ঈদ আনন্দে মালয়েশিয়ায় স্বজনহীন প্রবাসীর কষ্ট

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:৪৮ এএম, ০৫ জুন ২০১৯

বাবা-মা, পরিবার-পরিজনের মুখে হাসি ফোটাতে স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ করছেন বাংলাদেশের তরুণ ও যুবকেরা। প্রবাস জীবনের শুরুতেই সঙ্গী হয় জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা প্রিয় মাতৃভূমি ও প্রিয় মানুষগুলো ছেড়ে দূর দেশের কষ্ট।

স্বপ্ন, শক্তি-সাহসই হয় প্রবাসীর সহযাত্রী। ১০ ঘণ্টা, ১২ ঘণ্টা বা এর চেয়েও বেশি সময় হাড়ভাঙ্গা শ্রম দেয় স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয়ে। প্রবাস জীবনের শুরুতেই পরিবারের সদস্যের স্বপ্ন পূরণেই ব্যস্ত থাকেন প্রবাসী। পরিবারের স্বপ্নই নিজের স্বপ্ন। পরিবারের সদস্যের মুখের হাসি দেখে প্রবাসীর শরীরে কষ্টের ঘাম শুকিয়ে শীতল অনুভব হয়।

কাজের কষ্টগুলো মনেও থাকে না আর। এই প্রবাসীরা দেশের অর্থনৈতি চাকাকে সচল করে রেখেছেন। পরিবার পরিজনদের ফেলে রেখে প্রবাসেই ঈদ করছেন অনেকে। অনেকের বৈধ ভিসা না থাকায় যেতে পারছেন না দেশে। আবার কেউ কেউ পারমিটের জন্য জমা দিয়েছেন কিন্তু এখনও পাসপোর্ট হাতে পাননি এমন হাজার হাজার শ্রমিক অপেক্ষায় রয়েছেন।

আবার কেউবা ছুটি পাননি। অনেকের আশা ছিল বাবা-মা পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন কিন্তু তা আর হলো না। যারা দেশে যেতে পারেননি তারা বাবা-মা পরিবারের কাছে কেনাকাটার টাকা পাঠিয়েছেন। আবার যারা বেতন পাননি তারা বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে টাকা পাঠিয়েছেন।

একদিকে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে না পেরে মনের কষ্ট চেপে রেখে কাজে মনোনিবেশ করেছেন তারা। রেমিট্যান্স যোদ্ধা শাহীন, কাজ করেন রেস্টুরেন্টে।

শাহীন বলেন, দেশের মতো এখানেও আকাশে ঈদের চাঁদ উঠে, মসজিদে মসজিদে ঈদের জামাত হয়। নামাজ শেষে বন্ধুদের সঙ্গে কোলাকুলি। কিন্তু দেশের সেই প্রশান্তি অনুভব হয় না।

southeast

তিনি বলেন, ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আকাশের চাঁদ খুঁজে ফিরি না। এখানে মসজিদের মাইকে কেউ ঘোষণা করেন না ঈদ মোবারক, আগামীকাল পবিত্র ঈদুল ফিতর। আগামীকাল আজ মালয়েশিয়ার সকল মসজিদে ৮ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে কেউ দাওয়াত দেয় না। নামাজ শেষে রং বেরংয়ের আইটেমের খাবার সাজিয়ে কেউ অপেক্ষা করে না আমাদের জন্য।

তিনি আরও বলেন, দল বেঁধে কেউ আসে না ঈদের সালামি নিতে। এখানে ক্যালেন্ডারের লেখা দেখে ঘড়ির টাইমে যেতে হয় ঈদগাহে। নামাজ শেষে সবুজ অরণ্যে ঘুরে ফিরে আনন্দ করা হয় না। সুযোগ থাকলেও ইচ্ছে থাকে না। আবার ইচ্ছে থাকলে সুযোগ হয় না। আমি আমরা আনন্দ করলে যে দেশে থাকা ভাই-বোন ছেলে-মেয়েদের আইফোন কেনার টাকা হবে না। ঈদের মার্কেটই বা করবে কিভাবে?

সময়ের নিয়মে ঈদ আসে ঈদ যায়, প্রবাসীরা প্রবাসীই থেকে যায়। তারপরও প্রবাসের ঈদ স্মৃতির অ্যালবামে জমা থাকে কিছু কথা।

প্রবাসী সুমন মিয়া এ প্রতিবেদককে জানান, ইচ্ছে ছিল দেশে গিয়ে মা-বাবা পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করবেন। কিন্তু সেটা আর হলো না। মালিকের কাছে আবেদন করেও লাভ হয়নি ছুটি নেই। মনের কষ্ট চেপে রেখেছেন সুমন। পরিবার পরিজনের সুখ-শান্তি কামনা করে ঈদের আনন্দ বুকে চেপে ধরে আগামির পথে চলছেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা।

প্রবাস জীবনের নিঃস্বঙ্গতা আর বাস্তবতাকে সাথী করে এরা সবাই এগিয়ে যাচ্ছেন একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে।

এমআরএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]