম বীজ, যা থেকে মানুষ খাদ্যশস্য উৎপাদন করেন।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘তোমরা যে বীজ বপন কর, তা সম্পর্কে ভেবে দেখছ কী? তোমরা সেটা উৎপন্ন কর, নাকি আমি উৎপন্নকারী? আমি ইচ্ছে করলে সেটা খড়কুটোয় পরিণত করে দিতে পারি। (তা করলে) তখন তোমরা অবাক হয়ে যাবে।’ (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৩-৬৫)
আল্লাহ তাআলা আরও উল্লেখ করেছেন, ‘তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্য। এতে আছে ফলমূল আর রসযুক্ত খেজুর বৃক্ষ এবং খোসাবিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধি গুল্ম।’ (সুরা আর-রহমান : আয়াত ১১-১২)
আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার প্রথম মানুষ ও নবি হজরত আদম আলাইহিস সালামকে কৃষি বিজ্ঞানের যাবতীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। তিনি পৃথিবীতে এসে স্বহস্তে কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেছেন।
দুনিয়ার প্রায় অধিকাংশ নবি-রাসুলই নিজেদের জীবিকা নির্বাহে উৎপাদনমুখী কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কেউ খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছেন। কেউ খাদ্যশস্য উৎপাদনে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছেন। কেউ কেউ আবার পশু লালন-পালন করেও জীবিক নির্বাহ করেছেন।
হজরত আদম, ইবরাহিম, লুত, শুআইব আলাইহিমুস সালামসহ সব নবি-রাসুলগণই পশুচারণ, দুধ বিক্রি, কৃষিকাজ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।
বিশেষ করে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নিজ হাতে খেজুর গাছ রোপণ করে খাদ্য উৎপাদনের অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। বৃক্ষরোপণ ও খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে দিয়েছেন যুগের সর্বোত্তম পরামর্শ।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে সাহাবায়ে কেরামকে কৃষিকাজে উৎসাহিত করেছেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তোমরা জমিনের প্রচ্ছন্ন ভাণ্ডারে খাদ্য অম্বেষণ কর।’
কুরআন ও হাদিসের আলোচনা থেকেই বোঝা যায় যে, বৈধ পন্থায় জীবিকা নির্বাহে ইসলাম কৃষিকাজ ও খাদ্যশস্য উৎপাদনে অধিক গুরুত্বারোপ করে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। আর এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করাও ইবাদত।
সঠিক পন্থায় খাদ্য উৎপাদন ও জীবিকা নির্বাহ যে ইবাদত; তা তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন-
‘অতঃপর যখন নামাজ শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা জীবিকা অন্বেষণে (কাজ-কর্মের জন্য) পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)
কোনো ভূমি যেন পরিত্যক্ত বা অনাবাদি না থাকে, সেজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের প্রতি তাগিদ দিয়ে বলেছেন-
‘তোমরা জমি আবাদ কর আর যে ব্যক্তি নিজে (জমি) আবাদ করতে না পারে; সে যেন ভূমিটিকে (তার) অন্য ভাইকে দিয়ে দেয়; যাতে সে (ওই জমি) আবাদ করে ভোগ করতে পারে।’
ফিরে দেখা
বর্তমান সময়ে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব উপহার দিতে মানুষের মাঝে নিরাপদ ও সহজেই খাদ্য এবং কৃষি উপকরণের অবাধ সরবরাহ ও ব্যবহারের লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় বিজ্ঞানী ড. প্যল রোমানি ১৬ অক্টোবরকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য দিবস পালনের প্রস্তাব করেন, যা ১৯৮১ সাল থেকে প্রতি বছর ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ড. প্যল রোমানির এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ এ ঘোষণার শুভ সূচনা হয়েছিল হজরত আদম আলাইহিস সালামের মাধ্যমে। আর যার চূড়ান্ত ঘোষণা করেছিলেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তিনি আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে পবিত্র ঐশী গ্রন্থ আল-কুরআনের নির্দেশ মোতাবেক বৈধ পন্থায় খাদ্যশস্য উৎপাদন ও হালাল জীবিকা নির্বাহের ব্যাপারে বিশ্বমানবতাকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।
পরিশেষে...
যদিও প্রতি বছর প্রতীকীভাবে ১৬ অক্টোবরকে বিশ্ব খাদ্য দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এ উদ্যোগ ও স্পৃহা যেন সবার মাঝে সব সময়, বছরব্যাপী অটুট থাকে। মাঠে ময়দানে যেন বাস্তবায়ন হয় কুরআন সুন্নাহর সঠিক দিকনির্দেশনা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ বিশ্ব মানবতাকে কুরআন ও হাদিসের আলোকে নবি-রাসুলদের অনুসরণ-অনুকরণ ও দিকনের্দশনায় বৈধ পন্থায় হালাল জীবিকা নির্বাহে খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রতি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আইআই