প্রবাসীর প্রেম : তাহলে কি সত্যিই অভিনয় ছিল!
কোনো একদিন দেখা করতে গেলাম নাদিয়ার সঙ্গে। তাকে জিজ্ঞেস করব আমাকে এভাবে ছেড়ে আসার কারণ কি। আমাকে দেখে নাদিয়া প্রথমে সামনে আসত চাইল না। বাড়ির অন্যরাও আমাকে তেমন পাত্তা দিল না। আমি একজন আগন্তুকের মতো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
নাদিয়ার কাছে খবর পাঠালাম দুইটা কথা বলেই চলে যাব এবং এটাই হবে ওর সঙ্গে আমার শেষ কথা। অনেকক্ষণ পর নাদিয়া এলো। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন আমার হাতে সময় নাই।
যেন আমি অপরিচিত কেউ এমনভাবে সে বলল। তাহলে এতদিনের ভালোবাসা সবই কি অভিনয় ছিল। সবই কি মিথ্যা। নিজেকে শান্ত করে যতটা সম্ভব গলার স্বর নিচু করে বললাম নাদিয়া তুমি কি সত্যি ডিভোর্স চাও!
আমি যতটা গলার স্বর নিচু করে বলেছি ও তার চেয়েও বেশি উচ্চস্বরে বলল ‘তুই বুঝছ না। তোর যদি লজ্জা শরম বলতে কিছু থাকত তাহলে তুই আমার সামনে এভাবে এসে দাঁড়াতি না।’
তার মুখের ভাষা শুনে মনে হলো কেউ একজন আমাকে হাতুড়ে দিয়ে পেটাচ্ছে। এই মুহূর্তে মন চাচ্ছে শূন্যে মিশে যাই, আমার মুখ কাউকে দেখাতে ইচ্ছে করছে না। তবুও ভগ্ন হৃদয়ে জিজ্ঞেস করলাম; তাহলে আমাকে যে ভালোবাসতে সবকি কি অভিনয় ছিল।
এবার আরো উচ্চশব্দে বলল ‘হ্যাঁ সবই অভিনয় ছিল আমি তোকে কখনো ভালোবাসিনি আর ভালোবাসতেও পারব না।’ তার কথা শুনে আমার দু’চোখ গড়িয়ে গরম অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল।
যতটা সম্ভব অশ্রুটা লুকিয়ে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে তুমি আমার সঙ্গে ঘর করতে চাচ্ছ না। নাদিয়া তাচ্ছিল্য করে বলল ‘তোর সঙ্গে সংসার! তোর সাথে সংসার না করে বিষ খেয়ে মরে যাওয়া ভালো’।
আমি জবাব দিলাম এই যদি তোমার মনের কথা হয় তাহলে আমি তোমাকে মুক্তি দেব। তবে আমাকে এত ঘৃণা করার কারণটা বলো প্লিজ।
‘নাদিয়া বলল তোর ফ্যামিলির সবার টর্চার আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আর ভালোবাসতে হাজারটা কারণ লাগে কিন্তু ঘৃণা করতে একটা কারণই যথেষ্ট। আর শোনো আর যদি আমাদের বাড়িতে আসো তাহলে তোর নামে নারী নির্যাতনের মামলা করব। এই কথা বলে নাদিয়া ঘরে ঢুকে গেল।’
ও চলে যাওয়ার পর আমি হতভম্ব হয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। নড়াচড়া করার ক্ষমতা আমার লোপ পেয়েছে মনে হচ্ছে। পা দুটির ওজন কয়েকশো টন। কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম তা জানি না।
চোখের লবণাক্ত জল গড়িয়ে মুখে মুখে লাগতে একটু হুশ ফিরে আসে। মনে হলো আমি পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে। মাতালের মতো ঢলতে ঢলতে সামনে হাঁটতে লাগলাম।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা আমার আমাকে বিমর্ষ অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেল। সে জানতে চাইল কি হইছে! আমি কোনো জবাব দিলাম না। কি করে বলব আমার স্ত্রী আমার কাছে থেকে ডিভোর্স চায়।
ওরা জানে আমি স্ত্রীর ভালোবাসার জন্য এক লাখ টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে চলে এসেছি। এখন যদি শুনি আমার সেই ভালোবাসা আমাকে রাস্তার মাঝে ছুড়ে ফেলে চলে গেছে তাহলে বন্ধু মহলে ওরা আমাকে নিয়ে তামাশা করবে। বলবে কিরে বউ পাগলা! বউকে তো ভালোবেসে ধরে রাখতে পারলি না।
এমআরএম/এমকেএইচ