কোরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন দিবস আজ

রাশিদুল ইসলাম জুয়েল
রাশিদুল ইসলাম জুয়েল রাশিদুল ইসলাম জুয়েল , সিঙ্গাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:৩১ এএম, ০১ মার্চ ২০২৩

রাশিদুল ইসলাম জুয়েল, দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন দিবস আজ। দেশটির পাঁচটি জাতীয় দিবসের মধ্যে এটি অন্যতম। দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ ভালোবাসা এবং সম্মানের সঙ্গে দিনটি স্মরণ করে। এ দিনটি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের জানা প্রয়োজন।

ইতিহাস

দক্ষিণ কোরিয়ার জোসন রাজপরিবারের ৫০০ বছরের শাসন শেষ হয় ১৯১০ সালে জাপান কোরিও উপনিবেশ শাসন চালুর মাধ্যমে। ১৯১০ সালের ২২ অক্টোবর জাপান শাসন ব্যবস্থা চালু করে। প্রথম দিক থেকে জাপান মিলিটারিরা কোরিয়ানদের ওপর লুটপাট খুন-ধর্ষণ অত্যাচার নিপীড়ন নির্যাতন ব্যাপকহারে চালাতে থাকে।

প্রথম ৯ বছরে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় কোরিয়া নাগরিকদের। এর মধ্যে জাপানিরা তাদের সংস্কৃতি ভাষা এবং শাসনব্যবস্থা কোরিয়ানদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করে। ১৯১৯ সালের ২১ জানুয়ারি জোসন রাজপরিবারের শেষ রাজা খোজং মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু সবাই জানতে পারে তাকে বিষাক্ত চা পানের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনটা জোরদার হতে থাকে।

জাপানি উপনিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সে সময়ের প্রধান তিনটি ধর্মের যাজকেরা মোট ৩৩ জন সদস্য মিলে একটি সভার আয়োজন করে। প্রথমে দিনটি ১৯১৯ সালের ৩ মার্চ রাজার সমাধির তারিখের সঙ্গে মিল রেখে করার কথা থাকলেও অধিকাংশের ভোটে ১ তারিখে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল বর্তমান কোরিয়ার রাজধানী সিউলের থাপকোল পার্ক। মার্চ মাসের ১ তারিখ সকাল থেকে মেঘের মতো মানুষেরা এইখানে আসতে শুরু করে। কিন্তু ধর্মযাজক নেতারা এখানে হত্যাকাণ্ড পূর্বাভাস পেয়ে এইখানে উপস্থিত হয় না। কিন্তু তারা তাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ছাত্রদের এরই মধ্যে বিতরণ করে ফেলে।

ধর্মযাজকরা তাদের সবার স্থান পরিবর্তন করে দ্যৈওয়াখোয়ান নামক স্থানে। কিন্তু আন্দোলনটা জোরদার হয় পার্ক থেকে। ধর্মীয় নেতাদের আশা না দেখে ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকে একজন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। মানুষের মুখে মুখে দক্ষিণ কোরিয়ার জয়গান মুখরিত হতে থাকে। জাপানি সৈনিকরা এখানে গুলি চালায়। ছাত্র শিশুশ্রমিক সাধারণ জনগণ অনেকেই শহীদ হয়। মানুষেরা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কিন্তু তাদের হাতের পতাকাকে উজ্জীবিত করে মুখে মুখে মুখরিত হতে থাকে কোরিয়ার জয়গান।

মুহূর্তের মধ্যে এই আন্দোলনে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। জাপানি মিলিটারিদের গুলি লাঠিচার্জে মৃত্যুবরণ করে ৭৫০৯ জন আহত হয় ১৫৮৪৯ জন এবং প্রায় ৪৬৩০৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ কোরিয়া স্বাধীনতার আন্দোলনের কথা বিশ্ববাসীর কাছে উন্মোচিত হয়।

বিভিন্ন দেশ দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থন করতে থাকে। ১৯১৯ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে প্যারিস কনফারেন্সে জাপানের কঠিন সমালোচনা করা হয়। একই বছর এপ্রিলে আমেরিকা সহ জাপানের নেক্কারজনক কাজের নিন্দা জানান। এপ্রিল মাসে চীনে অস্থায়ী সরকার গঠন করে কোরিয়া এবং এই দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

গুরুত্ব

এই স্বাধীনতার ঘোষণা আন্দোলনটি প্রথমে ব্যর্থ হলেও মূলত এটি কোনো ব্যর্থ আন্দোলন ছিল না। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরা স্বাধীনতা আন্দোলন করার সাহস পেয়েছিল। আমরা যদি সহজ কথায় বলতে চাই তাহলে আমাদের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা যেমন প্রথম জয় পেয়েছিলাম, এই আন্দোলন স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছিল। ৩৫ বছরের উপনিবেশ শাসনের পরে ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।

পতাকা উত্তোলন

যেহেতু এটি দক্ষিণ কোরিয়া স্মৃতি বেদনা দিবস সেহেতু পতাকাকে অর্ধনির্মিত অবস্থায় উত্তোলন করতে হয়। প্রথমে পতাকাটি সম্পূর্ণ উত্তোলন করে তারপরে এক পতাকার দৈর্ঘ্য নিচে পতাকাটি টানানো হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রত্যেকটি ভাষা সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রাস্তায় রাস্তায় এদিন অর্ধনিমিত পতাকার সমারোহ দেখা যায়। পতাকার অর্ধনির্মিত রূপকে কোরিয়ান ভাষায় বলা হয় জোগী।

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]