মালয়েশিয়া থেকে দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ফিরেছেন ৫ হাজার বাংলাদেশি


প্রকাশিত: ০৭:৩৯ পিএম, ১০ আগস্ট ২০১৬
ফাইল ছবি

মালয়েশিয়ার বন্দিশিবিরগুলোতে অসহায়ত্বের গ্লানি টেনে দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে দেশে ফিরেছেন চার হাজার ৯শ বাংলাদেশি। ভাগ্য ফেরানোর নেশায়, দালালদের প্রলোভনে পরিবারে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের অনেক যুবক লুফে নেন স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ। তবে মালয়েশিয়া-যাত্রা শুরুর আগে ঘুণাক্ষরেও তারা উপলব্ধি করতে পারেন না, কী আছে সামনে। ভাগ্য বদলের নেশায় তারা বিভোর তখন।

সোনার হরিণ হাতে পেতে মালয়েশিয়া-যাত্রা শুরুর পরপরই খুলতে থাকে তাদের চোখ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুর্গম সাগরপথে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, অবর্ণনীয় অত্যাচারে হঠাৎ চোখ খুলে যাওয়া এই যুবকদের সামনে তখন না আছে সামনে যাওয়ার পথ, না আছে পেছনে ফেরার পথ।

সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার আশায় থাইল্যান্ডের জঙ্গল আর মালয়েশিয়ায় বন্দিজীবন কাটিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত মালয়েশিয়া থেকে চার হাজার ৯শ জন ফিরেছেন বাংলাদেশে। ফেরার সময় তাদের ঝুলিতে ছিল কেবল মালয়েশিয়া-জীবনের দুঃসহ স্মৃতি।

এসব বন্দি বাংলাদেশি দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল করতে এবং পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে ভিটে মাটি-সহায় সম্বল বিক্রি করে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পরিবারে হাসি ফোটানো তো দূরে থাক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বন্দিশিবিরে অসহায়ত্বের গ্লানি টেনেছেন তারা। জীবিকার তাগিদে স্বজনদের ফেলে জীবনবাজি রেখে কতো লোক সাগর পাড়ি দিতে নৌকায় চড়েছেন? তাদের মধ্যে পথেই মারা গেছেন কতজন? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে আসছে।

এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য বিভাগের প্রতিদিনের চিরুনি অভিযানে এখন পর্যন্ত কতজন বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে ইমিগ্রেশন বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিমুনিয়া, লেঙ্গিং, লাঙ্গ, জুরুত, তানাহ মেরায়, মাচাপ উম্বু, পেকা নানাস, আজিল, কেএলআইএ সেপাং ডিপো, ব্লান্তিক, বুকিত জলিল ও পুত্রজায়ায় সাম্প্রতিক অভিযানে আটককৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।

মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের উপ-সহকারী পরিচালক জোসামি মাস্তান বলেন, বিভিন্ন কারাগার ও ক্যাম্পে যারা আটক আছেন, তাদের বেশির ভাগই অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ কিংবা অবৈধভাবে থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধপথে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে অহরহ প্রাণহানি ঘটছে, কেউ ধরা পড়ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে, প্রতারকদের হাতে জিম্মি হচ্ছেন অনেকেই। সহায় সম্বল বেঁচে টাকা দেয়ার পর মুক্তি মিলছে কারো।

এদিকে হাই-কমিশনের শ্রমশাখার প্রথম সচিব শাহিদা সুলতানা জাগো নিউজকে জানান, বন্দিশিবিরে যারা আটক রয়েছেন তাদেরকে দ্রুত দেশে পাঠানোর সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দূতাবাসের শ্রমশাখার সচিবরা প্রত্যেকটি বন্দিশিবির পরিদর্শন করে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাই এবং শনাক্ত করে পর্যায়ক্রমে তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। জানুয়ারি থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত চার হাজার ৯শ জনকে বিভিন্ন বন্দিশিবির থেকে ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহিদা বলেন, কারাগার পরিদর্শনে গিয়ে বন্দিদের নিম্নমানের খাবারের অভিযোগ শুনে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যাম্পে কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছনি তাদের তালিকা দ্রুত মিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, অনেক সময় দেখা যায় একটি ক্যাম্প থেকে তালিকা দিতে এক থেকে দুই সপ্তাহ বিলম্ব হওয়ায় দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে সমস্যা হয়। আবার ক্যাম্প থেকে তালিকা পাঠানো হলেও ব্যক্তির ফরম থাকে না। পরে ক্যাম্পে যোগাযোগ করে তা নিয়ে আসতে হয়। তারপরও দ্রুত বন্দিদের দেশে পাঠাতে আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি।

এদিকে বছরের পর বছর মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বন্দিশিবির ও কারাগারে চার হাজারের বেশি বাংলাদেশি মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। একটি সূত্রে জানা গেছে, দেশটির ১২টি বন্দিশিবিরেই এক হাজার ৭২৩ জন আর বিভিন্ন কারাগারে সাজাভোগ করছেন এক হাজার ৯২৭ জন বাংলাদেশি।

বিএ

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]