চলন্তিকা
আচ্ছা বলতো এখনকার মেয়েদের মাথার চুল সব লাল কেন? আরেকটু আগাইয়া বস, এত পিছলাস কেন?
ফ্যাশন নানু, ফ্যাশন...
এখনকার ফ্যাশন চুল লাল, বাদামি, মেরুন, সবুজ, নীল করা
তাছাড়া বেশি কালার, ফয়েল করে অনেকেরই চুল সব গ্রে, কারো কারো এমনিতেই White, তাই রঙ বেরঙের চুল...
এত বিশ্রী লাগে দেখতে, কালো চুল কত সুন্দর, শোন খবরদার কয়ে দিচ্ছি, চুল কোনোদিন লাল রঙ করবি না, কি সুন্দর কালো ঘন চুল তোর
ইসস, তুমি এত সুন্দর করে মাথায় বিলি কেটে চুলে তেল দিয়ে দাও নানু, ঘুম পাচ্ছে..., আম্মু পারে না এমন।
ঈপ্সিতার মাথার চুলে নারিকেল তেল দিয়ে দিচ্ছিলো তার নানু, কোহিনুর বেগম। ঈপ্সিতারা অস্ট্রেলিয়ায় থাকে, চার সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ বেড়াতে এসেছে, মা-বাবা আর বড় ভাই ঈশানের সঙ্গে, ঈপ্সিতা ইয়ার টেন এ পড়ে, আর তার ভাই এইচএসসি শেষ করে এবার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে ল অ্যান্ড ইকোনমিক্স নিয়ে ডাবল ডিগ্রি করছে। ওদের মা ফাহমিদা হোসেন একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে, আর বাবা সানোয়ার ইসলাম ইঞ্জিনিয়ার সরকারি চাকরি করেন। প্রায় ১৪ বছর হলো তারা অস্ট্রেলিয়ায়, ঈশানের বয়স যখন পাঁচ, ঈপ্সিতার ২ তখন তারা স্কিল মাইগ্রেশন নিয়ে অস্ট্রেলিয়া যায়। ছেলের পড়াশোনার জন্য গত তিন বছর তারা দেশে আসতে পারেনি, দুশ্চিন্তায় ছিলো কেমন রেজাল্ট করে, কিসে চান্স পায়..., এইবার চিন্তা ঈপ্সিতাকে নিয়ে, তবুও দেশে এলো। যেহেতু অনেক দিন আসে না। ফিরে যাওয়ার পর ঈপ্সিতাকে নিয়ে উঠেপড়ে লাগবে।
ঈপ্সিতার নানা একরাম হোসেন চাকরি থেকে অবসরে বেশ অনেক বছর, ঢাকায় নিজের একটা চারতলা বাড়ি আছে , দোতালায় নিজেরা থাকেন, অন্যগুলোর ভাড়া, পেনশন আর গ্রামের কিছুই ফসলি জমিজমা দিয়ে তাদের চলে যায়। কখনো যদি ছেলেমেয়েরা শখ করে কিছু দেয় তো সেটা বাড়তি। তাদের দুই ছেলে, দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ও ছোট ছেলে অস্ট্রেলিয়া, আর এক ছেলে আমেরিকায়, ছোট মেয়েটা শুধু দেশে থাকে জামাই নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে, ঢাকাতেই।
কোহিনুর বেগম বললেন তোর মা কীভাবে পারবে? যে ব্যস্ত থাকে, ফোনে কথা বলার সময়তো দেখি হাঁপায় শুধু
একদম মেশিনের মতো জীবন তোদের...
বলছে, ছুটির দিনে তো কাজ থাকে না, শুধু দাওয়াত, শাড়ি আর রান্না নিয়েই থাকে। এত অসহ্য ওই দাওয়াতগুলো...
আম্মুকে একটু বলবা, সারাক্ষণ না দৌড়িয়ে ঘুমাতে...
সে কয়দিন পর অসুস্থ হয়ে যাবে।
আচ্ছা বলবো নে, আজকে কি খাবি বল?
তোমার যা খুশি, তুমি আর দাদি যেটাই রাঁধে সেটাই অনেক মজা হয়। বা ঈশানকে জিজ্ঞাসা করো
হ্যাঁ রে, ঈশান তোর বড় না? ভাই বা দাদা বলতে পারিস না?
ওহ, হ্যাঁ বলি তো ব্রো
ব্রো?
হ্যাঁ, ব্রো (bro) মানে brother
কোহিনুর বেগম কপাল কুঁচকে তাকালো, ঈপ্সিতা হাসছে
ফাহমিদা ঘরে ঢুকলো,
আম্মা তুমি ওঠো তো, সন্ধ্যায় ফারিন আসবে ওর জামাই নিয়ে, রান্না আছে? ঈপ্সিতা, ঈশান কোথায়?
