আবারও বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীর তালিকায় প্রবাসী অধ্যাপক সাইদুর রহমান
অসাধারণ গবেষণাকর্মের জন্য আবারও বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের তালিকায় স্থান পেলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি অধ্যাপক সাইদুর রহমান। ২০২৪ সালের স্কলারজিপিএস অনুসারে সানওয়ে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাইদুর রহমান সাসটেনেবল (Sustainable) এনার্জি বিষয়ক গবেষণায় কৃতিত্বের জন্য বিশ্বের বিজ্ঞানীদের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।
সম্প্রতি স্কলারজিপিএস বিশ্বের ৪৫ জন বিজ্ঞানীর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। যার মধ্যে প্রথমেই রয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি এই অধ্যাপক। একই বছরে স্ট্যানফোর্ড/এলসেভিয়ারের বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীর তালিকায় মালয়েশিয়ার বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এনার্জি বিষয়ক গবেষণাক্ষেত্রে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসেভিয়ার’-এর সমন্বিত জরিপে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের প্রকাশনা, এইচ-ইনডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচক বিশ্লেষণ করে তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়।
গুগল স্কলারের বিশ্লেষণ অনুসারে তার এইচ-ইনডেক্স ১৩৮ এবং ৭৫ হাজারেরও বেশি সাইটেশন রয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলার কৃতি সন্তান সাইদুর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন।
২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাইদুর রহমান ক্ল্যারিভেট অ্যানালাইটিক্স (Clarivate Analytics) কর্তৃক প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বসেরা ১ শতাংশ গবেষকের একজন ছিলেন। তার গবেষণা মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়েও স্বীকৃতি পেয়েছে।
আরও পড়ুন
- মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে পাসপোর্ট সেবাদানের উদ্যোগ হাইকমিশনের
আসিয়ানের সদস্য পদে বাংলাদেশকে সমর্থন মালয়েশিয়ার
তিনি ২০২৪ সালে ‘এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স’ প্রকাশিত তালিকায় মালয়েশিয়ার বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রথম স্থানে আছেন। তিনি রিসার্চ ডটকম এবং স্কলার জিপিএসের গবেষণা বিশ্লেষণেও এক নম্বর গবেষক হিসাবে তালিকাভুক্ত আছেন।
২০১১-২০১৪ সালে ইউনিভার্সিটি মালয়া এবং মালয়েশিয়ার প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অসামান্য গবেষণা (citation impact) অবদানের জন্য সম্মানিত করেছিল। সাইদুর রহমান গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য ২০২৪ এবং ২০১৯ সালে মালয়েশিয়ার সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণায় পুরস্কারও পেয়েছেন। তার অসামান্য গবেষণা দক্ষতার জন্য সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিসটিংগুইশড রিসার্চ প্রফেসর (Distinguished Research Professor) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে যা শুধুমাত্র শীর্ষ গবেষকদেরকে দেওয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ পদ।
তিনি মালয়েশিয়ায় এমজিন (MXene) ভিত্তিক ন্যানোম্যাটেরিয়াল গবেষণায় স্কোপাস ডেটা বিশ্লেষণে এক নম্বরে আছেন। ওয়েব অব সায়েন্স ন্যানোফ্লুইড গবেষণায়ও তিনি বিশ্বের গবেষকদের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
তার অসামান্য সাফল্যে মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা আনন্দিত। তারা বলছেন, অধ্যাপক সাইদুর রহমান বিদেশের মাটিতে নিজগুণে দেশকে পরিচিত করছেন। তিনি আমাদের গর্ব।
তরুণ গবেষকদের অনুপ্রাণিত করতে সাইদুর তার গবেষণার অভিজ্ঞতা বৈজ্ঞানিক কমিউনিটির সঙ্গে শেয়ার করার জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। তার গবেষণার টিপস বৈজ্ঞানিক কমিউনিটির মধ্যে শেয়ার করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও (লিঙ্কডইন এবং ফেসবুক) অবদান রাখছেন।
সাইদুর রহমান ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি খরচ করে সানওয়ে ইউনিভার্সিটিতে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংবলিত চিত্তাকর্ষক ল্যাব তৈরি করেছেন। এই ল্যাবটি অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল ডেভেলপমেন্ট এবং এনার্জি, হিট ট্রান্সফার, সোলার এনার্জি, এনার্জি স্টোরেজ ও ক্লিন ওয়াটার ডেভেলপমেন্টে ব্যবহার করা হয়।
অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়াস্থ অগ্রণী হাউসের মাধ্যমে দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার সিআইপি সম্মাননা প্রদান করে।
অধ্যাপক সাইদুর বিজ্ঞানীদের সুবিধার জন্য অনলাইন সেমিনার এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে তার ২৫ বছরের গবেষণার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন। এছাড়াও অসহায় ও দরিদ্র তরুণ ও প্রতিভাবানদের সহযোগিতা করে থাকেন এই বরেণ্য বিজ্ঞানী।
অধ্যাপক সাইদুর ভবিষ্যতে সামাজিক ক্ষেত্রে আরও অবদান রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সঠিক গবেষণা কৌশল, ছাড়াও গবেষণা সংস্থা ও তহবিল সংস্থার সমর্থন পেলেই গবেষকরা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেন। গবেষক ও শিক্ষাবিদদের অত্যাধুনিক গবেষণার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জিং সব গবেষণার ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে তত্ত্বাবধান করতে হবে।
সাইদুর রহমান বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে দেশের খ্যাতি ও সুনামকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য দেশকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে। এই ব্র্যান্ডিংয়ের মানে হচ্ছে দেশের আলোকিত দিকগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। ব্র্যান্ডিংয়ের সুফল হচ্ছে, দেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে দেশের জনশক্তি, পর্যটন, দেশে তৈরি পণ্য, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সেবাও মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে।
সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, দেশ ও প্রবাসের বাসিন্দা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটিরও বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। যারা দেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে কাজ করতে পারেন। বিশ্ব জনশক্তির বাজারে শুধু শ্রমিক রপ্তানির কথা না ভেবে দক্ষ জনশক্তি পাঠানোর উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের ইমেজ বদলে যাবে।
এএমএ/এএসএম