গ্রিসে যে প্রক্রিয়ায় বৈধ হতে পারবেন বাংলাদেশিরা
নানা জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত অভিবাসীদের সুখবর দিয়েছে দেশটির সরকার। এরই মধ্যে ১৫ হাজার বাংলাদেশিকে পাঁচ বছরের জন্য অস্থায়ী আবাসন ও কাজের অনুমতি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ দূতাবাস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে অভিবাসন বিষয়ে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক আইন (নং- ৪৯৫৯/২০২২ ও আন্তঃমন্ত্রণালয় ডিসিশন নং ৭১৬৬৫৯; ২৯/১১/২০২২) অনুযায়ী ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বা এর আগে থেকে যেসব বাংলাদেশি দেশটিতে অনিয়মিতভাবে বসবাস করছিলেন, তাদের বৈধতা দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে।
এই প্ল্যাটফর্মে আবেদনের জন্য নিম্নোক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হবে:
আরও পড়ুন: গ্রিসে অনিয়মিত বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর
ক) দুই বছরের বেশি মেয়াদযুক্ত বাংলাদেশি পাসপোর্ট (আবেদন করার দিন পর্যন্ত)
খ) ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বা এর আগে থেকে গ্রিসে অবস্থানের প্রমাণপত্র
গ) গ্রিসের একজন চাকরিদাতার প্রদত্ত নিয়োগের কাগজপত্র
ঘ) আবেদন ফি (পারাবোলো) ৭৫ ইউরো (নির্ধারিত ২১৪৮ কোডে) জমা করে তার কোড সংগ্রহ
ঙ) নিজ নামে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর (মোবাইল নম্বরে প্রয়োজনীয় বার্তা ও কোড যাবে)
চ) ব্যক্তিগত, সক্রিয় ই-মেইল আইডি (ই-মেইলে প্রয়োজনীয় বার্তা ও কোড যাবে)
বৈধতা দেওয়ার এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে গ্রিসে বসবাসরত উপযুক্ত এবং আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকরা দূতাবাস থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নিজ নিজ পাসপোর্ট সত্যায়িত করার মাধ্যমে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।
দ্বিতীয় ধাপে দূতাবাসে নিবন্ধন নেওয়া বাংলাদেশিদের গ্রিক সরকারের চালু করা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রাথমিক তথ্য দিয়ে বৈধতার জন্য আবেদন চালু হবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যাদের আবেদন চালু হয়েছে দূতাবাস ক্রমানুযায়ী তাদের তালিকা প্রতি সপ্তাহে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে (Bangladesh Embassy in Athens বাংলাদেশ দূতাবাস, এথেন্স) প্রকাশ করবে।
তৃতীয় ধাপে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশিদের বৈধকরণের জন্য চালু করা ট্যাবে প্রবেশ করে নাম ও পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে প্রোফাইলে ঢুকবেন এবং তার পাসপোর্টের সত্যায়িত অনুলিপি, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বা এর আগে থেকে গ্রিসে অবস্থানের প্রমাণপত্র ও সম্ভাব্য একজন চাকরিদাতার নিয়োগের ইচ্ছাপত্র আপলোড করবেন এবং তার নামে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর, নিজ ই-মেইল আইডি, নির্ধারিত ২১৪৮ কোডে জমা দেওয়া ৭৫ ইউরো আবেদন ফি (পারাবোলো) এর কোড আবেদনপত্রের নির্ধারিত ঘরে প্রবেশ করাবেন।
আরও পড়ুন: গ্রিসে বৈধতার আওতায় আসছেন অনিয়মিতরা
এর মাধ্যমে আবেদন সম্পন্ন হলে সাবমিট করতে হবে। আবেদন সাবমিট করার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তার নিজ ই-মেইল আইডিতে বৈধতা লাভের জন্য আবেদনের সনদ পাঠানো হবে যা স্মার্ট কার্ড রেসিডেন্স পারমিট ইস্যু না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প রেসিডেন্স পারমিট হিসেবে কার্যকর থাকবে। এই বিকল্প রেসিডেন্স পারমিট দিয়ে আবেদনকারী যেকোনো ধরনের চাকরি লাভসহ সবধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন এবং বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করতে পারবেন।
আবেদনকারীদের সুবিধার্থে ও সতর্কতা
ক) অনলাইনে আবেদন একটি সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়া যা আবেদনকারী নিজেই অথবা ক্ষেত্র বিশেষে ইংরেজি জ্ঞান সম্পন্ন একজন প্রবাসীর সহায়তায় সম্পন্ন করতে পারবেন। এজন্য কোনো উকিলের প্রয়োজন নাই। দূতাবাস যেকোনো সময়ে এ বিষয়ে সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
