কানাডায় বাংলাদেশি তরুণের অকাল মৃত্যু
কানাডার টরন্টোয় এক বাংলাদেশি তরুণের অকাল মৃত্যু হয়েছে, (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। স্ত্রী মৌরি আর এক বছর বয়সী ছেলে অনীশকে নিয়ে ভালই যাচ্ছিল অমিতের জীবন। কিন্তু আচমকা এক ঝড় এসে যেন লণ্ডভণ্ড করে দিল তার সুখের স্বর্গকে। ভালোবাসার বন্ধন ভেঙে মৃত্যুদূত এসে কেড়ে নিল অমিতকে।
প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়ে এখন যেন কষ্টে পাথর মৌরি। আর অনীশের তো বোঝার বয়সই হয়নি যে কী হারিয়েছে সে।
কানাডার আরেক প্রবাসী আরেফিন সামাদ খান জানান, কয়েকদিন ধরেই অমিত বুকে একটু ব্যথা অনুভব করতেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্যথাটা বেড়ে গেলে অমিত টরন্টোর ইস্ট ইয়র্ক জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। ডাক্তার বললেন উচ্চ রক্তচাপ। হৃদপিণ্ডে কিছু অনিয়ম ধরা পড়লেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে জানান ডাক্তার।
আরেফিন বলেন, গত ১ মার্চ বুধবার অন্যান্য দিনের মতোই অমিত বাসাতে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সন্ধ্যার পর নিজের ২০ তলার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ৫ তলার এক ছোট ভাই অর্ণবের অ্যাপার্টমেন্টে গল্প করতে আসেন অমিত।
ওরা দুজন বারান্দায় গল্প করছিলেন। হঠাৎ করেই অর্ণবের মনে হয় অমিত রেলিংয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন টলোমলো পায়ে। মনে হচ্ছে হয়তো পড়েই যাবেন। গিয়ে ধরতে ধরতেই অমিত পড়ে যান মাটিতে। মুখ থেকে ফ্যানা ওঠা শুরু করে। অর্ণব সঙ্গে সঙ্গেই কল করেন ৯১১ নম্বরে। বুঝতে পারে নিঃশ্বাস ছোট হয়ে আসছে অমিতের। ৯১১ এ অপারেটর ক্রমাগত অর্ণবকে বলে যায় কীভাবে সিপিআর এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। অর্ণবও যথাসাধ্য চেষ্টা চালায়। এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
২০০৮ সালে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করে বের হবার সঙ্গে সঙ্গেই অমিতের চাকরি হয় ইউনিলিভার বাংলাদেশে। নিজের যোগ্যতায় ক্রমাগত প্রমোশন পেয়ে ২০১৪ সালে ইউনিলিভারের টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশনের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।
কিন্তু কর্পোরেটে সাবলীল ক্যারিয়ার থাকলেও অমিতের বরাবরই ইচ্ছা ছিল নিজের স্বপ্নের বিষয় নিয়ে পড়ার। মেকানিক্যাল, রোবটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়গুলো ওকে খুব টানত। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে অভিবাসী হয়ে টরন্টোতে চলে যান অমিত।
সেখানে তিনি তার স্বপ্নের বিষয় মেকাট্রনিক্স পান। ভর্তি হন রায়ারসন ইউনিভার্সিটিতে। ভালোই চলছিল সব, পড়াশোনা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলা। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অমিত চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
জেডএ/এমএস