রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের আহ্বান মুসলিম ওয়ার্ল্ড বিজের
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন মুসলিম নেতারা। চার দিনব্যাপী কুয়ালালামপুরের পুত্রাওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত মুসলিম ওয়ার্ল্ড বিজ সম্মেলনের ৩য় দিন বুধবারে সমাপনী অধিবেশনে নেতারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের গণহত্যা বন্ধ করতে সু চি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান বর্বরতা বন্ধ এবং কোনো ধরনের বৈষম্য না করে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ারও আহ্বান জানান মুসলিম ওয়ার্ল্ড বিজের শীর্ষ কর্তারা। বিকেলের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওয়াইবি এইচবি দাতিন রোশমা মনসুর।
রোশমা মনসুর বলেন, রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর রোহিঙ্গা মুসলিমরা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ আর নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী মালয়েশিয়ায় আশ্রয়ে রয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ৫৯ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছে।
মুসলিম বিশ্ব নেতারা এক কাতারে এসে মুসলিম নিধন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে রোশমা মনসুর বলেন, মালয়েশিয়া যেকোনো সন্ত্রাসের নিন্দা জানায় এবং আক্রান্ত দেশগুলোর পাশে থাকবে।
ওআইসি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টার এবং মুসলিম বিশ্ব ব্যবসা মালয়েশিয়া অ্যাসোসিয়েশন- ইসলামিক সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব ট্রেড (আইসিডিটি) এর সহযোগিতায়, সহযোগী সংস্থা ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার সংগঠন (ওআইসি), প্রারম্ভিক ট্রেড ইভেন্ট, অষ্টম মুসলিম ওয়ার্ল্ড বিজ- ২০১৭ এর আয়োজন করে। এবারের সম্মেলনে ৩০টিরও বেশি দেশের প্রায় ১২০০ প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দেন।
এদিকে মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার চলবে যুক্তিতর্ক। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীই শুধু নয়, দেশটির প্রধান ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) এবং এর আলোচিত নেত্রী অং সান সু চি যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত হয়েছেন।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে শুরু হওয়া গণ আদালতের রায় ঘোষণা হবে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর)। গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশনের আয়োজন করা হয়।
‘প্রসিকিউশন, ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট অ্যান্ড জেনোসাইড অব রোহিঙ্গা, কাচিন, শান, কারেন অ্যান্ড আদার মাইনরিটিস অব মিয়ানমার’ শীর্ষক জবানবন্দিতে বুধবার গ্রেগরি স্ট্যানটন সাম্প্রতিক কয়েকটি রায়ের আলোকে বলেন, এথনিক ক্লিনজিং নয়, মিয়ানমারে যা ঘটেছে তা গণহত্যা।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্টাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন ট্রাইব্যুনালে দেয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ১৯৬২ সালে নে উইনের নেতৃত্বাধীন সামরিক জান্তা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রোহিঙ্গা, কাচিন, শান, কারেন এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে নির্যাতন চলমান রয়েছে।
পিপিটি মালয়েশীয় সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি চন্দ্র মোজাফফর বলেছেন, পাঁচদিনের অধিবেশনে বিচারকেরা প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক বিশেষজ্ঞ সাক্ষীদের মতামত, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি বিচার-বিশ্লেষণ করবেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় তারা রায় ঘোষণা করবেন।
এমআরএম/বিএ