রান্না নিয়ে তোর ভাবতে হবে না, সানোয়ার ফিরছে? ঈশান কোনার ঘরে...
না, এখনো ফেরেনি, চিন্তার কিছু নেই সালমান সাথে আছে ফোন করেছিল সন্ধ্যার আগেই ফিরবে, ওদের বাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা করতে গেছে বসুন্ধরায়, আমরা পরশু রাজশাহী যাব, আচ্ছা আম্মা আজকে ফারিনরা থেকে যাক? ফয়সালকে কত বললাম ঢাকা আসতে, তার বলে ছুটি নাই, তোমার বড় ছেলে ফিরোজের কি খবর? আসবে?
ঈপ্সিতার দাদাবাড়ি রাজশাহীতে, তার দাদা মোসলেহ উদ্দীন সরকারি কলেজের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এখন অবসর নিয়েছেন , আর দাদি জোহরা খাতুন গৃহিণী। তাদের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে অস্ট্রেলিয়া, মেজো মেয়ে কানাডা, ছোট ছেলে ঢাকায় থাকে একটা নামকরা টেলিকমিউনিকেশনে চাকরি করে।
ঈপ্সিতার চুল বড়, তেল দিয়ে লম্বা একটা বেণী করে দিলো কোহিনুর বেগম, মুখে বললো, চুল কাটবি না কিন্তু,
ফারিন থাকলে থাকবে, সমস্যা নাই তো, তোর বাবাকে ডাক, আসরের ওয়াক্ত চলে যাচ্ছে, একটু পরেই মাগরিব
আমি যাচ্ছি নানাভাইকে ডাকতে, ঈপ্সিতা উঠে গেলো...
একরাম হোসেন উঠেছেন দেখে কোনার ঘরের দিকে গেলো
Bro, what's up?
Hey..., do you hear me?
ঈপ্সিতা দরজায় দু’বার knock করলো, এরপর দরজা ঠেলে দেখে ঈশান বিছানায় আধা শোয়া...কানে হেডফোন, চোখ বন্ধ।
একটু জোরেই বললো এইবার, হ্যালো ঈশান
ঈশান চোখ খুলে তাকালো..., বললো
See..., What a patchy weather..., This is called winter here! Totally funny
Hmm, you know Farin aunty is coming today...
Yeah great, but I'm thinking how do I'll pass another 1 week 5 days here! Only 2 days passed
Umm, think about me, I've to stay 3 week 5 days more, you are lucky, you'll go early..
My class will be start but you like Bangladesh
Yup, but I don't like the weather, I only like my both grandparent & Farin aunt. Salman chachchu good too.
Oh yeah, is he coming today?
Think so, chachchu went shopping with Dad. They didn't return yet.
Here wifi also slow...
I was trying to watch footy, always buffering
ফাহমিদার গলার আওয়াজ এলো,
ঈশান, ঈপ্সিতা এদিকে আসো, ফারিন এসেছে...
Let's go bro, Mum calling
আমি আর জীবনেও ঐ বাসায় ফেরত যাব না, সংসারের মুখে লাত্থি, এইটা কোনো জীবন হলো? বেছে বেছে আর মানুষ পাওনি তোমরা, একটা মেরুদন্ডহীন ছাগল ধরে আনছিলা আমার জন্য! কত্ত ছেলে ঘুরতো আমার পিছে, তখন বলছো প্রেম করা পাপ। আর বিয়া দিসো এমন এক বাড়িতে যেখানে পরকীয়া, বকধার্মিক, মিথ্যাবাদী, লোভী, হারামখোর আর ছোটলোক দিয়ে সয়লাব। আমাকে এগুলো শিখায়া বড় করছিলা? এখন আমার এসবের সাথে মানায় চলতে কষ্ট হয় না? আমার কষ্ট কেউ বোঝো? ১০টা বছর আমি কিসের মধ্যে আছি? খালি বলো মানায় নিতে! কিসের সাথে? কোনটার সাথে মানবো? আর যাবোই না ঐ বাসায়।
ফারিন কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে গেছে,
ডাইনিংয়ের চেয়ার ঠেলে বসলো, বসেই বলে উঠলো
কই আমার বাচ্চা দুইটা ঈশান, ঈপ্সিতা ইসস কত্তদিন দেখি না...
ফাহমিদা নিচু গলায় বলছে, আস্তে বল, সামির আসেনি?
শুনবে তো...
কোহিনুর বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন
চলবে...
শায়লা জাবীন
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
এমআরএম/জিকেএস