এজন্যই তোমার সঙ্গে গল্প করে খুব মজা পাই

প্রবাস ডেস্ক
প্রবাস ডেস্ক প্রবাস ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ০২ জুন ২০২৪

অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

‘ভয় নেই রে দীপ্ত! সবাই শান্ত হয়েছে। আব্বা বাজারে গেছে। আর আম্মা ওই বাড়ির কাকির সঙ্গে গল্প করতে গেছে।’

বলেই তার কাগজ কাটায় মনোনিবেশ করলো। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এগুলো কী করছো?’

ঈশরাত আপু বললো, ‘এটা আমার কলেজের পড়াশোনার ব্যবহারিক কাজ। একে বলে প্রজেক্ট। ড্রয়িং করার মতো, এটা সুন্দর করে বানিয়ে প্রফেসর স্যারের কাছে জমা দিতে হয়।’

ঠিক বুঝলাম না। বললাম, ‘পরীক্ষার খাতা জমা দেওয়ার মতো?’ ‘হ্যাঁ, সে রকম। যার প্রজেক্ট বেশি সুন্দর হবে, সে বেশি নম্বর পাবে।’

‘পরীক্ষার খাতা জমা দিলে আমার স্যারেরা খাতার ওপর লাল কালি দিয়ে বড় বড় করে টিক চিহ্ন দেয় বা নম্বর লিখে দেয়। এগুলোর নম্বর কোথায় দেয়? ওই কাঁটা কাগজের ওপর কোথাও টুক করে লিখে দেবে?’

‘তুই তো ভারি চিন্তাবিদ! এজন্যেই তো তোর সাথে গল্প করে আমি খুব মজা পাই। আমার স্যারেরা ক্লাসের সবার নামের যে লিস্ট আছে তার মাঝে আমার নামের পাশে একটি নম্বর বসিয়ে দেয়।’ ‘তুমি জানবে কীভাবে তোমার নম্বর কত?’

আরও পড়ুন:

‘সেই কাগজের লিস্টটা সামনের বেঞ্চের কোনায় বসা প্রথমজনকে গলিয়ে দেয়। প্রথম জন তার নাম খুঁজে নম্বর দেখে টুকে নেয়। তারপর সে দ্বিতীয় জনকে কাগজটা দেয়। তারপর তৃতীয় জনকে। এমনিভাবে ক্লাসের শেষ বেঞ্চী অবধি সে কাগজ চলে যায়।’

মনোযোগ দিয়ে শুনে বিষয়টা অনেক ভালো লাগলো বটে।

কিন্তু মনের মধ্যে একটা খচ্ খচ্ অশান্তি বয়ে যাচ্ছিল আমার। বললাম, ‘এ তো বেশ সময়ের ব্যাপার। ক্লাসের প্রথম বেঞ্চ থেকে শেষ বেঞ্চ পর্যন্ত যেতেই তো ক্লাসের সময় অনেকটাই পার হয়ে যাবে।’

হেসে ঈশরাত আপু বলেছিল, ‘তুই বড় হলে বুদ্ধিজীবী হবি, বুঝলি?’
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘বুদ্ধিজীবী কি? তারা কিসের অফিসার? জানি তুমি অনেক পড়ে অফিসার হবে, বড় মাইনে পাবে। কিন্তু বুদ্ধিজীবীরা কোথায় চাকরি করে?’

‘বুদ্ধিজীবীরা হলো বুদ্ধির ভান্ডার। ওরা বুদ্ধি বেঁচে খায়।’ আমি কিছু না বুঝেই ঈশরাত আপুর প্রজেক্ট বানানো আর তার কাজের একাগ্রতার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম, বড় হয়ে আমিও প্রজেক্ট করব। ঈশরাত আপুর মতো এ রকম কাগজ কেটে সুন্দর ডিজাইন বানাবো। আমিও অফিসার হবো, বুদ্ধিজীবী অফিসার।

একটা সময় ঈশরাত আপুর প্রজেক্ট করা শেষ হলো। সুন্দর একটা ডিজাইন। ঈশরাত আপু ডিজাইনটি হাতের ওপরে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমাকে আদ্যোপান্ত বর্ণনা করলো। কিছু বুঝলাম, বেশিরভাগই বুঝলাম না। তারপর ওটা ধরে ঘরে রাখতে গেলো। ঘরে রেখে হাতের ওপর একটা কাগজে করে কয়েকটা চিনির গজা এনে হাসিমুখে আমার হাতে দিলো।

গজা আমার খুব পছন্দ। আমি ঈশরাত আপুর শিষ্য হয়ে গেলাম। গজা খেতে খেতে তারপর আমরা এই গল্প, সেই গল্প, এ কথা-সে কথা কত কি বললাম, শুনলাম। কথার ফাঁকে ঈশরাত আপু আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘হ্যাঁরে দীপ্ত, তুই কি গোপন কথা গোপন রাখতে পারিস?’

আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘বারে, গোপন কথা তো গোপনই। তার আর রাখা বা ফেলার কি আছে?’
ঈশরাত আপু উৎসাহের সাথে বললো...

চলবে...

এমআরএম/এমএস

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা - [email protected]