যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন, শুভ জন্মদিন

শায়লা জাবীন
শায়লা জাবীন শায়লা জাবীন
প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি....

আজ ১৩ নভেম্বর, বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক, উপন্যাসিক, নাট্যকার, গীতিকার, সুরকার, শিক্ষক শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন, তাকে স্মরণ করছি বৃষ্টিমাখা মেঘে ঢাকা দিনে, আপনি যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন, শুভ জন্মদিন।

হুমায়ূন আহমেদের কাছে আমি এবং আমিসহ নব্বই দশকের বেড়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীরা বিশেষভাবে ঋণী, তিনি শুধু আমাদের পাঠক বানিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি জটিল দুর্বদ্ধ, মনতাস্তিক বিশ্লেষণ খুবই সহজ সরল ভাষায় বলে গেছেন, যা তার আগে আমি কাউকেই এত সহজ করে বলতে দেখিনি। শিখিয়ে গেছেন একটা প্রজন্মকে বৃষ্টিতে ভেজা, আয়েশ করে জোস্না দেখা, রাগ হলে মাথাঠান্ডা রেখে প্রকাশ করা, কষ্ট পেলে বেদনায় নীল হয়েও কিছুই হয়নি এমন ভাব করা, অন্যায় হলে দৃঢ় কিন্তু শান্ত গলায় প্রতিবাদ করা। চিনিয়েছেন কদম ফুল, বুঝিয়ে দিয়েছেন নীল পদ্ম।

হুমায়ূন আহমেদ লিখে গেছেন অনেক অনেক উপন্যাস, গান নির্মাণ করেছেন অনেক নাটক, সিনেমা, সৃষ্টি করছেন কিছু কালজয়ী চরিত্র। তন্মধ্যে মিসির আলী, রুপা, হিমু, রানু, শুভ্র, আনিস, বড় চাচা, মামা, বড় খালা, ফুফু, রহিমার মা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলো সবাই নিজ নিজ মহিমায় স্বপ্রতিভ। সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তার বলিষ্ঠ পদচারণা ছিল, বাংলার আনাচে-কানাচে থেকে অপ্রচলিত লোকগীতিগুলোকেও তুলে এনেছেন, প্রাধান্য দিয়েছেন লালন, হাসন রাজাসহ অনেক বাউল ও লোক সংগীত কেউ। এত বিশাল তার পাঠকগোষ্ঠী আমার মনে হয় বাংলাদেশে আর কোনো লেখকের নেই।

এত কিছুর পরে ও হুমায়ূন আহমেদের যে বিশ্লেষণগুলোর জন্য তাকে তার পাঠকরা আজীবন মনে রাখবেন, তা হলো মানব জাতিকে তিনি খুবই সহজ ভাষায় শিখিয়ে গেছেন ভালোবাসা আর ভালোলাগার পার্থক্য, প্রেম আর মোহ এর পার্থক্য, বিরহ আর কষ্টের পার্থক্য।

দিনের পর দিন এক সঙ্গে থেকেও কোনো কোনো সম্পর্কে কখনো ভালোবাসা জন্মায় না, আবার মাত্র একবার দেখেও একটা সম্পর্ক আজীবন টেনে নেওয়া যায় মনের মাঝে। কিছু কিছু সম্পর্ক শুরুর আগেই এতবেশি হিসেব-নিকেশ থাকে যে সুতা ছিঁড়ে যায়, পরে শুধু টেনে নিয়ে চলা, সীমাহীন ক্লান্তি নিয়ে বয়ে বেড়ানো, আবার কিছু সম্পর্ক শুধু সপ্নীল প্রতীক্ষা বা অপার্থিব ভালোলাগা দিয়ে শুরু হয়, মনের অজান্তেই মনের ঘরে স্থায়ী জায়গা করে নেয়, প্রাপ্তির আশায় অথবা বিরহ বেদনায় কাতর হয়েও পুরো জীবন কেটে যায়।

আচ্ছা, ভালোবাসার কষ্ট আসলে কেমন? যে প্রকৃত প্রেমে পড়েনি বা সত্যিকারভাবে কাউকে ভালোবাসেনি তার পক্ষে বোঝা বা বলা যেমন কঠিন তেমনি বিরহের জ্বালাও যে সবার পক্ষে বুঝে ওঠা অবান্তর।

প্রকৃত ভালোবাসা অপার্থিব।
এই অনুভূতি ব্যাখ্যাতীত....

হুমায়ুন আহমেদ ভালোবাসার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিথির নীল তোয়ালে বইটিতে একটি ময়মনসিংহ গীতি কবিতার উল্লেখ করেছেন....

‘উইড়া যায় রে বনের পঙ্খী
তার পইরা থাকে মায়া।’

আমার মনে হয় এর চেয়ে সহজ কিন্তু গভীর ব্যাখ্যা, ভালোবাসা নিয়ে কেউ দেননি আগে। কোনো কিছুর জন্য বা কারোর জন্য যদি মনের অবচেতনে মন পোড়ায়, কাঁদে, হাহাকার করে ওঠে শূন্যতায় তাহলে সে আটকে গেছে ভালোবাসার মায়ায়।

এখানে, পঙ্খী নয় মায়াটাই হলো ভালবাসা।
এই মায়ার কষ্ট ভয়ংকর কষ্ট...
ছেড়ে যায় না, ধরা দেয় না।
যেন জোস্নার ফুল

যে কষ্ট দুনিয়ার অর্ধেকের বেশি মানুষ না জেনেই একদিন মরে যায়, আর যারা জানতে পারে তারা জীবন্ত লাশ হয়ে বাঁচে। শুধু খুবই বিরল সৌভাগ্যবান কিছু মানুষ কেবল জোস্নার ফুল ধরতে পারে জীবনে, নিঃসন্দেহে খুবই সৌভাগ্যবান তারা।

এমআরএম/জিকেএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]