বিজয় দিবসে বিশ্বজয়ীর লাইবেরিয়া জয়

মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল)
মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল) মো. মুখলেছুর রহমান (মুকুল) , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৯:৪০ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

জানার কোনো সীমানা থাকে না। থাকে না আনন্দ-উচ্ছ্বাসেরও। আনন্দ ডানা মেলে বিশ্বকে জানার স্বপ্ন কে না দেখে! কিন্তু ক’জনই বা সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে? দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে পা রাখার বাসনা সুপ্তই থেকে যায় বেশিরভাগ মানুষের।

আবার ভ্রমণ-পিপাসু মানুষের সংখ্যাও কম নয়। বাংলাদেশের নারী নাজমুন নাহার তাদেরই একজন যিনি আনন্দযাত্রায় বিশ্বকে জয় করছেন প্রতিনিয়ত। আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়া ভ্রমণের মধ্য দিয়ে তার ১১৮টি দেশ ভ্রমণ পূর্ণ হলো।

nahar

১২ ডিসেম্বর বিকেলে ১১৮তম দেশ হিসেবে লাইবেরিয়ার মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিতে তার যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি লাইবেরিয়ায় যান।

আরও পড়ুন>১১৪ দেশের সীমানায় নাহারের ভালোবাসা

নাজমুন নাহার বলেন, ১২ ডিসেম্বর লাইবেরিয়ার মাটিতে পা রাখি। সিয়েরা লিওন থেকে বাই রোডে উনিশ ঘণ্টার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয়। আসার পর আমার লাইবেরিয়ান বন্ধু সাত্তার বাড়ি থিঙ্কার ভিলেজ উঠি। লাইবেরিয়ার রাজধানী মনরোভিয়া থেকে থিঙ্কার ভিলেজ এক ঘণ্টার দূরত্বে। গত কয়েক দিন বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পর গতকাল বিকেলে শহরের মোনরোভিয়ার সমুদ্র সৈকতে আমি, সাত্তার এবং আমার সিয়েরা লিওনের বন্ধু ডোরাসহ একসঙ্গে পতাকা উত্তোলন করার জন্য অবস্থান করি।

jagonews

তিনি বলেন, যখন মনরোভিয়ার সমুদ্র সৈকতে শুক্রবার লাল সবুজের পতাকা উড়াচ্ছিলাম তখন পেছন থেকে একজন এসে পাশে দাঁড়িয়ে বললেন ‌‌‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’ আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি একজন ভাইয়ের চোখে পানি দাঁড়িয়ে আছে আর বলেছেন আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা- এই বিদেশের মাটিতে আপনার হাতে লাল সবুজের পতাকা দেখে আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমি বাংলাদেশি পেয়ে আপ্লুত হই, গত একমাসের জার্নিতে এই প্রথম কাউকে পাওয়া। জানতাম না এখানে দুই শত বাঙালি থাকে, তাদের মিলনমেলায় আমরা একসঙ্গে উদযাপন করবো বিজয় দিবস।

বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে শান্তির দূত হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন নাজমুন নাহার। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে আলোচিত নারী হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের পতাকাবাহী এ নারী।

jagonews

আরও পড়ুন>সবুজের বুকে লাল উড়বে মৌরিতানিয়ায় 

ভারতের পাঁচামরিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার প্রোগ্রামে’ অংশগ্রহণের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন নাজমুন। বিশ্বের ৮০টি দেশ থেকে আসা ছেলে-মেয়েদের সামনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধমে বিশ্ব শান্তি ও একাত্মতার কথা তুলে ধরেন তিনি। এরপর থেকে নাজমুন পৃথিবীর এক এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে চলছেন। দেশ ভ্রমণে তরুণদের নানাভাবে উৎসাহিত করছেন।

২০১৭ সালে ৯৩তম দেশ হিসেবে ভ্রমণ করেছেন নিউজিল্যান্ড। এ দুর্দান্ত সাহসী নারী একে একে বাংলাদেশের পতাকাকে পৌঁছান সর্বোচ উচ্চতায়। ২০১৮ সালের ১ জুন নাজমুন ১০০ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক সৃষ্টি করেন পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়েতে।

jagonews

তিনি বহু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ‘ইন্সপেরেশন গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের’ মাধ্যমে তিনি তার এই উদ্যোগকে বাংলাদেশে শিশু কিশোর, তরুণ-তরুণীদেরকে তাদের স্বপ্নের যাত্রা পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কাজ করে যাবেন। নাজমুনের এ অগ্রযাত্রার ভাবনা আলোকিত করবে আমাদের অনেক মানুষকেই।

এএসএস/এমআরএম/আরআইপি

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]