জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলায় ওয়াশিংটনে বিজয় দিবস পণ্ড

কৌশলী ইমা কৌশলী ইমা , যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:০০ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ বলায় পন্ণ্ড হয়েছে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান। শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে।

ওয়াশিংটন ডিসি এলাকার পার্শ্ববর্তী ভার্জিনিয়ায় অঙ্গরাজ্যের একটি অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রেটার ওয়াশিংটন ডিসি’ (বাগডিসি)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠান চলাকালীন একটি অডিও বাজানো হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীনতার সপক্ষের আদর্শের অনুসারী হিসেবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ ধরনের বিকৃতির ঘৃণ্য অপচেষ্টা অনেককেই স্তম্ভিত করে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে অনুষ্ঠানের বাকি অংশ উপস্থাপনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অনুষ্ঠান ত্যাগ করেন উপস্থাপক ও ‘ভয়েস অব আমেরিকার’ সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন ‘ভয়েস অব আমেরিকার’ সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরী।

সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসি আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলমগীর। ঘটনার পর শতরূপা বড়ুয়া তার ফেসবুকে লেখেন, ‘আজকের অনুষ্ঠানে একটি অডিও বাজানো হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীনতার সপক্ষের আদর্শের অনুসারী হিসেবে, বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ ধরনের বিকৃতির ঘৃণ্য অপচেষ্টা আমাকে স্তম্ভিত করেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমি অনুষ্ঠানের বাকি অংশ উপস্থাপনায় অস্বীকৃতি জানিয়ে চলে আসি।’

jagonews24

প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক-মুক্তিযোদ্ধা হারুন চৌধুরী জানান, বাগডিসির এ অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট এবং স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে প্রচার করা হয়। এতে উপস্থিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদের মুখে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।

অনুষ্ঠানের অতিথি ও স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে ইতিহাস বিকৃত করার মতো পরিক্রমায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন সবাই। অধিকাংশ মানুষই অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। এ অবস্থায় আয়োজকরা প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার পর অনুষ্ঠানে আমি সঙ্গীত পরিবেশন করেছি।

এ প্রসঙ্গে ‘বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন’ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি খন্দকার মনসুর বলেন, যারা এমন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। ইতোমধ্যে বাগডিসি কর্তৃপক্ষ আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে কার্যকরী কমিটির বৈঠক ডেকে সংশ্লিষ্টদের বহিষ্কার করা হবে। সামাজিকভাবে ওদেরকে চিহ্নিত করা হবে।

ইতিহাস বিকৃতির এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন আরিফুর স্বপন, আরিফুর রহমান, সুয়েব চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ও আলাউদ্দিন আহমেদ, শিব্বীর আহমেদ, জি আই রাসেল, জীবক বড়ুয়া, আবুল কালাম আজাদ, আকতার হোসাইন, মুজিবুর রহমান খান, জুয়েল বড়ুয়া, আবুল শিকদার, যুগ্ম সচিব দেওয়ান আলী বিজয়, হারুনুর রাশিদ।

এ ছাড়া জাহিদ হোসেন, সমন্বয়কারী আমান উল্লা, আলতাফ হোসাইন, প্রচার সম্পাদক মীর রফিক, উপদেষ্টা সাদেক এম খান, আলাউদ্দীন আহমেদ ও মোহাম্মদ সিরাজুল হক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এদিকে বাগডিসিকে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

এমআরএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]