মালয়েশিয়ায় ইমিগ্রেশনে ভোগান্তিতে বাংলাদেশিরা


প্রকাশিত: ০৫:৫৪ এএম, ১১ অক্টোবর ২০১৬

মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়া ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশিদের জন্যই যেন নিয়মটা আলাদা। অন্যান্য দেশের নাগরিকদের নির্দিষ্ট কাউন্টারে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও বাংলাদেশিদের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাওয়ার আগে লাইনে দাঁড় করিয়ে তথ্যানুসন্ধান করা হয়। শুক্রবার মালয়েশিয়ার পিং সিটি পুত্রাজায়া ইমিগ্রেশনে গেলে এ চিত্রই চোখে পড়ে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাদের অভিযোগ,বাংলাদেশিদের লাইনে দাঁড় করিয়ে তথ্যানুসন্ধানের নামে অপমানও করা হয়। বিষয়টি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও দূতালয় কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বলছেন, ইমিগ্রেশনে বাড়তি নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশিদের উপর বাড়তি নজরদারির অংশ হিসেবে তারা প্রত্যেক বাংলাদেশিদের কাগজপত্র অনুসন্ধান করছেন। পরে তাদের ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কাউকে নাজেহাল করার জন্য নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা এক বাংলাদেশি মালিকানাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কেরিকমকে গত দুই বছর আগে দায়িত্ব দেয়া হয় অবৈধ শ্রমিকদের স্পেশাল পাশ ইস্যুর জন্য। রীতিমতো ওই কোম্পানি পুত্রাজায়া ইমিগ্রেশন কাউন্টারের পাশে একটি অফিস করেছে। যেখানে স্পেশাল পাস ইস্যু করতে বাংলাদেশিদের জন্য গুনতে হয় ৯৫০ রিঙ্গিত। অথচ অন্যান্যে দেশের বেলায় ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে খরচ হয় ৪০০ রিঙ্গিত। এ নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রথম থেকে এর বিরুদ্বাচরণ করে আসলেও পাওা দিচ্ছে না হাইকমিশনকে। অন্যান্য দেশের হাইকমিশন প্রতিবাদ করে ঠিকই ৪০০ রিঙ্গিতে স্পেশাল পাস ইস্যু করছে। শুধু বাংলাদেশিদের বেলায় ৯৫০ রিঙ্গিত কেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, অবৈধ বাংলাদেশি দেশে যেতে চাইলে হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পাশ ইস্যু করা হয়। আর ওই ট্রাভেল পাস নিয়ে যাওয়া হয় পুত্রাজায়া  স্পেশাল পাস ইস্যুর জন্যে ।

malayasia

এদিকে  কেরিকমকে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ মৌখিক নিষেধ করলেও তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।     

শুক্রবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে কাউন্টারে প্রবেশ করতেই একজন নারী ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বললেন, সব বাংলাদেশিকে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে।  কেউ কেউ অনুমতি পেলেও অনেক বাংলাদেশিকে বলা হলো পাশের কাউন্টার থেকে ফরম পূরণ করে নিয়ে আসতে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে ৯৫০ রিঙ্গিতের বিনিময়ে ইস্যু হচ্ছে স্পেশাল পাস। আবার কারো কারো কাগজপত্র ঠিক না থাকলে কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে ইমিগ্রেশন কমকর্তারা।

এমন ভোগান্তিতে পড়া ময়মনসিংহের আফজাল মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, হাইকমিশন থেকে ৪৪ রিঙ্গিত ব্যাংক ড্রাফ্ট দিয়ে  ট্রাভেল পাস ইস্যু করে নিয়ে এসেছি । নানা প্রশ্ন করে আমাকে নাজেহাল করার চেষ্টা করা হয়েছে। উপায়ন্তর খুঁজে না পেয়ে শেষে ইমিগ্রেশনের বাহিরে ওঁৎ পেতে থাকা দালালের মাধ্যমে এক হাজার ২০০ রিঙ্গিতের  বিনিময়ে স্পেশাল পাস করিয়েছি।

সিলেটের ফিরোজ  মিয়া নামে আরেক বাংলাদেশির অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ ধরে আসা-যাওয়া করে শেষ পর্যন্ত দেশে যাওয়ার অনুমতি পেলাম। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের মিশনের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে স্পেশাল পাস দেয়া হয় । কিন্তু আমাদের দূতাবাস ট্রাভেল পাস ইস্যু করে ইমিগ্রেশনে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে প্রতিদিনই হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

জেডএ/এবিএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]