ভালো মন্দের ঈদ

জমির হোসেন
জমির হোসেন জমির হোসেন , ইতালি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:১০ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৫

বছরে দুটি ঈদ মানুষের জীবনে বহুমুখী আনন্দের মাত্রা বয়ে আনে। অতিরিক্ত খরার পর বৃষ্টির আগমনে জনমনে যেমন প্রশান্তি যোগায় ঈদ তার চেয়েও শতগুণ আনন্দ বয়ে আনে। এই মহা আনন্দকে ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। তবে দেশের ঈদ প্রবাসের ঈদ দুইয়ের মধ্যে দীর্ঘ পার্থক্য বিদ্যমান। প্রবাসে পরিবারহীন ঈদ আর দেশে সপরিবার নিয়ে ধুমধাম করে এ উৎসবটি উদযাপন করা হয়। তবু এ যেন প্রকৃতির অকৃত্রিম অদৃশ্য ছোঁয়া সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ওপর।

তাই ঈদের কয়েক সপ্তাহ পূর্ব থেকে ঘরে ঘরে এই আমেজের উৎসব আসে বিভিন্ন রূপে। প্রতি বছর দুটি ঈদের জন্য ভিন্নতা খুঁজে পাওয়া যায় ঈদের পূর্বমুহূর্তে।

বিজ্ঞাপন

ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ ভাগাভাগি করার উত্তম একটি দিন। প্রচলিত এই কথা শুধু দেশে থাকা মানুষদের জন্য মানায় আমরা যারা দেশান্তরে তাদের জন্য প্রযোজ্য বলে মনে হয় না।

আমার কাছে ঈদ মানে বেদনার গাংচিল। ঈদ আসলে সুন্দর স্বপ্নরা দুঃস্বপ্ন হয়ে যায় ফেলে আসা সোনালি অতীত নিমিষেই মন খারাপের দেশে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয় আনন্দ রূপ নেয় নিরানন্দে। বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে অভিজ্ঞতার আলোকে প্রবাস থেকে ঈদের বার্তার স্মৃতিচারণ করলে এর শুরু এবং শেষ বিস্তীর্ণ এবং অসীম বর্ণনা রূপ নেবে। তবে প্রকৃত সত্যি এভাবেই উঠে আসুক স্বদেশের জনমনে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধির খোঁজে আমরা পরবাসী। আমাদের প্রেরিত অর্থ নিজ পরিবারের মাঝে হাসি ফোটে আর দেশের অর্থনীতির চাকা সচল এবং বেগবান হয়।

আমরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার জন্য যতই ঘাম ঝরাই না কেন আমাদের সুখের আর নিরাপত্তার যেন কোন বালাই নেই। যার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই বিমানবন্দরে হয়রানি, লাগেজ খুঁজে না পাওয়া, জমি নিয়ে প্রতারণার শিকারসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় প্রবাস থেকে দেশে গেলে। মন্ত্রী থেকে উচ্চ পদস্থ সকল কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন তবু যেন প্রতিকার নেই। এটাই আমাদের দীর্ঘ প্রবাস জীবনের সুখ। তবে কি এরকম সুখের আশায় প্রায় দেড়কোটি বাংলাদেশি দেশান্তরে।

বারো থেকে চৌদ্দ অথবা কোনো সময় ষোল ঘণ্টা কাজ করতে হয় প্রবাসে। সেই ঘাম ঝরানো অর্থ দেশে পাঠাই পরিবার এবং নিজে ভালো থাকার জন্য কারণে অকারণে ভাল থাকা হয়ে ওঠে না। আমরা ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৫৪ বছরে পদার্পণ করলেও একটু সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত হতে পারিনি। ঈদ আসলেই এই স্মৃতিগুলো বড্ড পীড়া দেয় মনে। এখনও আমাদের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পায়নি ফলে সমাজের আহামরি পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায় না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আরও যাবে কিন্তু নৈতিক সচেতনতা আরও অনেক বাড়াতে হবে তবেই উন্নয়নের সুফল ভোগ করা যাবে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

