বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি
অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক। বিকশিত হয়েছে ৫ দশকে দুই দেশের মধ্যে বহুমুখি সম্পর্ক। আগামীতে এই সহযোগিতাকে অনন্য উচ্চতায় নিতে সচেষ্ট দুই দেশ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া।
এ স্বীকৃতির ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বুধবার (৩০ মার্চ) রাজধানী কুয়ালালামপুরের জেডব্লিউ মেরিয়ট হোটেলে বাংলাদেশ হাইকমিশন এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
উভয় দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পরে কেক কাটা ও বাংলাদেশের শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- মালয়েশিয়ার সিনিয়র মিনিস্টার (ওয়ার্কস) ফাদিল্লাহ ইউসুফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার অনেক পুরোনো বন্ধু রাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, উভয় দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। উভয় দেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়া সফররত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ভিশন ২০৪১ রূপকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হতে চলেছে। এ উন্নতিতে বন্ধু রাষ্ট্র মালয়েশিয়ার গুরুত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার অবস্থান নবম। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, হালকা যন্ত্রপাতি ও চামড়াজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করছে। বাংলাদেশ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৩০৬.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করেছে, একই সময়ে ১,৫৭৬.৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। বাণিজ্যের এই গ্যাপ উত্তরণ করার সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একশটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে, অনেকগুলোর কাজ প্রায় শেষের পথে। এসব ইকোনমিক জনে মালয়েশিয়া ফার্নিচার, কৃষিপণ্য প্রসেসিংসহ সংশ্লিষ্ট শিল্প খাতে বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে। বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাস নির্মূলে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া এক সাথে কাজ করছে যা আগামীতে আরও জোরদার করে উভয় দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের সাধারণ কর্মী, দক্ষ কর্মী ও এক্সপার্টের পাশাপাশি ২৮ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
তাদের মাধ্যমে বিস্তৃত হচ্ছে দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধন। এছাড়া প্রতিবছর দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি মালয়েশিয়া ভ্রমণে আসেন। অর্থাৎ বাংলাদেশিরা মালয়েশিয়াকে পছন্দ করে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সৎ, পরিশ্রমী ও দক্ষ বাংলাদেশি কর্মীর শ্রম।
এসব উন্নয়ন কাজ করতে অনেক বাংলাদেশী কর্মী জীবনদান করেছেন। এসব কর্মীরা শুধু মালয়েশিয়ার নয় নিজ পরিবারের নিকট অর্থ পাঠিয়ে নিজ দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখে যাচ্ছে। এ সুযোগ দেবার জন্য তিনি মালয়েশিয়ার উদ্যোক্তা, সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশী কর্মীদের কোম্পানি পরিবর্তন করার ও বৈধ হবার সুযোগ দিয়ে, করোনা ভ্যাকসিন দিয়ে ও সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশনের (সকসো) সুযোগ দিয়ে করনাকালে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। এখন আমরা আশাকরি উভয় দেশের ও আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন পরিপালন করে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে মালয়েশিয়া।
আমি আশ্বস্ত করছি যে মালয়েশিয়ার উন্নয়নে মালয়েশিয়ার কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী কর্মী দিতে আমরা প্রস্তুত আছি। ২০১৮ সালে বন্ধ হওয়া কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া পুনরায় নতুন করে শুরু করার জন্য গত ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিযায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার তার স্বাগত বক্তব্যে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মালয়েশিয়া সরকারের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, সরকারের দিকনির্দেশনায় দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করছে হাইকমিশন। পাশাপাশি মালয়েশিয়া সরকারের সহযোগিতায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবাও নিশ্চিত করছে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মালয়েশিয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবস ও ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বাংলদেশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ, বাংলাদেশ সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতা ও হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এমআইএইচ/জিকেএস