সর্বনাশ হতে চলেছে

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৯ পিএম, ১৫ জুলাই ২০২৪

অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

অনেক মজা হবে। আর আমাকে না নিয়ে পারবেই না। আমি তো তাদের দুজনের কাছে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। বাবা একটা বই নিয়ে নিবিষ্টভাবে কি যেন পড়ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বাবা বললেন,
‘ও। তা কবে বিয়ে?’
‘এ মাসের শেষ শুক্রবারে। ২৮ তারিখে।’
‘তার মানে তো খুবই শীঘ্রই। আর মাত্র ১০ দিন বাদেই বিয়ে। তা কোথায় বিয়ে ঠিক হলো?’
‘ফরিদপুরের কি একটা জায়গায়।’

বলেই মা কোনো প্রশ্নের জন্য আর তর সইতে না পেরে বড়বড় করে পূর্ণ বৃত্তান্ত বলা শুরু করলো।
মা বললো, ‘ছেলেটা নাকি দেখতে বেশ ভালো। শিক্ষিত ও সরকারি চাকরি করে। বেতন মোটামুটি ভালো। তবে অনেক উপরী আছে।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বলেই বেশ গদগদ হয়ে পড়লো। বুঝলাম বেতনের চেয়ে উপরীটাই মায়ের বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উপরীটা যে কি জিনিস তা বুঝলাম না যদিও। আমার মাথায় তখন কিছুই ধরছে না। পড়াশোনার বইয়ের কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। বুঝতে বাকি রইল না যে, ঈশরাত আপুর সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে, সে মোটেই লোকমান ভাই নয়। অন্য কেউ। বিশাল সর্বনাশ হতে চলেছে।

ঈশরাত আপুর ফরিদপুর নামে দূরে কোথাও বিয়ে হচ্ছে। ঈশরাত আপুর সাথে আর বসে বসে গল্প শোনা যাবে না। লোকমান ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলেও মাঝে মধ্যেই গিয়ে হাজির হওয়া যেত। গল্প শোনা যেত, অরিগামী শেখা যেত। তাছাড়া দানাদার, কদমার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হয়ে যেত। সব ভণ্ডুল হবে। খুব খারাপ হবে।

বাবা জিজ্ঞেস করলেন,
‘তো, পাত্র কি চাকরি করে?’
মা বললো,
‘কানুর গু।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বাবা অবাক হয়ে, একটু স্পষ্টভাবে, আগের চেয়ে একটু উঁচু স্বরে আবার জিজ্ঞেস করলেন,
‘কি চাকরি?
‘কানুর গু। তাই শুনলাম।’
‘কানুর গু?’

আগের পর্ব পড়ুন এখানে

বলেই, বাবা হো হো করে হেসে উঠলেন। হাসির তোড়ে তার হাত থেকে বইটা ফ্লোরে পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলাম। বাবা হাসলে এ রকম করেন। উচ্ছ্বসিত হাসি হাসেন। একদম নির্ভেজাল সে হাসি। হাসছেন তো হাসছেনই, আর চেয়ারের হাতল চাপড়াচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

কোনোভাবেই হাসি ঠেকাতে পারছেন না। তাই চেয়ারের হাতল চাপড়িয়ে নিজেকে প্রশমিত করার চেষ্টা করছেন। আমরা সবাই হা করে চুপ করে বসে আছি। এর মধ্যে মা যেন কি বলেছিল। কিন্তু বাবার হাসির তোড়ে তা আর আমি শুনতেই পাইনি।

আমারও একটু খট্কা লাগলো। মা কানুর কথা বলছে কেন? আমাদের ও পাড়ায় কানুগোপাল নামে একজন লোক আছে। খুব খচ্চর আর কেউটে ধরনের লোক। মাঝে মাঝেই বাচ্চাদের অযথা ভয় দেখায়। একদিন আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছি।

হঠাৎ করে নিঃশব্দে সাইকেল নিয়ে, বলা নেই কওয়া নেই আমার কাছাকাছি পেছনে এসেই ঘেউ ঘেউ করে একদম কুকুরের মতো ডাক দিয়ে ফুস্ করে বেরিয়ে গেলো। আজব। আর একটু হলেই আমি ভয় পেয়ে, রাস্তার পাশে পড়ে যেতাম কুকুরের ভয়ে। সবাই কানুগোপালকে সংক্ষেপে ‘কানু’ বলে ডাকে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু কানুর মতো একটা খচ্চর লোকের গু পরিষ্কার করতে কোনো সরকারি লোকের কেন দরকার হবে? তাও আবার ফরিদপুরের লোক। কে জানে? ওই কানু হয়তো যেখানে সেখানে রাস্তাঘাটে পায়খানা করে রাখে। বাবার হাসি থামলে তারপর বললেন,
‘আরে কানুর গু না। কানুন গো।’

এমআরএম/জেআইএম

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - jagofeature@gmail.com