২/ দেশের ঈদে আনন্দ পাওয়া গেলেও বিদেশে তেমন নয়। দেশে সালামি পেলে যেভাবে আবেগে আপ্লুত হই তা কি করে বুঝাবো। বাবা মা, আত্মীয় পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দের যে জোয়ার তা প্রবল স্রোতকে হার মানায়। সকালে উঠে নামাজ, মিষ্টি মুখ করা সেমাই দিয়ে এরপর বিকেলে ঘুরতে যাওয়া এক পরিবার আরেক পরিবারে বেড়াতে এসে যে আনন্দটা ভাগাভাগি করা হয় তা কোটি টাকার চেয়ে কম নয়। ঈদের আগে চাঁদ রাতের কেনাকাটার যে অন্যান্য আনন্দ তা প্রবাসে কোন জনমই পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সুখ থাকে রেমিট্যান্সে এটাই আমাদের প্রবাসের আনন্দ। অন্যের মুখের হাসিতে আমরা প্রবাসীরা হাসি।

ঈদ আসবে ঈদ যাবে এর মাঝে সুখ দুঃখের কাহিনি আমরণ পর্যন্ত থেকে যাবে। প্রবাসের ঈদ আমার কাছে একেবারেই সাদামাটা যদি এক কথায় বলি ঈদ মানে ঈদ নয়। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি দেশে ঈদ করা হয় না শেষ ঈদ দেশে কবে করা হয়েছে তাও মনে নেই। তবে ঈদের সুখদুঃখ এখনও মনে বিরাজ করছে যা প্রায়ই মনে পড়ে আর বোবা কান্নায় বুক ফাটে সান্ত্বনা দেই ওরে মন প্রবাস তো এমনই।

কাছে থাকে না আত্মীয়, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব দেশের মতো একে অপরের বাসায় দাওয়াতের ধূম নেই যা ঈদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগায়। এটাও সত্য প্রবাসে হয়ে ওঠে না অনেক কিছু কর্মব্যস্ততার কারণে। কিন্তু কারো কোনো আন্তরিকতার কমতি নেই। নানা ব্যস্ততায় ক্রমশ আপন মানুষগুলো পর হয়ে যায়। এরই নাম প্রবাস।

বিজ্ঞাপন

আমরা যারা ইউরোপ-আমেরিকাসহ নন মুসলিম দেশে অভিবাসী তাদের বেশির ভাগ প্রবাসীদের প্রায় একই সমস্যা। ঈদের দিনও কাজ করতে হয়। আর আমাদের কাজগুলোর সময়সূচি ভোর থেকে শুরু হয়। অনেক সময় ঘুমের ঘাটতি নিয়েই আবার পরের দিন কর্মস্থলে যোগদান করতে হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর মানুষ তেমন জানে না ঈদ কি। তবে যতটা না ঈদকে জানে তার চেয়ে বেশি চেনে রমজানকে।

আমরা যারা রোজায় পানাহার বন্ধ রাখি এরকম দৃশ্য তাদের নজরে আসে ফলে প্রতি বছর রমজানের পূর্বে সহকর্মীরা জিজ্ঞেস করে কবে থেকে রোজা শুরু। এ ব্যাপারটা বেশ আনন্দ যোগায় যে আমাদের উত্তম একটি মাসের খবর তারা রাখেন। যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলোতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই যার ফলে ঈদের মত এসব উৎসবে সরকারি বা বেসরকারি কোন ছুটি থাকে না। কর্মস্থলের ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত ভাবে ছুটি নিতে হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানে আবার ছুটিও পাওয়া যায় না। আবার কেউ আবার কয়েক ঘণ্টার জন্য ছুটি নিয়ে ঈদের নামাজ শেষ করে ভোঁ-দৌড় দিতে হয় কর্মসংস্থানে যাওয়ার জন্য। এসব দেশে আরেকটি সমস্যা হল সরকারি প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট ছুটির দিন থাকলেও ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সপ্তাহের যেকোনো একদিন ছুটির দিন নির্ধারণ করে এর ফলে ঈদের দিনে একটা হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয় ছুটি নিয়ে।

