শুধু ব্যানার হাতে নারীমুক্তির নীতিকথা মূল্যহীন

আম্বিয়া অন্তরা
আম্বিয়া অন্তরা আম্বিয়া অন্তরা , যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশিত: ০২:৪৩ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

সমাজ সংস্কারে নারীদের অবদান থাকলেও কালের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে এই নারীরাই পৃথিবীর তাবৎ ফাঁদে ফেঁসেছে। নারী অধিকার নামে তাদের কর্মকাণ্ড শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ। নারীর ক্ষমতায়ন যে নারীমুক্তি নয় তা বাংলাদেশে প্রমাণিত। বুঝতে হবে নারী ক্ষমতায়ন হলেই নারীমুক্তি আসে না।

একটি ভূখণ্ডের সমস্ত মানুষের সঙ্গে নারীমুক্তি জড়িত। সাধারণত নারীবাদীরা এ সংক্রান্ত কোনো ইস্যু উপস্থাপন হলে তারা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে। তাদের এই আন্দোলন কি আদৌ নারীমুক্তিকে জাগিয়ে তোলে? আসলেই নারীমুক্তি কী?

সাধারণত বাংলাদেশের নানা জায়গায় যে নারীরা ক্ষমতাসীন তাদের অধিকাংশই সচেতন, শৃঙ্খলিত। অথচ যে নিয়মে সমাজ কিংবা রাষ্ট্র চলছে সে নিয়মে পুরুষতান্ত্রিক ভোগবাদী সংস্কৃতির ধারক তারা।

ইতিহাস বলে তাদের চেতনা ছিল নানা প্রকার লোভ লালসায় নিমজ্জিত। বলা চলে তাই প্রকৃত মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ হওয়ার সুযোগ নেই। চেতনাগতভাবে সেই পুরোনো দাসত্বের ধারক তারা।

জানা গেছে, নরসিংদী জেলার বেশকিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নারী। তাতে ওই জেলার নারীদের তেমন কোনো সুবিধা বেড়েছে বলে মনে হয় না।

তবে আনন্দের সংবাদ হচ্ছে নারীরা ক্ষমতায়ন শিখছে মাঠে দাঁড়িয়ে না থেকে জায়গা দখল করছে। এখন কথা হচ্ছে পণ্য বা ভোগ চিন্তায় বিকশিত নারী যেখানেই থাক তার স্থান পরিবর্তিত হবে না। এটাও মাথায় রাখা জরুরি যে এগুলো নারী কিংবা পুরুষকেন্দ্রিক উন্নয়ন না ভেবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবলে আরও সহজ হবে বুঝতে।

বেগম রোকেয়া নারীমুক্তি বলতে যা বুঝিয়েছেন সেই চিন্তায় নারী বিকশিত হতে না পারলে শুধু পদ দখল করা কিংবা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করা নারীর সংখ্যাই বাড়বে, বাস্তবে তা থেকে কল্যাণকর কিছু আশা করা হবে মূল্যহীন। বেগম রোকেয়া চেয়েছিলেন দাসত্ব থেকে নারীকে মুক্ত করতে।

তার সময় নারী যে অবস্থানে ছিল আজ সেটা থেকে নারীর তেমন কোনো উন্নয়ন ঘটেনি অর্থাৎ মনস্তাত্ত্বিক তেমন উন্নয়ন ঘটেনি। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিছু রূপসজ্জা কিংবা দাসত্বে লুটিয়ে দিয়ে পদ দখল করা ব্যতীত। পার্থক্য হলো সেদিন তারা ঘরে ছিল আজ বাইরে।

তখন শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে ছিল আজ এগিয়ে। সেদিন উকিল, ব্যারিস্টার হয়নি আজ হয়েছে, এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানও হয়েছে। কিন্ত চেতনার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। স্বাভাবিকভাবে সমাজ অভ্যন্তরে আলোর চেয়ে অন্ধকারের দিকে গতিময়তা প্রবল। বলা চলে রাজনৈতিক ব্যর্থতাই এর জন্য প্রধানত দায়ী।

বাংলাদেশে নারী শিক্ষা-দীক্ষায় যথেষ্ট এগিয়েছে এবং তাদের অধিকাংশই সামাজিক উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। ঐতিহাসিক বিবর্তনের সূত্র অনুযায়ী উৎপাদনের সঙ্গে ব্যাপকহারে যুক্ত হলেই নারী মুক্তি সম্ভব। বাংলাদেশে নারীমুক্তির ক্ষেত্রে এ সূত্র আংশিক কাজ করছে আর বাকিটা নিপতিত হয়েছে ধর্মীয় গোঁড়ামির মাঝে।

একদিকে প্রকৃত জ্ঞানের অভাব আর অন্যদিকে প্রবল ধর্মীয় অন্ধত্ব বিবর্তনের সূত্রকে হার মানিয়েছে। এমন এক ভয়ংকর চেতনাহীন উন্মাদনার পরিবেশ বিরাজমান যে কারণে হয় নারীকে ধর্মের আবরণে যেতে হচ্ছে না হয় সে পরিণত হচ্ছে যৌনদাসীতে। মুক্ত নারী হলেই তাকে পড়তে হয় পারিবারিক ও সামাজিক কোপানলে। এই শৃঙ্খলে আবদ্ধ উপমহাদেশের নারী।

অথচ বেগম রোকেয়া চেয়েছিলেন নারীরা যেন এগুলো থেকে চেতনাগতভাবে মুক্ত হয়। আমাদের সমাজে নারীদের এসব থেকে মুক্ত হওয়ার তেমন কোনো প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় না।

এখন উচিত হবে তারা নিজেদেরকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে মুক্তচিন্তার করে গড়ে তুলবে। সমাজে কিভাবে তারা দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। উদাহরণ হিশেবে পশ্চিমা দেশগুলোর নারীদের থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

পড়াশোনা করে নিজের অবস্থান কিংবা সমাজের উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। শুধু ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে নারীমুক্তির কথা বললে তা হবে মূল্যহীন। যা অতীতেও হয়ে এসেছে।

এমআরএম

লেখক ও পর্যটক (নিউইয়র্ক প্রবাসী)

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]