নীরবে ফিরছে প্রবাসীর বাক্সবন্দি লাশ! ১ বছরে আমিরাতে দাফন ২৯২

মুহাম্মাদ ইছমাইল
মুহাম্মাদ ইছমাইল মুহাম্মাদ ইছমাইল , আরব আমিরাত প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:০১ পিএম, ০৭ জুলাই ২০২১
ছবি: সংগৃহীত

এক সময় বিদেশের মাটিতে কোনো প্রবাসী মারা গেলে শোরগোল পড়ে যেত। লাশ দেশে পাঠানো পর্যন্ত প্রবাসীদের মাঝে বেদনাবিধুর উৎকণ্ঠা কাজ করত। করোনা পরিস্থিতি এই অবস্থার পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ভাইরাসটির কারণে লাশ দেশে পাঠাতে বিপত্তির কারণে পরিবারের অনুমতি নিয়ে দাফন করা হচ্ছে পরবাসে।

এতে করে শত শত প্রবাসীকে শেষবারের মতো দেখা থেকেও বঞ্চিত হন স্বজনরা। তবে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে যাওয়ায় আবারও প্রবাসীদের লাশ দেশে পাঠানো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জাতীর সোনার ছেলে দেশে ফিরছে বাক্সবন্দি লাশ হয়ে।

জীবন জীবিকার তাগিদে ১৯৯৩ সালে আমিরাত আসেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা ইউনিয়নের রহিম উল্ল্যাহ (৬২)। গত ১০ জুন অসুস্থ হয়ে শারজা কুয়েতি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুন মারা যান রহিম উল্ল্যাহ।

মরহুম রহিম উল্ল্যাহর স্বজন মন্জুর আর মান্নান জানিয়েছেন, ২৯ জুন বুধবার সকালে ২৮ বছরের প্রবাস জীবনে শেষে দেশে ফিরেছে তার বাক্সবন্দি লাশ। রহিম উল্ল্যাহর ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে।

হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের সালা উদ্দিন (৩৫)। বছরের শুরুতে ছুটি কাটিয়ে আমিরাতে ফিরে আসার ১ মাসের মাথায় শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরীক্ষা করে জানা যায় করোনা নেগেটিভ। শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন না দেখে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিমান টিকিটও কিনেন ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ১টার ফ্লাইটে।

আমিরাতে থাকা তার স্বজন জাসেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সালাউদ্দিন বিমানের টিকিট নিয়ে দেশে ফেরার কথা থাকলেও দেশে ফেরার তারিখেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ফ্লাইটের দিন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্থানীয় খলিফা হাসপাতালে ভর্তির পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৮টায় তার মৃত্যু হয়।

করোনা শনাক্ত হওয়ায় স্থানীয়ভাবে তার লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বঞ্চিত হয় শেষবারের মতো দেখা থেকে। আমিরাতের আজমানে দীর্ঘ ১৫ বছর কর্মরত ছিলেন সালাউদ্দিন। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে রেখে গেছেন।

জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত এক বছরে স্থানীয়ভাবে সমাহিত হয় ২৯২ জন প্রবাসীর লাশ। জুলাই থেকে জুন এই এক বছরে আবুধাবি দূতাবাসের হিসেব অনুযায়ী, দেশটির রাজধানী ও আশপাশে স্থানীয়ভাবে সমাহিত হয়েছে ১৩৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশির লাশ। এর মধ্যে ২৩ জনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং ১১০ জন মারা গেছেন করোনায়।

দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে দাফন হয়েছে ১৫৯ জন প্রবাসীর লাশ। এর মধ্যে ১২৭ জনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আর গত এক বছরে দেশে ফিরেছে ৩২৭ জন প্রবাসীর লাশ।

এমআরএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]