দেশে প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে অনিবাসী প্রকৌশলীদের সম্মেলন
সারাবিশ্বে বসবাস করছেন অসংখ্য বাংলাদেশি প্রকৌশলী। তারা কেউ বড় বড় কোম্পানিতে গুরু দায়িত্বে রয়েছেন। কেউ বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বা শিক্ষকতা করছেন। কেউ করছেন ব্যবসা। তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সেসব দেশে। আমরা এসব মেধাবী প্রকৌশলীদের নিয়ে গর্ব করি।
কারণ, তারা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সুনাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে চলেছেন। আবার এ মেধাবী প্রকৌশলীদের মাঝে অনেকে আছেন যারা বাংলাদেশের জন্য কিছু করছেন অথবা করতে চাচ্ছেন। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে চান, টেকনোলজি ট্রান্সফার করতে চান, নতুন নতুন আইডিয়া উপস্থাপন করতে চান।
বাংলাদেশে উন্নত প্রযুক্তির নানা ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে এখনও বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি প্রযুক্তি এবং প্রকৌশলীদের ওপর নির্ভরশীল। নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য স্ব-ক্ষমতায় টেকসই ও লাগসই প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। এ নিমিত্তে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অনিবাসী প্রকৌশলীদের সম্মেলন 'কনভেনশন অব এনআরবি ইঞ্জিনিয়ার্স'।
জানা গেছে, এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালের ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে। সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বিশ্বের সব অনিবাসী বাংলাদেশি বা এনআরবি প্রকৌশলীদের।
একসঙ্গে এক জায়গায় আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক কাজে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আমন্ত্রিত সরকারের ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাদের সামনে তারা প্রকল্প অথবা ধারণা পেশ করবেন। এসব প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আলাপ হবে। আগামী দুই তিন দশকে প্রযুক্তিগতভাবে বাংলাদেশের কোন ধরনের পরিবর্তন হতে পারে, হওয়া উচিত তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেবেন। বিভিন্ন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কীভাবে এ প্রকৌশলীরা শিক্ষকতা করতে পারেন তা নিয়ে আলাপ হবে। তাদের মতামত ও লেখা সম্মেলনের পর বই আকারে ছাপা হবে।
সম্মেলনের প্রধান উপদেষ্টা হলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। সম্মানিত বিশেষ অতিথি থাকবেন এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) মুখ্য সমন্নয়কারী আবুল কালাম আজাদ। মূল প্রবন্ধ বা কী নোট দেবেন ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর।
গত আগস্টের শেষে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বা আবিয়া-র দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। সে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং একটি পর্বে কী নোট স্পিকার হিসেবে ছিলেন ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। তিনিই সেখানে ঘোষণা দেন, আগামী বছর বাংলাদেশে একটি সম্মেলন হবে। তিনি সবাইকে আমন্ত্রণ জানান, বাংলাদেশে এসে নিজের চোখে দেখার জন্য যে কী কী ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। সেই আমন্ত্রণের সূত্র ধরেই এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনের একক পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে ম্যাক্স গ্রুপ। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকবে জাগোনিউজ২৪ ডটকম।
সম্মেলনের কনভেনর টেক্সাসের হিউস্টন থেকে ইঞ্জিনিয়ার আজাদুল হক এবং কো কনভেনর হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেস থেকে ইঞ্জিনিয়ার জলিল খান পি.ই। টেকনিক্যাল সেমিনার কমিটির চেয়ারম্যান হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেসের লয়লা-মেরিমাউন্ট ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েটড ডিন ইঞ্জিনিয়ার ড. নাজমুল উলা।
সম্মেলনকে আন্তরিকভাবে সহায়তা করছেন বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. কাজী আনোয়ারুল হক এবং এ-টু-আইয়ের (একসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্প পরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান।
দেশের মানুষের উপকার হবে, উন্নয়নে সহায়তা করবে এমন যে কোনো প্রকল্প এ সম্মেলনে উপস্থাপন করা যাবে। আপাতত কিছু বিষয়ে প্রকল্প, লেখা আহ্বান করা হয়েছে। তা হলো-
১. ইনভেস্টমেন্ট অব ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন নেটওয়ার্ক।
২. সিটি প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইউথ দ্য ইমপাসিস অন ইনুভেটিভ সিটি ট্রান্সপোর্টেশন সিসটেম।
৩. স্মার্ট সিটি সলিউশন।
৪. সাসটেইনেভল ইনভাইরনমেন্টাল ইমপ্রুভমেন্ট।
৫. ট্রেড অ্যান্ড মাল্টিন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ।
৬. এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট ইউথ ইমপাসিস অন স্কিলড প্রফেশনাল প্রগ্রেস হেভিং ডিমান্ড ইন দ্য আইটসাউট ওয়ার্ল্ড।
৭. এন্ট্রেপ্রেনিউরিয়াল ইনভেস্টমেন্ট।
৮. স্পেস সাইন্স।
৯ . ন্যানোটেকনোলজি।
১০. মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজে, এআই, ক্র্যাপ্তকাররেন্সি, সাইবার সিকিউরিটি।
১১. স্যাটেলাইট অ্যান্ড টেলিকম্যুনিকেশন।
১২. ইলেকট্রিক ভেহিকল ম্যানুফ্যাকচারিং।
১৩. পাওয়ার সেক্টর।
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, ফ্রান্স এবং সুইডেন থেকে ইঞ্জিনিয়াররা রেজিস্ট্রেশন করা শুরু করেছেন। সম্মেলনে আগত এনআরবি ইঞ্জিনিয়ারদের, বিশেষ করে যারা প্রবন্ধ পাঠ করবেন এবং বক্তৃতা দেবেন, তাদের হোটেল সোনারগাঁয়ে সৌজন্যমূলকভাবে তিনদিনের থাকার ব্যবস্থা থাকবে। এ সম্মেলনের মূল আয়োজন করছে যুক্তরাষ্ট্রের 'ব্রিজ-টু-বাংলাদেশ', ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকবে এন এফেরার্স এবং সম্মেলনের ভিডিওগ্রাফি ও ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করবে লাইভ-টু-ওয়েব।
বিস্তারিত জানার জন্য ওয়েবসাইট দেখুন
জেডএ/এএইচ