যশোরের মর্জিনা সৌদিতে পান-সিগারেটের দোকানি
ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার আশায় সৌদি আরবে পাড়ি জমান যশোরের মর্জিনা। ২০১০ সালে হাসপাতালের ভিসা নিয়ে সৌদি আরব আসেন তিনি। প্রথমে কোম্পানির চাকরির কথা থাকলেও কাজ পান বাসায় গৃহকর্মীর। সেখানে এক বছর কাজ করে তিনি পেয়েছেন মাত্র তিন মাসের বেতন। সঙ্গে জুটেছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।
এক সময় মর্জিনা সিদ্ধান্ত নেন বাসা থেকে চলে যাবেন। অন্য কোথাও কাজ করবেন বা দেশে চলে যাবেন। পরে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে এসে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেটরের পাশে একটি পরিবারে আশ্রয় নেন। পরে ওই পরিবার তাকে একটি হাসপাতালে ক্লিনারের চাকরি দেন। সেখানেও ছয় মাস চাকরি করে মাত্র দুই মাসের বেতন পান। এরপর তিনি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দেন।
বাংলাদেশ কনস্যুলেটরের পাশে অনেকেই পানি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এটা দেখে মর্জিনার আগ্রহ জাগে। যে বাসায় থাকতেন সেই বাসার নারীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন তিনি পান ও পানি বিক্রয় করবেন। ব্যবসা করতে লাগে পুঁজি। কিন্তু তার কাছে তো কিছুই নেই। এরপর সৌদি প্রবাসী যে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন, তারা মর্জিনাকে মাত্র ১০০ রিয়াল দিয়ে সহযোগিতা করে। সামান্য পুঁজি নিয়ে বাংলাদেশ জেদ্দা কনস্যুলেটরের পাশে পানের দোকান দেন। ২০১৩ সাল থেকে মর্জিনা এখন পর্যন্ত সেই পানের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পুলিশ তল্লাশি করতে এলে দোকান থেকে চলে যান। পুলিশ চলে গেলে আবার বেচাকেনা শুরু করেন। ২০১৩ সালে সৌদি সরকার যখন অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দেয় সেই সুযোগ গ্রহণ করেন মর্জিনা।
মর্জিনা জানান, ‘এই পানের দোকান করে আমি ভালো আছি। অভাব অনটন কেটে গেছে। এই দোকান থেকেই ৪৫ হাজার রিয়ালের বিনিময়ে ভিসা করেছি।’ তিন বছর সৌদিতে তিনি অবৈধ ছিলেন। তার কাছে তখন ছিল না কোনো পাসপোর্ট, ছিল না কোনো আকামা। তারপরও ১৫০ রিয়াল অর্থাৎ তিন হাজার টাকা আয় হত প্রতিদিন। তিনি জানান, কনস্যুলেট খোলা থাকলে বেচা-কেনা হয় বেশি। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় ব্যবসা কম হয়। এভাবে পান বিক্রি করে তার প্রতি মাসে আয় ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা আয় হত একসময়। এখন অবশ্য কমে গেছে।
তিনি জানান, ‘আমি এই পানের ব্যবসা করে অনেক অর্থ উপার্জন করেছি। দেশে গ্রামের বাড়িতে জমি কিনেছি। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছি। আমার বড় মেয়ে কলেজে পড়ে আর ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এছাড়া মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় প্রতি বছর দান করি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এখন অনেক ভালো আছি।
এমআরএম/আরআইপি