খ) আবেদনকারীরা অবশ্যই নিজ নামে নিবন্ধিত সিমের নম্বর ও নিজ ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার করবেন। কারণ, গ্রিক কর্তৃপক্ষ তা যাচাই/ভেরিফাই করবে।
এছাড়া, কোনো অবস্থাতেই নিজ মোবাইল নম্বর এবং নিজ ই-মেইল ব্যতীত অন্য কারো মোবাইল নম্বর এবং ই-মেইল ব্যবহার করা যাবে না। করলে ভবিষ্যতে প্রতারিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
গ) যেহেতু ছয় মাস ধরে এই বৈধকরণ প্রক্রিয়া চলবে তাই কোনো ধরনের তাড়াহুড়া না করে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নির্ভুলভাবে আবেদন সম্পন্ন করুন।
ঘ) নিজ নাম ও পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে হবে বা করা যাবে তাই নিজ নাম, পাসপোর্ট নম্বর, মোবাইল নম্বর এবং নিজ ই-মেইল অ্যাড্রেসসহ কোনো ধরনের তথ্য ও দলিলপত্র কাউকে দেবেন না। কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অতি উৎসাহী হয়ে যেন কোনো দালাল বা প্রতারক দ্বারা প্রতারিত না হোন এবং বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও প্রতারক চক্রের প্ররোচনার শিকার যাতে না হতে হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
গ্রিক সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। এ বিষয়ে দূতাবাস থেকে নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য দেওয়া অব্যাহত থাকবে।
১। আবেদন করার দিন পর্যন্ত যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ দুই বছরের বেশি সময় রয়েছে এবং লিগালাইজেশন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আগ্রহী, তারা দূতাবাসে এসে নাম নিবন্ধন করে সত্যায়ন ফি দুই ইউরো ও ব্যাংক ফি দুই ইউরো মোট চার ইউরো জমা করে পাসপোর্টের কপি সত্যায়িত নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।
আরও পড়ুন: গ্রিসপ্রবাসী সিআইপি আল আমীনের সফলতার গল্প
নিবন্ধনের জন্য যা লাগবে
(১) মূল পাসপোর্টের দুটি ফটোকপি
(২) ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বা এর আগে থেকে গ্রিসে অবস্থান সংক্রান্ত প্রমাণপত্রের কপি
(৩) গ্রিসের একজন চাকরিদাতার চাকুরির নিশ্চয়তাপত্রের হতে ইস্যুকৃত কপি
(৪) নিজ নামে নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরের প্রমাণপত্রের কপি
৫) ব্যক্তিগত সক্ৰিয় ই-মেইল আইডির তথ্য সংবলিত কপি দূতাবাসে জমা দিতে হবে
(ক) গ্রিসসস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ইস্যুকৃত পাসপোর্ট অথবা পাসপোর্টের আবেদনের রিসিট কপি (ডেলিভারি স্লিপ) অথবা দূতাবাস থেকে ইস্যুকৃত বিভিন্ন সার্টিফিকেট বা অন্যান্য রেকর্ড অথবা দূতাবাস থেকে ইস্যুকৃত জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা
(খ) গ্রিসে অবস্থানের অন্যান্য রেকর্ডপত্র, যেমন আফিমি/আমকা/ভ্যাক্সিনেশন কার্ড/পুলিশ রিপোর্ট/নিজ নামে ক্রয়কৃত মোবাইল সিম কার্ডের তথ্য/নিজ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য/হাসপাতালের চিকিৎসাপত্র/কোর্টের আদেশপত্র/বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর রিসিট /আন্তর্জাতিক সুরক্ষা সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ইত্যাদি দাখিল করা যাবে।
গ্রিসের একজন সম্ভাব্য চাকরিদাতার প্রদত্ত চাকরির ইচ্ছাপত্র, গ্রিক সরকারের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, থেকে আবেদনকারীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, কাজের ধরন বা কাজের ক্ষেত্র উল্লেখ করে চাকরিদাতা বা তার ব্যক্তিগত লগস্তি কর্তৃক তার ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত myTaxisNet (ক্লিদিয়াআরিকমস) থেকে ইস্যু করতে হবে (নমুনা কপি সংযুক্ত)। এটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল কিউ-আর কোড সংবলিত একটি সার্টিফিকেট, যার সঠিকতা যেকোনো সময় যাচাই করা যায়।
৪। আবেদন ফি (পারাবোলো) ৭৫ ইউরো (নির্ধারিত ২১৪৮ কোডে) অনলাইন ব্যাংকে জমা করার পর, বিশেষ কোডসহ রশিদ পাওয়া যাবে, যা একজন আবেদনকারী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করবেন।
এমআরএম/জিকেএস