মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মেয়াদ শেষ মঙ্গলবার
মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দেশটিতে সাধারণ ক্ষমার অধীনে অবৈধ প্রবাসীদের প্রত্যাবাসনের সময় শেষ হবে।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ বলছে, কোনোভাবেই অবৈধ অভিবাসীদের থাকতে দেওয়া হবে না। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে।
মালয়েশিয়ার এমন দৃঢ় সিদ্ধান্তের মধ্যে অবৈধ প্রবাসীদের ঘরে ফিরে আসতে হচ্ছে। প্রত্যাবাসন কর্মসূচির নির্ধারিত সময়ে অবৈধ অভিবাসীদের ৩০০ থেকে ৫০০ রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানা পরিশোধ করে দেশে না ফিরলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আগেই সতর্ক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ।
বিচারের মুখোমুখি হওয়া ছাড়া দেয়ালবিহীন এ প্রবাস নামক কারাগার থেকে নামমাত্র জরিমানা দিয়ে এরই মধ্যে মালয়েশিয়া ছেড়েছেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ১০৭ জন বিদেশি নাগরিক।
বিদায়ী বছরের মার্চ থেকে শুরু হওয়া প্রত্যাবাসন কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত নাম নিবন্ধন করেছেন ১১১টি দেশের মোট ২ লাখ ১৬ হাজার ৪৭১ জন অবৈধ অভিবাসী। গত ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত, চারটি দেশ যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক প্রত্যাবাসন করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং নেপালের নাগরিক। তবে কর্মসূচিতে সর্বশেষ কতজন বাংলাদেশি নিবন্ধন করেছেন বা কতজন দেশে ফিরেছেন তা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় যারা দেশে ফিরছেন তাদের বেশিরভাগই কর্মহীন কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রবিহীন। অনেকেই সম্প্রতি কলিং ভিসায় এসে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছেন দেশে।
- আরও পড়ুন
- অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে ২ মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বাংলাদেশি দম্পতির মৃত্যু
- অস্ট্রেলিয়ায় মানবপাচার চেষ্টা, ইন্দোনেশিয়ায় ১২ বাংলাদেশি উদ্ধার
প্রত্যাবাসন কর্মসূচির সমালোচনা
এমন কর্মসূচিকে স্বাগত জানানো হয়েছে কারণ সরকার একটি ‘সাধারণ ক্ষমা’ পদ্ধতি ব্যবহার করে, সমালোচকরা যুক্তি দেন যে এটির এখনও অনেক দুর্বলতা রয়েছে।
নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক আদ্রিয়ান পেরেইরা বলেছেন, অনেক অনথিভুক্ত কর্মী পদ্ধতিগত ব্যর্থতার কারণে এমন হয়ে ওঠে। আমাদের গবেষণা অনুযায়ী, নিয়োগকর্তাদের দ্বারা শোষণ, যথাযথ ডকুমেন্টেশন চ্যানেলের অভাব বা জালিয়াতির কারণে শ্রমিকরা প্রায়ই তাদের আইনি মর্যাদা হারায়।
তিনি বলেন, তাদের জরিমানা দিয়ে শাস্তি দেওয়া এবং ফিরে আসা থেকে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা অন্যায়। এটি একটি নিষ্ঠুর ব্যবস্থা। তাদের জরিমানার টাকা কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পেরেইরা।
এদিকে, অভিবাসী অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল বলেছেন, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন কর্মসূচি কিছু শ্রমিকদের উপকার করলেও, এটি প্রায়শই জোরপূর্বক শ্রমের শিকারদের উপেক্ষা করে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ফিরে আসা অনেক কর্মী মালয়েশিয়ায় থাকাকালীন গুরুতর নির্যাতন ও শোষণের সম্মুখীন হয়েছে।
৩১ ডিসেম্বরের পর কী হবে?
- আরও পড়ুন
- মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে পাসপোর্ট সেবাদানের উদ্যোগ হাইকমিশনের
- সিন্ডিকেটের অপেক্ষায় থেকে পুলিশে ধরা, ফেরত দেওয়া হলো বাংলাদেশিদের
প্রত্যাবাসন কর্মসূচি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার পরে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাপক হারে ধরপাকড়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নতুন বছর থেকে সারা দেশে কার্যক্রম বাড়ানো হবে, বলেছেন কুয়ালালামপুর ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর ওয়ান মোহাম্মদ সাউপি ওয়ান ইউসুফ।
সাউপি বলেন, কর্তৃপক্ষ শুধু অনথিভুক্ত অভিবাসীদের টার্গেট করছে না, নিয়োগকর্তা এবং মালিক যারা তাদের সুরক্ষা দেয় তাদেরও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিবাসন বিভাগ তিনটি গ্রুপের ওপর ফোকাস করে যারা অনথিভুক্ত অভিবাসী, নিয়োগকর্তা এবং যারা সুরক্ষা দেয়। আমাদের লক্ষ্য হলো একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করা যা অবৈধ অভিবাসনের জন্য উপযোগী নয়।
সম্প্রতি দেশটির অভিবাসন মহাপরিচালক দাতুক জাকারিয়া শাবান বলেছেন, বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস থেকে কর্মসূচির মেয়াদ বাড়াতে অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবে যেন আরও অবৈধ অভিবাসী স্বেচ্ছায় ফিরতে পারে।
বেশির ভাগ প্রবাসী প্রতারণার শিকার হয়ে অবৈধ হয়েছে। কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দেশে প্রত্যাবাসন না করে বৈধতা দিয়ে অবৈধ প্রবাসীদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন।
এমআরএম/জিকেএস