মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে


প্রকাশিত: ০৬:৫৮ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। অনেকে চাকরি করলেও পাচ্ছেন না ন্যায্য মজুরি। রাজধানী কুয়ালালামপুর ছাড়াও কোতাবারু, পেনাং, জহুরবারু, ক্যামেরুন হাইল্যান্ড, ইপো, পেটালিং জায়া, শাহালম, মালাক্কা সিটিতে কর্মরত শ্রকিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের ভয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাহাড় ও জঙ্গলে। অবৈধ বলে নিয়োগকর্তাদের সব জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে তাদের। কথা বললে পুলিশের ভয় দেখিয়ে তাদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।

শুক্রবার সরেজমিনে মালাক্কার একটি কনস্ট্রাকশন সাইডে দেখা মিললো ২০ জনের মতো বাংলাদেশি শ্রমিককের। সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের একজন বৈধ ছাড়া বাকি সবাই অবৈধ।

তাদের মধ্যে নাজমুল নামের এক শ্রমিক এ প্রতিবেদককে জানান, ২০১২ সালে ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বৈধপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান। কুয়ালালামপুরের বুকিত জলিল এলাকায় রেস্টুরেন্টে কাজ করেছেন এক বছর। এসময় কম হলেও ১০ বার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। এখানকার পুলিশও দশবিশ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়।

তিনি আরো বলেন, ঝামেলা এড়াতে রাজধানীর মায়া ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে মালাক্কা প্রদেশে চলে আসি। এখানে কম বেতনের কাজ করলেও শান্তি ছিল। হঠাৎ উওপ্ত হয়ে ওঠে মালাক্কা। সেনাবাহিনীকে নিয়ে চিরুনি অভিযান চালায় সে দেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ। একই বাগানে কাজ করা আমরা ১৪ জন টানা চারদিন পাহাড়ের গুহায় পালিয়েছিলাম। পরিস্থিতির অবনতি দেখে অনেকেই পাশের প্রদেশে পালিয়ে যায়।

পেনাংয়ের একটি কনস্ট্রাকশনে কাজ করা একমাত্র বাংলাদেশি মামুন বলেন, পালিয়ে কাজ করা বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। একদিকে বনে-জঙ্গলে মশা ও পোকামাকড়ের উপদ্রপ, খাদ্য ও বাসস্থানের অভাব। অন্যদিকে, পুলিশের অভিযানে অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রাণ যায়যায়। প্রতিদিন বিভিন্ন যায়গায় সেদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশ অভিযান চালিয়ে শতশত অভিবাসীদের গ্রেফতার করছে।

এদিকে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী বিদেশি কর্মীদের ধরপাকড় না করে কাজ করার সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির মাস্টার বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমবিএএম)। অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এ কে নাথান বলেছেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে কৃষি, উৎপাদন এবং নির্মাণ খাতে নিয়োজিত অধিকাংশ বিদেশি কর্মীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই।

তিনি বলেন, বিদেশিদের অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় আসা কোনোভাবেই উৎসাহিত করা যাবে না। অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, নিয়মকানুন সহজ হলে অবৈধরা নিজেদের বৈধ করে নেয়ার সুযোগ পাবে।

সরকারি-বেসরকারি হিসাবে মালয়েশিয়ায় ২০ লাখেরও বেশি বিদেশি কর্মী বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় কাজ করছেন। ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, দেশটিতে কর্মরত বিদেশি কর্মীদের ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ার, ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ নেপালের, ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ বাংলাদেশের, ৬ দশমিক ৯ শতাংশ মিয়ানমারের, ৫ দশমিক ১ শতাংশ ভারতের, ৩ দশমিক ১ শতাংশ ফিলিপাইনের, ২ দশমিক ৫ শতাংশ পাকিস্তানের, শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থাইল্যান্ডের এবং ৪ শতাংশ শ্রমিক অন্যান্য দেশের।

এ কে নাথান বলেন, বিদেশি কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা সৃষ্টি করবে, বিশেষ করে নির্মাণখাতে কর্মী হিসেবে স্থানীয়দের আগ্রহ কম। বিদেশি কর্মী ছাড়া মালয়েশিয়ার নির্মাণ খাত এগিয়ে নেয়া অসম্ভব। বিদেশি কর্মী ছাড়া ব্যবসায়ীরা এ খাতে কোনো প্রকল্প নেয়ার কথা ভাবতে পারেন না বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় কর্মী নিয়োগ বাড়াতে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এ কে নাথান বলেন, উদ্যোক্তারা তো স্থানীয় কর্মী পাচ্ছেন না। আমরা সমাধান চাই, সমস্যা বাড়াতে চাই না বলে জানান ব্যবসায়ী এ নেতা। বলেন, ঠিকাদাররাও নিয়ম মেনে কাজ করতে আগ্রহী, সে জন্য সরকারের উচিত এ প্রক্রিয়া সহজ করা।

জহুরবারুর বাংলাদেশি কমিউনিটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এমজে আলম বলেন, মালয়েশিয়া সরকার কয়েক বছর পরপর অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয়। এই সুযোগটি নিতে অবৈধরা বেশির ভাগ পাহাড় জঙ্গলে পড়ে থাকেন।

তিনি বলেন, হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশির হাতে পাসপোর্ট বা অন্য কোনো ট্রাভেল ডুকুমেন্টস নেই। বৈধ হওয়ার সুযোগ নিতে হলে প্রথমেই তাদের পাসপোর্ট লাগবে। পাসপোর্ট পেতে হলে তাদের আসতে হবে বাংলাদেশ হাইকমিশনে। এমআরপি পেতে হলে স্ব-শরীরে হাইকমিশনে আসা বাধ্যতামূলক। তবে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শহর থেকে পুলিশের দৃষ্টি ফাঁকি দিয়ে হাইকমিশনে আসা ঝুঁকিপূর্ণ।

যেহেতু অবৈধরা পাসপোর্ট করতে স্ব-শরিরে আসতে পারছেন না হাইকমিশনের উচিত প্রদেশওয়ারি মোবাইল ক্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট করার দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।

এদিকে মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের বৈধ হওার ঘোষণা দিলেও এর আওতায় অনেকেই বৈধ হওয়ার সুযোগ নেই। সরকার কয়েকটি ক্রাইটেরিয়ার মাধ্যমে বৈধ করণের প্রক্রিয়া চালিয়েছে।

বিএ

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]

আরও পড়ুন