গত বছর করোনার মধ্যে ঈদ উদযাপন করতে হয়েছে প্রবাস জীবনের সবচেয়ে সাদামাটা ঈদ কোনো রকম নামাজ আদায় করে যে যার যার মতো স্থান ত্যাগ করতে হয়েছে কারণ সরকারের কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়ার ফলে কেউ কারো সাথে আলিঙ্গন বা কুশল বিনিময় করতে পারেনি। স্বাভাবিক ঈদে যেখানে আনন্দ নেই জটিল পরিস্থিতিতে কি আর আনন্দ হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রবাসে দেশের মতো যে উৎসবমুখর পরিবেশ তা কোনো জনমেই পাওয়া যাবে না এমন চিরন্তন সত্য মেনে বাকি জীবন প্রবাসে কাটাতে হবে। এত কিছুর পরেও বলব নিরাপদ জীবন নিয়ে বেশ ভালো আছি। ভিনদেশেও কোন ভয় সংকোচ ছাড়া একটি নিশ্চিত নিরাপত্তায় জীবন কেটে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপে স্বাধীন ভোগবিলাস করা যায় যদিও মধ্যপ্রাচ্যে ঈদের আনন্দ আছে কিন্তু ব্যক্তি জীবনে কোনো স্বাধীনতা নেই। এদিক বিবেচনায় ইউরোপ প্রবাসীরা স্বাচ্ছন্দ্য এক জীবনে বসবাস করছে।

তার মধ্যে মরক্কোর চার লাখের বেশি মুসলিম এবং আলবানোর আট লাখেরও বেশি মুসলিমের বসবাস ইতালিতে। এত মুসলমানের বসবাস সত্ত্বেও আদৌও কোনো সমস্যা হচ্ছে না ধর্ম নিয়ে। এর মধ্যে রোমে অবস্থিত খ্রিস্টানদের তীর্থ স্থান বেটিকেন শহর। প্রবাসে ঈদ এভাবেই বর্ণনাময় হয়। ২০২৫ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতর দেশ বিদেশের সবার জন্য হোক আনন্দের।

ইতালিতে মিশ্রিত ধর্মীয় গোষ্ঠী খ্রিষ্টান, মুসলিম ক্যাথোলিক, বৌদ্ধ, হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বসবাস। আনন্দের বিষয়, ধর্মীয় বিষয়ে ইতালি সরকার কোনো সময় কোনো ধর্মকে নিন্দার চোখে দেখে না। বরং যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার সুযোগ দিয়েছে। তা না হলে ইতালিতে একাধিক মসজিদ, ধর্মাশালায় করার সুযোগ পেতেন না প্রবাসীরা।

বিজ্ঞাপন

ফোনদাজিওনে আইএসএমইউ,এর প্রতিবেদনে, ১ জুলাই ২০২৩ সালে দেখা গেছে, ইতালিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করছেন। বাংলাদেশি মুসলিমদের নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা জরিপে না আসলেও অন্যান্য দেশের সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।

তার মধ্যে মরক্কোর চার লাখের বেশি মুসলিম এং আলবানোর আট লাখেরও বেশি মুসলিমের বসবাস ইতালিতে। এত মুসলমানের বসবাস সত্ত্বেও আদৌও কোনো সমস্যা হচ্ছে না ধর্ম নিয়ে। এর মধ্যে রোমে অবস্থিত খ্রিস্টানদের তীর্থ স্থান বেটিকেন শহর। প্রবাসে ঈদ এভাবেই বর্ণনাময় হয়। ২০২৫ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতর দেশ বিদেশের সবার জন্য হোক আনন্দের।

লেখক, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com