নারীদের উদ্দেশে খোলা চিঠি

কেমন আছো তোমরা? দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় স্রোতে গা ভাসিয়ে? নাকি বেশ নিরাপদ দূরত্বে বাঁকা হয়ে বসে চেহারার ওপর, মনের ভেতর ফিল্টারের ওপর ফিলটার বসিয়ে? দুনিয়ার সব মরে মরুক গে, তোমার কি! তুমি পুতুল হয়ে থাকো, স্বনাম ধন্য কারো স্ত্রী বা প্রখ্যাত কারো মেয়ে অথবা ঘরে সাজিয়ে রাখা পুতলি হয়ে মুখময় রঙ আঁকো! জীবন তাতে বেশ রঙিন হয় বৈ কি। অবশ্য আর একটা কাজে অনেকে নারীই বেশ দক্ষ, তা হলো নিজের সময় খরচ করে সমাজে ইতিবাচক ভূমিকায় এগিয়ে যাওয়া অন্য নারীদের নিয়ে অহেতুক আলোচনা, সমালোচনা করে তাদের পথ থামিয়ে দেওয়ার বৃথা চেষ্টায় অতি ব্যস্ত! যেহেতু নারী তুমি নিজে কিছুই হতে পারোনি তাই অন্য নারীদের জীবনেও কিছু না হোক, ওরাও তোমার মতই হোক, এটাই তোমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য! এতেই তোমরা বিষম শান্তি পাও, মনের মাঝে এতই জ্বলুনি তোমাদের! কিন্তু এগিয়ে যাওয়া নারীরা যে তোমাদের গোনায় ধরে না বলেই এগিয়ে গেছে সেটা তোমাদের মগজে ধরে না।
আচ্ছা, কবে তোমরা নারীরা নিজেদের সৌন্দর্য ও কুটিলতা অন্যদিগের নিকট প্রদর্শন না করে বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ করবে? কবে তোমরা অন্য নারীর পিছে লেগে না থেকে আত্ম উন্নয়ন করবে? কেবল সেদিনই তোমার নারী জীবন সার্থক হবে নতুবা গুড়মুড়ি।
নারীগণ, পড়াশোনা করে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন নয়, পাশাপাশি স্বশিক্ষিত ও মানবিক হওয়ার চেষ্টা করো এবং সবার আগে নিজেকে সম্মান করতে শেখো, হ্যাঁ নিজেকে। এবং অবশ্যই আচরণ এ শালীনতা ও সীমারেখা বজায় রাখো তাহলেই না অন্যের কাছে সম্মান আশা করতে পারো। সম্মান কেউ কখনো তোমাদের দিয়ে যাবে না, সবার নিজ গুণেই সম্মান অর্জন করতে হয় সুতরাং এরে তারে দোষ দিয়ে কোনো মুনাফা নাই। পরিশ্রম, সদিচ্ছা এবং ভালো ব্যবহার এর কোনো শর্টকাট এখন পর্যন্ত নেই।
এসবের পাশাপাশি নিজের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অতি আবশ্যক একটি কাজ। নারী সকল,অনুগ্রহ করে সেদিকটায় মনোযোগী হও। আজ তুমি অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে কাল কেউই তোমাকে দেখবে না, সেটা মাথায় রাখো, নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত রাখো। দুনিয়ায় তোমার দোষ ধরার মানুষের কোনো অভাব হবে না কিন্তু দুর্দিনে খোঁজ খবর নেওয়ার মানুষ হ্যাজাক জ্বালিয়েও খুঁজে পাবে না।
আর শোনো, কানে কানে বলি... দু’একদিন পরপর কপাল -ঠোঁট- গাল রাঙিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছবি পোস্ট করে, গানের সাথে নিজের রিল বানিয়ে শেয়ার করে আর যাই হোক সম্মান বা গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায় না তবে নিজেকে খুব সহজেই সস্তা করে ফেলা যায়। এখন জীবন তোমার, পছন্দ তোমার, এসব করে যদি তুমি শান্তি পাও তাহলে আমার কিছুই বলার নেই। মনের শান্তি বড় শান্তি, যে যেভাবে পায়!
হে মা জননী সকল, নিজ সন্তান নিশ্চয়ই আপনার নিকট বাড়তি নয়, বোঝা নয়, তাহলে সন্তানদের নিরাপত্তা দিন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। দয়া করে নিজের সন্তানকে এর ওর বাসায় বা যেখানে সেখানে একা বা অমুক তমুকের সাথে পাঠাবেন না। যে দেশে ৮ বছরের শিশু থেকে ৮০ বছর এর বৃদ্ধার কোনো নিরাপত্তা নেই সেই দেশে মা হিসেবে আপনাদের চরম উদাসীনতা বা পরম নির্বুদ্ধিতা আর নেওয়া যাচ্ছে না। আপনারা কি চারপাশের খবরাখবর থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন? এ ধরনের খবর শুনতে শুনতে আমরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আপনারা কেনো মেয়ের শ্বশুরবাড়ি, পাতানো ভাইবোন, না জানা বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশীসহ আত্মীয় এর বাসায় সন্তানদের একা যেতে দেন? কেন?? মা হিসেবে সন্তানের দেখভাল করা, নিরাপত্তা আপনার দায়িত্ব।
কোনো কিছু না বোঝাটা দোষের নয়, দুনিয়ার সবাই সবকিছু বুঝবে না সেটাই স্বাভাবিক। এই যেমন আমিও কিছুতেই বুঝি না আপনারা সারা বছর ধরে অন্য নারীদের নিয়ে কুৎসা রটিয়ে নারী দিবসে পুরুষদের ফাঁপর দেন কেন? তাদের সুযোগ তো আপনারাই দেন! এগুলো বাদ দিয়ে অন্য নারীদের এগিয়ে যেতে বাহবা দেন, সন্তানকে সুশিক্ষা দিতে গেলেও নিজের শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। জীবনের বাস্তবতায় পড়াশোনা থেমে গেলে সময় সুযোগ মতো আবার শুরু করুন, জীবনে শেখার কোনো বয়স নেই। নিজের জীবনের, পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে নিজেকে শক্তিশালী করুন।
আর একটি কথা, দয়া করে অনুমান করে অন্যের নামে কথা প্রচার থেকে বিরত থাকুন। ঠিকঠাক না জেনে, না বুঝে কারো নাম এ উলটো পালটা প্রচার ভয়ংকর দোষনীয় এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। সুতরাং কথা যত কম বলবে বিপদ এ তত কম পড়বে, আর আপদ তখন থাকবে না বললেই চলে।
জগতের সকল নারীর বুদ্ধিমত্তা জাগ্রত হোক। নারীরা পরগাছা, পরজীবী না হয়ে বটবৃক্ষ হয়ে উঠুক। নিজ পরিবারের কাছে, অপরিহার্য মানুষ হিসেবে গ্রহণ যোগ্যতা পাক, মানবী জীবন পূর্ণ ও অর্থবহ হোক, এটাই আমার নারী দিবস এর চাওয়া।
তোমার পরিবারের কাছে নারী হিসেবে তুমি নারী দি ‘বস’ নাকি বস্তা, এই সিদ্ধান্ত নারী তোমার, অন্যদের নয়।
বুঝলে পান পাতা, না বুঝলে আগাছা’র পাতা।
নারী দিবসে নারীদের উদ্দেশে খোলা চিঠি
এমআরএম/জিকেএস